ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে জেফরি এপস্টেইন
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে জেফরি এপস্টেইন

একই নারীর সঙ্গে ট্রাম্প ও যৌন নিপীড়ক এপস্টেইনের সম্পর্ক ছিল

যৌন নিপীড়ক ও নারী পাচারকারী জেফরি এপস্টেইনের ৫০তম জন্মদিনের একটি বই গত সোমবার আইনপ্রণেতারা প্রকাশ করে দিয়েছেন। বইটির সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো একটি অশ্লীল ছবি। এতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই সময় সই করেছেন বলে দেখে মনে হচ্ছে।

এ ছাড়া বইয়ের অন্য একটি পাতায় ট্রাম্পের নাম আসার ফলে ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতাসহ অন্য সমালোচকেরা তাঁকে আক্রমণ করার নতুন সুযোগ পেয়েছেন।

বইয়ের পাতাটি ২০০৩ সালে যোগ করা হয়েছিল। জোয়েল পাশকো নামে এক ব্যক্তি এই পাতা যোগ করেন। তিনি ছিলেন নিউইয়র্কের একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং ট্রাম্পের ‘মার-এ-লাগো’ রিসোর্টের সদস্য।

ছবিতে দেখা যায়, এপস্টেইন ও আরেক ব্যক্তি এবং এক নারীর সঙ্গে রিসোর্টে দাঁড়িয়ে আছেন পাশকো। ছবিতে থাকা নারীর মুখ ঝাপসা করে দেওয়া হয়েছে। পাশকোর হাতে একটি বড় চেক, যা দেখতে নকল মনে হয়। এতে ‘ডি জে ট্রাম্প’-এর জাল সই রয়েছে।

ছবিটি ১৯৯০-এর দশকে তোলা। এর নিচে হাতে লেখা একটি নোটে মজা করে বলা হয়েছে, এপস্টেইনের ‘অর্থ ও নারী’ বিষয়ে ‘ছোটবেলা থেকেই প্রতিভা’ ছিল। নোটে আরও বলা হয়, তিনি ট্রাম্পের কাছে ২২ হাজার ৫০০ ডলারে এক নারীকে বিক্রি করেছিলেন। লেখায় ওই নারীর প্রতি অসম্মানজনক শব্দও লেখা ছিল।

হাউস ওভারসাইট কমিটির প্রকাশিত ফাইলে ওই নারীর মুখ ঝাপসা করে দেওয়া হয়েছে। তিনি ইউরোপে পরিচিত ছিলেন। ছবি তোলার সময় তাঁর বয়স ছিল ২০-এর মতো।

জানা গেছে, ওই সময় ইউরোপের ওই নারী অল্প দিনের জন্য এপস্টেইন ও ট্রাম্প—দুজনের সঙ্গেই মিশেছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারীকে পাওয়ার জন্য দুজনের মধ্যে যে প্রতিযোগিতা চলছিল, বইয়ের লেখাটি সেদিকেই ইঙ্গিত করেছে।

এপস্টেইনের সঙ্গে ওই নারীর ঠিক কী ধরনের সম্পর্ক ছিল, তা পরিষ্কার নয়। নিউইয়র্ক টাইমস তাঁর নাম প্রকাশ করছে না। কারণ, তিনিও এপস্টেইনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারেন।

ওই নারীর এক আইনজীবী বলেন, তিনি যখন ছাত্রী ছিলেন, তখন এপস্টেইনকে ‘কাজের সূত্রে’ চিনতেন। তবে ১৯৯৭ সালে তাঁর সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। আইনজীবী আরও বলেন, তাঁর মক্কেল এই চিঠি বা এর ভেতরের অসম্মানজনক কথাগুলো সম্পর্কে কিছুই জানতেন না।

