বিশ্বের সেরা ১০ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান

বিশ্বজুড়ে অনলাইনে কেনাকাটা এখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। এই খাতে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রভাবও বাড়ছে হু হু করে। জার্মানিভিত্তিক বাজার গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিস্টা ডটকম গত মার্চে বাজার মূলধনের ভিত্তিতে বিশ্বের সেরা ১০ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকায় শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অ্যামাজন। তবে আলিবাবা, পিনডুওডুও ও জিংডং মলের মতো একাধিক চীনা প্রতিষ্ঠানও এ তালিকায় আছে। পাঠকের জন্য এসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো:

অ্যামাজন

অ্যামাজনের লোগো
ফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনপ্রিয় ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনের বাজার মূলধন ২ হাজার ১৩১ বিলিয়ন ডলার। ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠান বই, বৈদ্যুতিকসামগ্রী, পোশাকসহ নানা পণ্য বিক্রি করে। কোম্পানির সবচেয়ে বড় বাজার উত্তর আমেরিকা। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও তাদের ব্যবসা রয়েছে।

অ্যামাজনের বিক্রির ৬২ শতাংশ পণ্য তৃতীয় পক্ষের বিক্রেতাদের মাধ্যমে হয়, যারা স্বাধীনভাবে তাদের পণ্য নিজেদের প্ল্যাটফর্মে বিক্রি করে থাকে। বর্তমানে অ্যামাজনের কার্যক্রম ২২টি দেশে বিস্তৃত।

আলিবাবা

আলিবাবার লোগো

চীনের ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবার বাজার মূলধন ৩১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আলিবাবা প্রধানত পাইকারি ও খুচরা অনলাইন ব্যবসা পরিচালনা করে। তাদের প্ল্যাটফর্মে ইলেকট্রনিকস, পোশাক, কৃষিজাত, গৃহস্থালিসহ নানা ধরনের পণ্য বিক্রি হয়।

আলিবাবার ব্যবসা মূলত চীন ও এশিয়ার অন্যান্য দেশে বিস্তৃত। তবে তাদের কার্যক্রম প্রায় ২০০টির বেশি দেশে ছড়িয়ে আছে। বৃহৎ পাইকারি বাজার, চমৎকার ডিজিটাল পেমেন্ট ও ক্লাউড কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠানটিকে গ্রাহকের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে।

পিনডুওডুও  

পিনডুওডুওর লোগো।

শীর্ষ ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকায় তৃতীয় পিনডুওডুও। এর বাজার মূলধন ১৭০ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটি অল্প সময়ে চীনে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটি মূলত ‘গ্রুপ বায়িং’ বা দলবদ্ধভাবে পণ্য কেনার ধারণাকে জনপ্রিয় করেছে। ব্যবহারকারীরা বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে দল গঠন করে পণ্য কিনলে মূল্য কমে যায়, যা গ্রামীণ ও স্বল্প আয়ের ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করেছে।
পিনডুওডুওর প্রধান পণ্য হলো কৃষিপণ্য, গৃহস্থালিসামগ্রী, পোশাক ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। প্রতিষ্ঠানটি মূলত চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারে সক্রিয়। আন্তর্জাতিক বাজারে এখনো এর বিস্তার ঘটেনি।

শপিফাই

শপিফাইয়ের লোগো

শপিফাই কানাডাভিত্তিক একটি বহুজাতিক ই–কমার্স কোম্পানি। এটি ২০০৬ সালে অটোয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য ক্লাউডভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করে, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা সহজেই অনলাইন স্টোর তৈরি, পণ্য বিক্রি, পেমেন্ট গ্রহণ ও মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন।

শপিফাইয়ের বাজার মূলধন প্রায় ১৩৪ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার। শপিফাই বর্তমানে বিশ্বের ১৭৫টির বেশি দেশে সক্রিয়। ২০২৪ সালের হিসাবে, তাদের প্ল্যাটফর্মে ৫৬ লাখের বেশি অনলাইন স্টোর রয়েছে।

