
২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত শিশু যৌন নিপীড়নকারী জেফরে এপস্টেইনের জন্মদিনে বিভিন্ন মানুষের শুভেচ্ছাসংবলিত একটি বই প্রকাশ করেছেন মার্কিন ডেমোক্র্যাটদলীয় আইনপ্রণেতারা। তাঁদের দাবি, সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাক্ষরিত একটি চিঠিও আছে।
প্রয়াত এপস্টেইনের উইল এবং তাঁর ব্যক্তিগত অ্যাড্রেস বুকসহ আরও অনেক নথির সঙ্গে এ বই প্রকাশ করা হয়েছে। অ্যাড্রেস বুকটিতে বিভিন্ন রাজপরিবারের সদস্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, তারকা ও মডেলের নাম-ঠিকানা লেখা আছে।
গত মাসে এপস্টেইনের সম্পদ দেখভালকারী আইনজীবীদের প্রতি সমন জারি করেন আদালত। তাঁদের এপস্টেইনের জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তাসংবলিত বইটিসহ কিছু নথিপত্র জমা দিতে বলা হয়। এরপর তাঁরা হাউস ওভারসাইট কমিটিতে নথি পাঠান।
এদিকে যেটিকে ট্রাম্পের শুভেচ্ছা বার্তা বলে দাবি করা হচ্ছে, তা অস্বীকার করেছে হোয়াইট হাউস। চিঠিতে এক নারীর শরীরের অবয়ব আঁকা ছিল। হোয়াইট হাউস বলেছে, প্রেসিডেন্ট এ ছবি আঁকেননি, আর তিনি এতে স্বাক্ষরও করেননি।
এপস্টেইন ইস্যুতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য ট্রাম্পের ওপর যখন সমর্থক ও তাঁর নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির চাপ জোরালো হচ্ছে, তখনই বইটি প্রকাশ করা হলো।
জানা গেছে, ২৩৮ পাতার এই বই এপস্টেইনের ৫০তম জন্মদিনের জন্য তৈরি করেছিলেন তাঁর ব্রিটিশ সহযোগী ও সাবেক প্রেমিকা গিসলেইন ম্যাক্সওয়েল। যৌনকর্মে অংশগ্রহণের জন্য নারীদের পাচার করতে এপস্টেইনের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে ২০২১ সালে তিনি (গিসলেইন) দোষী সাব্যস্ত হন।
যেটিকে ট্রাম্পের শুভেচ্ছা বার্তা বলে দাবি করা হচ্ছে, তা অস্বীকার করেছে হোয়াইট হাউস। চিঠিতে এক নারীর শরীরের অবয়ব আঁকা ছিল। হোয়াইট হাউস বলেছে, প্রেসিডেন্ট ‘এই ছবি আঁকেননি, আর তিনি এতে স্বাক্ষরও করেননি।’
‘দ্য ফার্স্ট ফিফটি ইয়ারস’ নামের এ বইয়ে এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্কিত উচ্চপদস্থ রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতাসহ বিভিন্ন মানুষের লেখা শুভেচ্ছা বার্তা আছে। তাঁদের মধ্যে ট্রাম্প স্বাক্ষরিত একটি নোট আছে বলে দাবি করা হচ্ছে। ট্রাম্প তখন এপস্টেইনের বন্ধু ছিলেন। এ ছাড়া সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের লেখা একটি নোটও আছে।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি জন্মদিনের শুভেচ্ছা বার্তাটি লেখেননি। এদিকে ক্লিনটনের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ক্লিনটন তখন এপস্টেইনের পরিচিত ছিলেন, কিন্তু তাঁর অপরাধ সম্পর্কে কিছু জানতেন না।
বিবিসি ক্লিনটন ফাউন্ডেশন ও সাবেক প্রেসিডেন্টের এক আইনজীবীর সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে।