হাউস ওভারসাইট কমিটি এপস্টেইনের সব সম্পত্তি খতিয়ে দেখছিল। ওই কমিটিই ২৩৮ পৃষ্ঠার বইটি প্রকাশ করে। এই বইয়ের মধ্যে ট্রাম্পের সই করা ওই আপত্তিকর ছবিও ছিল। ফলে এপস্টেইনের ফাইল সরকার কীভাবে সামলাচ্ছে, তা নিয়ে আবার নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ট্রাম্প ওই ছবি আঁকেননি বা সইও করেননি। তিনি আরও বলেন, ছবির ওই বড় চেকে ট্রাম্প কখনোই সই করেননি। ৮২ বছর বয়সী পাশকো বা তাঁর আইনজীবী এ বিষয়ে এখনো কোনো কথা বলেননি।

ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা এপস্টেইনের জন্মদিনের বইয়ের তথ্যটি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) বড় বড় অক্ষরে লিখেছেন, ‘এপস্টেইনের জন্মদিনের বইয়ের নতুন পাতা’।

মনে হচ্ছে, পাশকো বইটিতে পরপর কয়েকটি পাতা যোগ করেছিলেন। জাল চেকের আগের পাতায়ই খুবই অমার্জিত কার্টুন রয়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে, এপস্টেইন মেয়েদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছেন। পাতার এক পৃষ্ঠায় দেখা যায়, ১৯৮৩ সালে এপস্টেইন ছোট মেয়েদের বেলুন দিচ্ছেন। আর ২০০৩ সালে চারজন প্রায় নগ্ন তরুণী তাঁকে মালিশ করে দিচ্ছেন। কার্টুনের নিচে লেখা, ‘কী দারুণ একটা দেশ’।

এই বড় চেকের ছবিটি থেকে ট্রাম্প আর এপস্টেইনের মেলামেশার বিষয়ে নতুন করে ধারণা পাওয়া যায়। এটা সবাই জানে যে ১৯৯০-এর দশকে তাঁরা দুজন বন্ধু ছিলেন। যৌন অপরাধের দায়ে ২০০৮ সালে এপস্টেইনের যখন সাজা হয়, তার আগে তাঁদের বন্ধুত্ব ছিল।

দ্য টাইমস ছবিটি বিশ্লেষণ করে দেখেছে, এই ছবিটি ট্রাম্পের মার-এ-লাগো রিসোর্টে তোলা। ছবিটি ১৯৯৬ সালের পরে তোলা হয়েছিল। ছবির পেছনে পামগাছ ও একটি খড়ের চালাওয়ালা ঘর দেখা যায়। এলাকাটি চারপাশে সাদা কাঠের বেড়া দিয়ে ঘেরা, আর খড়ের ঘরের সামনে টেনিস কোর্টের সাদা নেটের ফিতা চোখে পড়ে। এসব দৃশ্য টেনিস ফটোগ্রাফার আর্ট সাইটজের তোলা ১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারির ছবির সঙ্গে মিলে যায়।

ছবিতে থাকা ওই নারীর কথা এপস্টেইনের সাবেক বান্ধবী গিসলাইন ম্যাক্সওয়েলের মামলায়ও উঠে এসেছিল। ম্যাক্সওয়েল এখন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের যৌন ব্যবসায় ব্যবহারের অপরাধে ২০ বছরের কারাভোগ করছেন।

ম্যাক্সওয়েল ও এপস্টেইনের এক কর্মী সাক্ষ্যে বলেন, দুজনকে দেখলে মনে হতো, তাঁরা যেন ‘দম্পতি’।

১৯৯০-এর দশকে পাশকোর সঙ্গে এপস্টেইনের অনেক যোগাযোগ ছিল। এপস্টেইনের ব্যক্তিগত ফোনবুক, যা ‘ব্ল্যাক বুক’ নামে পরিচিত, তাতে পাশকোর নাম ও নম্বর ছিল। এমনকি পাশকো ১৯৯৪ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে প্রায় ১০ বার এপস্টেইনের ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে যাতায়াত করেছিলেন।

তবে ভুক্তভোগী নারীদের এক আইনজীবী বলছেন, এপস্টেইনের শিকার হওয়া নারীরা যেসব মামলা করেছেন, সেখানে কখনো পাশকোর নাম আসেনি।