Thank you for trying Sticky AMP!!

১১ সেপ্টেম্বরের আগেই আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার

আড়াই হাজারের কিছু বেশি মার্কিন সেনা এখনো আফগানিস্তানে রয়েছেন

আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের আগেই আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ-সংক্রান্ত ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল। এ হামলার জের ধরে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে আফগানিস্তানে সামরিক অভিযানে যায় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলা ‘নাইন–ইলেভেন’ নামে পরিচিত। এ ঘটনার ২০ বছর পূর্তির আগেই আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

যুক্তরাষ্ট্রে নাইন–ইলেভেনে হামলা চালায় আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা। আর আফগানিস্তানের তৎকালীন তালেবান সরকার আল-কায়েদাকে মদদ দিয়েছিল। এর জের ধরেই তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই অভিযানে যোগ দেয় তার পশ্চিমা মিত্ররা। অভিযানে আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের পতন হয়। তবে দেশটিতে তালেবান ও আল-কায়েদা নির্মূল হয়নি। মার্কিন সেনারাও আফগানিস্তান ছাড়তে পারেননি। আফগানিস্তানে যুদ্ধ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ২ হাজার ৩০০ জনের বেশি সেনা নিহত হয়েছেন। ২০ হাজারের বেশি সেনাসদস্য আহত হয়েছেন।

আমেরিকার সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ আফগানিস্তান থেকে অন্যত্রও বিস্তৃত হয়। তবে শুধু আফগানিস্তানেই যুদ্ধ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয় হয়েছে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার। প্রাণহানি, বিপুল ব্যয়—এসবে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ জনগণ ক্ষুব্ধ। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজপথে যুদ্ধবিরোধী মিছিল-সমাবেশ পর্যন্ত হয়েছে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি উঠতে দেখা গেছে।

আফগানিস্তানে অবস্থানরত মার্কিন সেনা ইতিমধ্যে কমিয়ে আনা হয়েছে। আড়াই হাজারের কিছু বেশি মার্কিন সেনা এখনো আফগানিস্তানে রয়েছেন। তাঁরা আফগান সরকারকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য কার্যত কাজ করছেন।

আফগান যুদ্ধ পুরোপুরি গুটিয়ে আনার জন্য তালেবানের সঙ্গে গোপন সমঝোতা করছে যুক্তরাষ্ট্র। সমঝোতা অনুযায়ী, সব মার্কিন সেনা আফগানিস্তান ত্যাগ করবে। আর তালেবান আবার দেশটি রাজনীতিতে ফিরবে। এ সমঝোতার বিষয়টি প্রকাশ্য নয়।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় থেকেই আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের জন্য চাপ ছিল। ব্যয়বহুল এ যুদ্ধ চালানো ও আফগানে মার্কিন সেনা উপস্থিতির আর কোনো কারণ নেই বলে অনেকে মনে করেন। যদিও অপর একটি পক্ষের মতে, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হলে তালেবান আবার জেগে উঠবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।

বারবার সময়সূচি নির্ধারণ করেও সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় সব মার্কিন সেনা আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করা সম্ভব হয়নি।

মার্কিন সামরিক বিশেষজ্ঞরা মত দেন যে সময়সীমা নির্ধারণ করে নয়, পরিস্থিতি বিবেচনা করেই আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা উচিত।

জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের আগেই বলেছিলেন, আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা দ্রুততার সঙ্গে প্রত্যাহার করা হবে। প্রথমে মে মাসের মধ্যে সেনা প্রত্যাহারের কথা ছিল। কিন্তু ক্ষমতা নেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, মে মাসের মধ্যেই আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। পরিকল্পিত পদক্ষেপের মাধ্যমে সব সেনা প্রত্যাহার করা হবে।

ওয়াশিংটন পোস্টসহ অন্যান্য মার্কিন সংবাদমাধ্যম গতকাল মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে জানায়, নাইন–ইলেভেনের ঘটনার ২০ বছর পূর্তির আগে, অর্থাৎ আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের আগেই আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হবে।

বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো বলেছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন স্থানীয় সময় ১৪ এপ্রিল এ–সংক্রান্ত একটি ঘোষণা দিতে পারেন।

সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তান পরিস্থিত যাতে অস্থির না হয়ে ওঠে, সে জন্য গোপনে কাজ করছে বাইডেন প্রশাসন। তুরস্কের সহযোগিতায় তালেবানদের সঙ্গে আফগান সরকারের একটি সমঝোতা করার চেষ্টা চলছে। সব ঠিক থাকলে আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের আগেই শেষ মার্কিন সেনা আফগানিস্তানের মাটি ছেড়ে আসবেন। তার মধ্য দিয়ে আমেরিকার ইতিহাসের একটি দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাইডেনের আফগানিস্তানসংক্রান্ত ঘোষণা আসার আগেই অবশ্য বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে। যুদ্ধবিরোধী উদারনৈতিক লোকজন বাইডেনের এমন সিদ্ধান্তের প্রশংসা করছেন।

ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান রো খান্না এক বিবৃতিতে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন এক অসম সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন। রক্তক্ষয়ী ও ব্যয়বহুল এই প্রলম্বিত যুদ্ধের মাঠ থেকে সব মার্কিন সেনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার সম্ভাব্য সিদ্ধান্তের জন্য তিনি প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে অভিনন্দন জানান।

অন্যদিকে, রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম দ্রুততার সঙ্গে এক বিবৃতি দিয়ে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিরোধিতা করেছেন। সিনেটর গ্রাহাম বলেছেন, নাইন–ইলেভেনের ঘটনার পর মার্কিন জনগণকে আর কোনো সন্ত্রাসী হামলার হাত থেকে রক্ষার প্রয়াস এ সিদ্ধান্তে ব্যাহত হবে। জঙ্গিরা আবার আফগানিস্তানে মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে এসে তারা আবার হামলা চালানোর প্রয়াস নেবে। আফগানিস্তান থেকে এখনই সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পরিণাম ভয়াবহ হবে।