
নিজেদের অপছন্দের মতামত ঠেকাতে মার্কিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে ‘চাপ দেওয়ার’ অভিযোগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাবেক এক কমিশনারসহ পাঁচজনকে ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এমন ঘোষণা দিয়েছে।
এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ‘এসব উগ্রপন্থী কর্মী ও রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো বাইরের দেশগুলোর হয়ে সেন্সরশিপ অভিযান এগিয়ে নিয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে মার্কিন বক্তা ও কোম্পানিগুলো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।’
ইউরোপীয় কমিশনের প্রযুক্তিবিষয়ক সাবেক শীর্ষ নিয়ন্ত্রক থিয়েরি ব্রেতোঁ যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, এর মধ্য দিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দাবি, ব্রেতোঁ ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডিজিটাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট (ডিএসএ)-এর মূল পরিকল্পনাকারী। এ আইনের আওতায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোকে তাঁদের প্ল্যাটফর্মে আসা কনটেন্ট যাচাইবাছাই করতে হয়। কোনো কোনো মার্কিন রক্ষণশীল গোষ্ঠী এটিকে ডানপন্থী মতামত সেন্সর করার চেষ্টা হিসেবে দেখছে। তবে ব্রাসেলস এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিধিনিষেধ মানার বাধ্যবাধকতা নিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ধনী এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের মালিক ইলন মাস্কের সঙ্গেও বিবাদে জড়িয়েছেন ব্রেতোঁ।
ইউরোপীয় কমিশন সম্প্রতি ব্লু টিক ব্যাজ–সংক্রান্ত কারণে এক্সকে ১২০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করেছে। এটি ডিএসএর আওতায় করা প্রথম জরিমানা। কমিশন বলেছে, এক্সের ব্লু টিক ব্যবস্থাটি ‘প্রতারণামূলক’। কারণ কোম্পানি ব্যবহারকারীদের বিষয়ে যথাযথভাবে যাচাই করছে না।
এর প্রতিক্রিয়ায় মাস্কের মালিকানাধীন এক্সে কমিশনের বিজ্ঞাপন দেওয়ার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা গ্লোবাল ডিজইনফরমেশন ইনডেক্স (জিডিআই)-এর প্রধান ক্লেয়ার মেলফোর্ডকেও ভিসা নিষেধাজ্ঞার জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি সারাহ বি রজার্স জিডিআই–এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, তারা মার্কিন করদাতার অর্থ ব্যবহার করে ‘যুক্তরাষ্ট্রের মতামত ও সংবাদমাধ্যমকে সেন্সর ও কালো তালিকাভুক্ত’ করার চেষ্টা করছে।
তবে জিডিআইয়ের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন আবারও সরকারের সম্পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহার করে এমন কণ্ঠগুলোকে ভয় দেখানো, সেন্সর করা এবং চুপ করানোর চেষ্টা করছে, যাদের সঙ্গে তারা একমত নয়।
মার্কো রুবিওর মতে, জিডিআইয়ের কাজ অনৈতিক, অবৈধ ও মার্কিন মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
অনলাইনে বিদ্বেষমূলক ও ভুল তথ্য ঠেকাতে লড়াই চালিয়ে যাওয়া অলাভজনক সংস্থা সিসিডিএইচের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আহমেদের ভিসাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সারাহ রজার্স অভিযোগ করেছেন, ইমরান আহমেদ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা সরকারের ক্ষমতাকে মার্কিন নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। বিবিসি এ ব্যাপারে সিসিডিএইচের মন্তব্য জানার চেষ্টা করেছে।
এ ছাড়া জার্মান সংস্থা হেইটএইডের আন্না-লেনা ভন হোদেনবার্গ এবং জোসেফিন ব্যালনকেও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দাবি, এ দুই ব্যক্তিও ডিএসএ আইন প্রয়োগে সাহায্য করেছেন।
বিবিসির কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দুই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে একটি সরকারের দমনপীড়ন বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের মতে, এ ধরনের দমনমূলক কর্মকাণ্ড চালাতে গিয়ে সরকার ক্রমাগত আইন উপেক্ষা করছে এবং যেকোনো উপায়ে তার সমালোচকদের চুপ করানোর চেষ্টা করছে।