
যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে গত বুধবার সকালে এক স্কুলে সংঘটিত বন্দুক হামলার বর্ণনা দিয়েছেন কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী। হামলার সময় শিশুরা স্কুলের পাশে একটি গির্জার প্রার্থনা (খ্রিষ্টজাগ) অনুষ্ঠানে ছিল।
এক শিশু জানিয়েছে, সে তার এক বন্ধুর কারণে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে। তবে তার সে বন্ধুর গায়ে গুলি লেগেছে।
বুধবারের হামলায় দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ১৭ জন। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফবিআই) এ হামলাকে প্রাথমিকভাবে ক্যাথলিকবিরোধী হিংসামূলক ঘটনা বলে মনে করছে।
স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারীর নাম রবিন ওয়েস্টম্যান (২৩)। ঘটনাস্থলেই তিনি নিজে নিজের গুলিতে নিহত হয়েছেন। রবিন কেন হামলা চালিয়েছেন, কর্তৃপক্ষ এখনো সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রবিন অ্যানানসিয়েশন ক্যাথলিক স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। রবিনের মা একসময় এই স্কুলে কাজ করতেন।
বুধবারের ঘটনায় অল্পের জন্য গুলি থেকে রক্ষা পেয়েছে ওয়েস্টন হালসনে (১০)। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিবিএস-সংশ্লিষ্ট সম্প্রচারমাধ্যম ডব্লিউসিসিওকে ওয়েস্টন জানায়, এক বন্ধু আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাকে রক্ষা করেছে। কিন্তু সে গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
ওয়েস্টন হালসনে বলে, ‘আমি (গির্জার) রঙিন কাচের জানালা থেকে মাত্র দুই সিট দূরে ছিলাম। আমার বন্ধু ভিক্টর আমাকে বাঁচালেও সে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। সে আমার ওপর শুয়ে পড়েছিল।’
১০ বছর বয়সী এ শিশু আরও বলে, ‘আমার বন্ধুর পিঠে গুলি লেগেছিল। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল...আমি তার জন্য খুব ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন মনে হয় সে ঠিক আছে।’
ওয়েস্টন জানায়, গুলি করলে কী করতে হবে, তা নিয়ে সে এবং তার সহপাঠীরা নিয়মিত অনুশীলন করেছে। কিন্তু বুধবার যে পরিবেশে তারা বন্দুক হামলার শিকার হয়েছে, সে পরিস্থিতিতে কী করতে হবে, তা তার জানা ছিল না। সে বলে, ‘আমরা প্রতি মাসে অনুশীলন করি, তবে তা গির্জায় নয়, শুধু স্কুলে।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সন্দেহভাজন রবিন সম্ভবত অ্যানানসিয়েশন চার্চের পাশেই গিয়েছিলেন। এই গির্জার চৌহদ্দির মধ্যে একটি স্কুলও রয়েছে। বন্দুকধারী তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে জানালা লক্ষ্য করে কয়েক ডজন গুলি ছোড়েন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি ধোঁয়া উৎপাদনকারী বোমাও (স্মোক বোম্ব) উদ্ধার করেছে।
তদন্তকারী বুঝতে চেষ্টা করছেন, শুধু কি ভবনের বাইরে থেকে গুলি করা হয়েছে, না ভেতর থেকেও গুলি করা হয়েছে? কারণ, ভবনের ভেতরে গুলির কোনো খোসা পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়রা বলছেন, গুলির আওয়াজ শুনে তাঁরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। মাইক গ্যারিটি নামের এক ব্যক্তি এনবিসি নিউজকে বলেন, প্রথমে তাঁর কাছে এটা পার্শ্ববর্তী নির্মাণাধীন ভবনে পেরেক মারার যন্ত্রের শব্দ বলে মনে হয়েছিল।
দুই ব্লক দূরে বসবাসকারী বিল বিয়েনেম্যান সেই মুহূর্তের কথা স্মরণ করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি (চারপাশের লোকদের) বলেছিলাম, এটা গোলাগুলির শব্দ হতেই পারে না। কারণ, অনেক বেশি শব্দ হচ্ছিল।’
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা পিজে মাড্ড বন্দুক হামলার সময় বাসায় কাজ করছিলেন। তিনটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন জানিয়ে তিনি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেন, ‘হঠাৎ করে বুঝতে পারলেন, এটা গোলাগুলির শব্দ।’
বাসায় থেকে বের হয়ে মাড্ড চার্চের দিকে দৌড়ে যান। যেখানে তিনি মাটিতে তিন ম্যাগাজিন গুলি পড়ে থাকতে দেখেছেন।
মাইক গ্যারিটিসহ অন্য প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তাঁরা শিশুদের রক্তাক্ত অবস্থায় গির্জা থেকে বের হতে দেখেছেন।
গির্জার আরেক প্রতিবেশী প্যাট্রিক স্ক্যালেন বিবিসিকে বলেন, তিনি তিনটি শিশুকে ভবন থেকে দৌড়ে বের হয়ে যেতে দেখেছেন। তাদের মধ্যে এক মেয়ের মাথায় আঘাত ছিল।
প্যাট্রিক জানান, মেয়েটি বলেছিল, ‘দয়া করে আমার হাতটি ধরো, আমাকে ছেড়ে যেয়ো না।’ তিনি বলেন, ‘আমি কোথাও যাচ্ছি না।’
গির্জার পাশে একটি প্রতিষ্ঠানে শিশুদের দেখভালের কাজ করেন ম্যাডি ব্র্যান্ডট। তিনি এনবিসি নিউজকে বলেন, ‘আপনারা হয়তো অনলাইনে ভিডিও দেখেছেন। কিন্তু (এই ধনের কোনো ভয়ংকর ঘটনা) প্রত্যক্ষ করার সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা হয় না। এটা ভয়ানক…সত্যিই ভীতিকর।’
ভুক্তভোগীদের স্মরণে বুধবার সন্ধ্যায় পাশের আরেকটি স্কুলে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়েছিল। সেখানে কয়েক শ মানুষ অংশ নিয়েছিলেন।
হতাহতদের জন্য শত শত মানুষ প্রার্থনা সভায় অংশ নিয়েছেন। হতাহতের সবাই সেরে উঠবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে কয়েকজন হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন।