
যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত যৌন নিপীড়ক প্রয়াত জেফরি এপস্টেইনের ব্যক্তিগত উড়োজাহাজের যাত্রীদের তালিকায় নাম রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই উড়োজাহাজে আটবার চড়েছেন। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এসব ভ্রমণ করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ প্রকাশিত এপস্টেইন–সংক্রান্ত নতুন ই–মেইল বার্তা থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।
২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন এক সহকারী অ্যাটর্নির পাঠানো ওই ই–মেইলে লেখা হয়েছে—‘এপস্টেইনের ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে ডোনাল্ড ট্রাম্প যতবার ভ্রমণ করেছিলেন বলে আগে ধারণা করা হয়েছিল (বা আমরা জেনেছিলাম), তার চেয়ে অনেক বেশিবার তিনি ভ্রমণ করেছেন।’
যাত্রীদের তালিকায় ট্রাম্পের নাম থাকার মানেই যে তিনি অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তা নিশ্চিত করে বলার সুযোগ নেই।
তবে এর আগে ট্রাম্প বিষয়টি নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন। ২০২৪ সালে ট্রাম্প লিখেছিলেন, ‘আমি কখনোই এপস্টেইনের উড়োজাহাজে চড়িনি।’
এপস্টেইনের সঙ্গে মিলে কোনো অপরাধমূলক কাজে জড়িত হওয়ার কথাও অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প।
মার্কিন বিচার বিভাগ বলেছে, গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত কিছু নথিতে ‘ট্রাম্পবিরোধী অসত্য ও স্পর্শকাতর তথ্য’ উল্লেখ করা আছে।
ট্রাম্পের সঙ্গে এপস্টেইনের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব ছিল। তবে ট্রাম্প বলেছেন, এপস্টেইন প্রথমবার গ্রেপ্তার হওয়ার অনেক আগেই তাঁদের সম্পর্ক শেষ হয়ে গিয়েছিল।
মার্কিন কংগ্রেসে পাস হওয়া একটি আইনের আওতায় সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ এপস্টেইন–সংক্রান্ত ৩০ হাজারের বেশি পৃষ্ঠার কিছু নতুন নথি প্রকাশ করেছে। ওই আইনের আওতায় বিচার বিভাগের ওপর গত শুক্রবার নাগাদ এপস্টেইন-সংশ্লিষ্ট পূর্ণাঙ্গ নথি প্রকাশের বাধ্যবাধকতা ছিল।
গতকাল এক বিবৃতিতে বিচার বিভাগ বলেছে, ‘নথিগুলোর কোনো কোনোটির মধ্যে ২০২০ সালের নির্বাচনের ঠিক আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইতে জমা দেওয়া মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত দাবিগুলো রয়েছে। স্পষ্ট করা যাক—এসব দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। যদি এর মধ্যে সামান্যতমও বিশ্বাসযোগ্যতা থাকত, তবে সেগুলোকে অবশ্যই ইতিমধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হতো।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে প্রকাশিত বিবৃতিতে বিচার বিভাগ আরও বলেছে, ‘তবু আইন ও স্বচ্ছতার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে এপস্টেইনের ভুক্তভোগীদের আইনগতভাবে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা বজায় রেখে বিচার বিভাগ এসব নথি প্রকাশ করছে।’
কৌঁসুলির ই–মেইলটি ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি পাঠানো হয়। এপস্টেইন ফ্লাইট রেকর্ডস নামে একের পর এক পাঠানো ই–মেইলের একটি ছিল এটি। ই–মেইলে প্রেরক এবং প্রাপকের নাম ঢেকে দেওয়া হয়েছে। তবে ই–মেইলের নিচে লেখা আছে, সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্ক ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি। তবে তাঁর নামটি ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
ই–মেইলে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ‘১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে অন্তত আটটি ফ্লাইটে যাত্রী হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিলেন। এর মধ্যে অন্তত চারটি ফ্লাইটে ম্যাক্সওয়েলও (এপস্টেইনের সহযোগী গিলেন ম্যাক্সওয়েল) উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি মারলা ম্যাপলস (দ্বিতীয় স্ত্রী) তাঁর কন্যা টিফানি এবং ছেলে এরিকসহ অন্যদের সঙ্গে এসব ভ্রমণ করেছেন।’
ই–মেইলে আরও লেখা হয়েছে, ‘১৯৯৩ সালের এক ফ্লাইটে তিনি ও এপস্টেইনই শুধু যাত্রী ছিলেন। অন্য একটি ফ্লাইটে শুধু তিনজন যাত্রী ছিলেন। তাঁরা হলেন—এপস্টেইন, ট্রাম্প ও তখন ২০ বছর বয়সী...’ —বাক্যের বাকি অংশটা ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
ই–মেইলে বলা হয়েছে: ‘অন্য দুটি ফ্লাইটে এমন দুজন নারী যাত্রী ছিলেন, যারা ম্যাক্সওয়েল–সংক্রান্ত মামলার সম্ভাব্য সাক্ষী।’
ই–মেইল অনুযায়ী, ট্রাম্প এপস্টেইনের উড়োজাহাজে এমন সময়েও ভ্রমণ করেছেন, যখন কিনা তাঁকে (এপস্টেইন) গিলেন ম্যাক্সওয়েল–সংক্রান্ত মামলায় অভিযুক্ত করার কথা ভাবা হচ্ছিল।
অপ্রাপ্তবয়স্কদের অবৈধ যৌন কর্মকাণ্ডে প্রলুব্ধ করা এবং যৌন কর্মের জন্য তাদের পাচার করার অভিযোগে ২০২২ সালে ম্যাক্সওয়েলকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মার্কিন বিচার বিভাগ তখন বলেছিল, ম্যাক্সওয়েল অন্তত ১৯৯৪ সাল থেকে প্রায় ২০০৪ সাল পর্যন্ত এসব অপরাধ করেছেন।
এপস্টেইন ২০১৯ সালে নিউইয়র্কের একটি কারাকক্ষে মারা যান। তিনি যৌন নিপীড়নের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। যৌন উদ্দেশ্যে পাচারকাজে জড়িত অভিযোগেও তাঁর বিরুদ্ধে বিচার চলছিল।