মেইতুয়ান

মেইতুয়ানের লোগো

মেইতুয়ান চীনের একটি শীর্ষস্থানীয় ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান। এটি খাদ্য সরবরাহ, হোটেল বুকিং, ভ্রমণ, বিনোদন ও অন্যান্য পরিষেবা দেয়। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানির সদর দপ্তর বেইজিংয়ে অবস্থিত। মেইতুয়ানের বাজার মূলধন প্রায় ১২৭ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার। মেইতুয়ান প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। তারা ড্রোন ও স্বয়ংক্রিয় যানবাহনের মাধ্যমে খাদ্য সরবরাহ পরিষেবা চালু করেছে। মেইতুয়ান আন্তর্জাতিক বাজারেও তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করছে। তাদের কিটা নামের পরিষেবা সৌদি আরবের প্রধান শহরগুলোতে চালু হয়েছে।

মার্কাডোলিবরে

মার্কাডোলিবরের লোগো

মার্কাডোলিবরে লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম ই-কমার্স ও ফিনটেক কোম্পানি। ১৯৯৯ সালে এটি আর্জেন্টিনায় প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ১৮টি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করে এটি; যার মধ্যে রয়েছে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, মেক্সিকো, চিলি, কলম্বিয়া, পেরু, উরুগুয়ে ও ভেনেজুয়েলা।

মার্কাডোলিবরের বাজার মূলধন ১০৫ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। অনলাইনে পণ্য বিক্রির পাশাপাশি এটি ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা ও নিজস্ব লজিস্টিকস পরিচালনা করে।

সি লিমিটেড

সি লিমিটেডের লোগো

সিঙ্গাপুরভিত্তিক ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান সি লিমিটেডের বাজার মূলধন ৭৪ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার। ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠান মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ই–কমার্স প্ল্যাটফর্ম ‘শপি’, গেমিং প্ল্যাটফর্ম ‘গারেনা’ ও ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম ‘সিমানি’ পরিচালনা করে।

শপির মাধ্যমে সি লিমিটেড ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশে ই–কমার্সে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাইরে ব্রাজিলেও বিস্তৃত।

জিংডং মল

চীনের অন্যতম বৃহৎ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান জিংডং মলের বাজার মূলধন ৬৪ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত জিংডংয়ের প্রধান পণ্য ইলেকট্রনিকস, গৃহস্থালি পণ্য ও ফ্যাশন পণ্য। উন্নত ও দ্রুত লজিস্টিকস নেটওয়ার্কের কারণে প্রতিষ্ঠানটি অতি দ্রুত গ্রাহকের কাছে পণ্য সরবরাহ করতে পারে।
জিংডং চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু দেশে বেশি সক্রিয়।

কোপার্ট

কোপার্ট একটি বিশেষায়িত ই–কমার্স প্ল্যাটফর্ম। এটি মূলত ব্যবহৃত গাড়ি ও গাড়ির যন্ত্রাংশের অনলাইন নিলাম পরিচালনা করে। ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানের বাজার মূলধন ৫৩ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার।

কোপার্ট যুক্তরাষ্ট্রসহ ৩০টির বেশি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করে। বিস্তৃত নেটওয়ার্ক ও স্বচ্ছ অনলাইন নিলামের কারণে এটি ক্রেতা ও বিক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয়।

কুপ্যাং

দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষস্থানীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কুপ্যাং ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি মূলত দ্রুত সরবরাহসেবা, যেমন ‘রকেট ডেলিভারি’ ও সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক ‘রকেট ওয়াও’ পরিষেবার জন্য পরিচিত। এ ছাড়া কুপ্যাং ফ্রেশ, কুপ্যাং ইটস ও কুপ্যাং প্লের মতো প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে খাদ্য ও বিনোদনসেবা দেয়।

কুপ্যাংয়ের বাজার মূলধন ৪২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে সদর দপ্তর হলেও প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম মূলত দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানে বিস্তৃত। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালে বিলাসবহুল ফ্যাশন প্ল্যাটফর্ম ‘ফারফেচ’ অধিগ্রহণ করে।