বইটিতে এপস্টেইনের জীবনের বিভিন্ন সময়ের ছবি আছে। এ ছাড়া তাঁর স্কুলের দিনগুলো থেকে শুরু করে বড় হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা, গানের কথা, ভ্যানিটি ফেয়ার ম্যাগাজিনের একটি প্রচ্ছদ, কিছু অশ্লীল স্কেচ, গল্প ও ব্যক্তিগত রসিকতার কথা উল্লেখ রয়েছে বইটিতে।
এপস্টেইনকে ট্রাম্পের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানোর খবরটি গত জুলাই মাসে প্রথম প্রকাশ করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট তখন বলেছিলেন, এটি ‘ভুয়া’ এবং তিনি এটি লেখেননি। তিনি তখন নিউজ করপোরেশনের মালিক রুপার্ট মারডক, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদক, প্রকাশক ও এটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এক হাজার কোটি ডলারের মামলা দায়ের করেন।
এখন আমরা জানি, ডোনাল্ড ট্রাম্প মিথ্যা বলেছিলেন এবং সত্য লুকানোর জন্য সবকিছু করেছেন।রবার্ট গার্সিয়া, হাউস ওভারসাইট কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য
হাউস ওভারসাইট কমিটি এপস্টেইনের বাড়ি থেকে বইটি পেয়েছে। গতকাল সোমবার হাউস ওভারসাইট কমিটির ডেমোক্র্যাট সদস্যরা এটির ছবি প্রকাশ করেন এবং দাবি করেন, প্রেসিডেন্ট মিথ্যা বলছেন।
ডেমোক্র্যাট সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে লিখেছেন, ‘এই যে দেখেন, এপস্টেইনের জন্মদিনে ট্রাম্পের বার্তা; যেটির অস্তিত্ব নেই বলেই প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন।’
গতকাল রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন হাউস ওভারসাইট কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য রবার্ট গার্সিয়া বলেন, ‘এখন আমরা জানি, ডোনাল্ড ট্রাম্প মিথ্যা বলেছিলেন এবং সত্য লুকানোর জন্য সবকিছু করেছেন।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৩৮ পাতার বইটি এপস্টেইনের ৫০তম জন্মদিনের জন্য তৈরি করেছিলেন তাঁর ব্রিটিশ সহযোগী ও সাবেক প্রেমিকা গিসলেইন ম্যাক্সওয়েল। যৌনকর্মে অংশগ্রহণের জন্য নারীদের পাচার করতে এপস্টেইনের সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে ২০২১ সালে তিনি (গিসলেইন) দোষী সাব্যস্ত হন।
ট্রাম্পের স্বাক্ষরযুক্ত নোটে কয়েকটি বাক্য লেখা আছে। শেষ বাক্যে লেখা আছে: ‘শুভ জন্মদিন—এবং প্রতিটি দিন হোক আরেকটি চমৎকার গোপনীয়তার।’
এক্সে ওই নোটের ছবি প্রকাশ করে কমিটির ডেমোক্র্যাটরা এপস্টেইনের নথিগুলো প্রকাশের দাবি জানান। বইটির সঙ্গে আইনপ্রণেতারা ২০০৭ সালের একটি চুক্তিও প্রকাশ করেন। এপস্টেইন ও ফ্লোরিডার সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্টের অ্যাটর্নি কার্যালয়ের ফেডারেল প্রসিকিউটরদের মধ্যে ওই চুক্তি হয়েছিল। এ ছাড়া তাঁর ব্যক্তিগত ঠিকানার খাতার প্রায় ৩০ বছরের তথ্যও প্রকাশ করা হয়েছে।
ট্রাম্প ও এপস্টেইন বহু বছর বন্ধু ছিলেন। তবে প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ২০০০-এর দশকের শুরুতে বিরোধ শুরু হলে তাঁরা আলাদা হয়ে যান।
এপস্টেইন প্রথমবার ২০০৬ সালে ফ্লোরিডায় যৌনকর্মে প্রলুব্ধ করার অভিযোগে অভিযুক্ত হন। ২০১৯ সালে বিচারের অপেক্ষায় থাকাকালে জেলেই মারা যান তিনি।