যে দ্বীপের মাটিতে ঘুমিয়ে ঠিকানাবিহীন মানুষ
নিউইয়র্কের হার্ট আইল্যান্ড যেন মৃত্যুপুরী। সেখানে ১০ লাখেরও বেশি মানুষের সমাধি। আছে গণকবর। এইডস ও যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে যাঁরা মারা গেছেন, তাঁদের সমাধি রয়েছে এখানে। আছে হতদরিদ্র, নাম–পরিচয়হীন মানুষের সমাধি। কারাবন্দীদের সমাধিও রয়েছে। বেওয়ারিশ মানুষ ও অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেওয়া শিশুর শেষ আশ্রয় জুটেছে সেখানে।
এএফপির খবরে জানা যায়, হার্ট আইল্যান্ড মৃত মানুষকে সমাহিত করার বিশেষ একটি স্থান। সাধারণ সমাধিস্থলে যাঁদের ঠাঁই মেলে না, এখানে তাঁদের শেষ আশ্রয়।
নিউইয়র্কের হার্ট আইল্যান্ডের সমাধিস্থলটি ১৫০ বছরের পুরোনো। এটি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় সমাধিস্থল। একে বলা হয় মৃতদের দ্বীপ। পরিচিত মৃতদের কারাগার নামেও। কারা বিভাগ পরিচালনা করে এই সমাধিস্থল। এখানে প্রবেশ খুবই সংরক্ষিত ছিল। তবে এখন এটি সহজ হচ্ছে।
মাসে মাত্র নির্দিষ্ট দুটি দিনে মৃতের স্বজনেরা ওই সমাধিস্থলে যেতে পারেন। বছরে মাত্র একবার সেখানে গণমাধ্যমের প্রবেশাধিকার রয়েছে।
৬৫ বছরের ইলায়েন জোসেফ বলেন, আমি যখন ইচ্ছা তখন আমার সন্তানের সমাধিস্থলে যেতে চাই। আমি চাই না এতে কোনো নিয়ম বা বিধিনিষেধ থাকুক। ইলায়েনের মেয়ে টোমিকা ১৯৭৮ সালের জানুয়ারি মাসে মারা যায়। তখন তার বয়স মাত্র কয়েক দিন। অপরিণত অবস্থায় জন্ম নিয়েছিল টোমিকা। জোসেফ ২০১৪ সাল পর্যন্ত বিধিনিষেধের কারণে টোমিকার সমাধিস্থলে যেতে পারেননি।
গত বুধবার হার্ট আইল্যান্ডের মেয়র বিল দ্য ব্লাসিও দ্বীপটি সবার জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনায় সই করেছেন।
১৮৬৯ সালে এক ব্যক্তির কাছ থেকে হার্ট আইল্যান্ডের সমাধিস্থলের জমি কিনে নেওয়া হয়। প্রতিবছর প্রায় ১ হাজার ২০০ জনকে সমাহিত করা হয় এখানে। কফিনের বাক্সগুলো নাম নয়, নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করা হয়।
নিকটবর্তী রিকারস আইল্যান্ডে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম কুখ্যাত কারাগার। এখানকার বন্দীদের হার্ট আইল্যান্ডের সমাধিস্থলে সমাহিত করা হয়। এখানে সমাধিস্থদের মধ্যে অনেকেই শিশু।
১৯৮০ সালে এইডস রোগের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে এ রোগে মারা যাওয়া অনেককে এই সমাধিস্থলে আলাদা জায়গায় সমাহিত করা হয়। এইডস রোগে মারা যাওয়া অনেককে পারিবারিক বা সাধারণ জায়গায় সমাধিস্থ করা হয় না। এতে সংক্রমণের ভয় থাকে। এ কারণে আক্রান্ত অনেককে আলাদা জায়গায় সমাধিস্থ করা হয়। এখানে সমাহিত ব্যক্তিদের মধ্যে চীনা, নাইজেরীয় ও নেপালি নাগরিক রয়েছেন।