
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বাড়ানোর সুযোগ দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে সেটা ভারতের সঙ্গে তাদের ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে নয়।
মালয়েশিয়ায় দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন রুবিও। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে সাংবাদিকদের সঙ্গে তাঁর কথোপকথনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যকার ‘শক্তিশালী সম্পর্ক’ নিয়ে ভারত কোনো উদ্বেগ জানিয়েছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে রুবিও বলেন, ‘আসলে তারা (ভারত) তেমন কিছু বলেনি। আমি যা বুঝি, ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তান-ভারত সম্পর্কে উত্তেজনার ফলে স্পষ্ট কিছু কারণে স্বাভাবিকভাবেই তারা উদ্বিগ্ন। কিন্তু তাদের বুঝতে হবে, আমাদের অনেক দেশের সঙ্গেই সম্পর্ক বজায় রাখতে হয়।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বাড়ানোর একটি সুযোগ দেখছি। আর আমার মনে হয় আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের কাজ হলো যতগুলো দেশের সাথে সম্ভব অভিন্ন স্বার্থের বিষয়গুলোতে কীভাবে কাজ করা যায়, তা খুঁজে বের করা।’
এ বিষয়ে রুবিও আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, কূটনৈতিক ও অনুরূপ বিষয়গুলোতে ভারতীয়রা অত্যন্ত পরিপক্ব। দেখুন, আমাদের যেসব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নেই, ভারতের সেসব দেশের সঙ্গেও সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং এটি পরিণত ও বাস্তববাদী পররাষ্ট্র নীতিরই একটি অংশ। আমি মনে করি না, পাকিস্তানের সঙ্গে আমরা এমন কোনো সম্পর্কে আবদ্ধ হচ্ছি, যেটা ভারতের সঙ্গে আমাদের গভীর, ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও বন্ধুত্বের ক্ষতি করবে।’
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের সম্পর্কে উন্নতি দেখা গেছে। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্ভাব্য যুদ্ধ এড়ানো এবং বিষয়টি সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকা ইসলামাবাদ স্বীকৃতি দেওয়ায় এমনটা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নও করা হয় রুবিওকে। এ বিষয়ে একজন সাংবাদিক তাঁর কাছে জানতে চান, ‘আপনার মতে এই পরিবর্তনের পেছনে আসল বাঁকবদল ছিল কোনটি?’
জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘না, আমি মনে করি তাঁরা এর প্রশংসা করেছিল। আপনি কারও সঙ্গে কাজ করলে তাদের জানতে পারবেন এবং যোগাযোগও করতে পারবেন। তাই এ নিয়ে একধরনের সন্তুষ্টি ছিল বলে আমি মনে করি। তবে সংঘাত শুরু হওয়ার আগেই আমি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম এবং বলেছিলাম, আমরা আপনার সঙ্গে আবার জোটগত এবং কৌশলগত অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে আগ্রহী। আমরা বিশ্বাস করি, এমন অনেক ক্ষেত্র আছে যেখানে আমরা তাদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে পারি।’
এ বিষয়ে মার্কো রুবিও আরও বলেন, ‘আমরা ভারত ও বাদ বাকি বিষয়ে সব চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন আছি। তবে আমাদের কাজ হলো অংশীদারত্ব গড়ে তোলা সম্ভব এমন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি করা। সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমসহ এ ধরনের নানা ক্ষেত্রে পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের সহযোগিতার ইতিহাস রয়েছে। সম্ভব হলে আমরা এটি আরও বিস্তৃত করতে চাই। যদিও আমরা বুঝি, কিছু অসুবিধা ও চ্যালেঞ্জ থাকবে। তবে আমি মনে করি, এই সম্পর্ক আগের মতো জোরদার হচ্ছে, যা ইতিবাচক। আর এটি ভারত বা অন্য কারও সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষতি করে বা সম্পর্কের পরিবর্তে হচ্ছে বলে আমি মনে করি না।’
আজ সোমবার মালয়েশিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে মার্কো রুবিওর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে এক সাংবাদিক রুবিওর কাছে জানতে চান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৃহত্তর বাণিজ্যচুক্তির স্বার্থে ভারত রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনা কমাতে প্রস্তুত কি না।
জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত ইতিমধ্যে তাদের জ্বালানি তেল কেনার উৎসের বৈচিত্র্য আনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে আমি মনে করি।...তবে আমি এ বিষয়ে আগবাড়িয়ে সিদ্ধান্ত দিতে চাই না কিংবা আমি বাণিজ্যচুক্তির আলোচনাও করছি না। তাই সে বিষয়ে মন্তব্য করব না। আমি জানি, বর্তমান পরিস্থিতির আগে থেকেই তারা তেল কেনার উৎসে বৈচিত্র্য আনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। স্বাভাবিকভাবেই আমরা তাদের কাছে যত বেশি তেল বিক্রি করব, তারা অন্যত্র থেকে তত কম কিনবে। তবে এসব বিষয়ে শেষ পর্যন্ত আমরা কতটুকু সমঝোতায় পৌঁছাতে পারব, সেটা সময় বলে দেবে।’