মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

ট্রাম্প কি আসলেই তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তৃতীয়বার অংশ নেবেন কি না, তা নিয়ে নানা গুঞ্জন উঠেছে। গতকাল সোমবার এ গুঞ্জনকে অস্বীকার করতে রাজি হননি তিনি। তবে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে একজন দুবারের বেশি প্রেসিডেন্ট হতে না পারার যে বিধান, সেটিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে আদালতের দ্বারস্থ হবেন কি না, তা এখনো ভাবেননি তিনি।

ট্রাম্প কি আদৌ তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে পারবেন? এ ক্ষেত্রে কি কোনো আইনি বাধা আছে?

সংবিধান কী বলে

সংবিধানের ২২তম সংশোধনীর একটি অংশ বলা আছে, কোনো ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারবেন না।

প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের পর ১৯৫১ সালে এ সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছিল। এর আগপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের জন্য দুই মেয়াদের সীমা ছিল একধরনের অলিখিত প্রথা, যা দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের সময় থেকে প্রচলিত হয়। রুজভেল্ট প্রথম এ প্রথা ভেঙে চারবার প্রেসিডেন্ট হন।

মার্কিন আইনসভায় সংবিধান সংশোধনের জন্য রিপাবলিকানদের প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে তাদের আসন ২১৯, আর ডেমোক্র্যাটদের ২১৩। উচ্চকক্ষ সিনেটে দুই দলের আসন ৫৩-৪৭। রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে আছে ২৮টি রাজ্যের আইনসভা।

যুক্তরাষ্ট্রের কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ওয়েইন আঙ্গার বলেন, সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন। প্রতিবার চার বছর ক্ষমতায় থাকবেন। এ নিয়মের বিরুদ্ধে আগে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি, তবে ট্রাম্পের এ ধরনের চ্যালেঞ্জ সম্ভবত ব্যর্থ হবে।

আঙ্গার বলেন, ‘আমার মনে হয় সুপ্রিম কোর্ট বলবেন—না, চার বছর করে দুই মেয়াদের বিষয়টি স্পষ্ট, ডোনাল্ড ট্রাম্প, আপনি তৃতীয়বার লড়তে পারবেন না।’

ট্রাম্পের মিত্ররা সংবিধান পরিবর্তন করতে পারবেন কি

হ্যাঁ, তবে বর্তমানে ডেমোক্রেটিক পার্টি ও ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন এতটা তীব্র যে এটি একেবারে অসম্ভব বলা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান সংশোধনের জন্য কংগ্রেসের উচ্চ ও নিম্নকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোট প্রয়োজন অথবা দুই-তৃতীয়াংশ অঙ্গরাজ্যকে জাতীয় সম্মেলন করতে হবে। এরপর ৫০ অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৩৮টির আইনসভার (স্টেট অ্যাসেম্বলি) অনুমোদনের ভিত্তিতে সংশোধনী কার্যকর হবে।

সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন। প্রতিবার চার বছর ক্ষমতায় থাকবেন। এ নিয়মের বিরুদ্ধে আগে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি, তবে ট্রাম্পের এ ধরনের চ্যালেঞ্জ সম্ভবত ব্যর্থ হবে।
-ওয়েইন আঙ্গার, যুক্তরাষ্ট্রের কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক

মার্কিন আইনসভায় সংবিধান সংশোধনের জন্য রিপাবলিকানদের প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে তাদের আসন ২১৯, আর ডেমোক্র্যাটদের ২১৩। উচ্চকক্ষ সিনেটে দুই দলের আসন ৫৩-৪৭। রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে আছে ২৮টি রাজ্যের আইনসভা।

টেনেসির রিপাবলিকান প্রতিনিধি ও ট্রাম্পের একনিষ্ঠ সমর্থক অ্যান্ডি ওগলস জানুয়ারিতে ২২তম সংশোধনী পরিবর্তনের প্রস্তাব দেন, যাতে প্রেসিডেন্ট হওয়ার সর্বোচ্চ মেয়াদ তিনবার (ধারাবাহিকভাবে নয়) করা যায়।

তবে ট্রাম্প ভাইস প্রেসিডেন্ট পদেও নির্বাচন করতে পারবেন না। কারণ, সংবিধানের ১২তম সংশোধনী অনুযায়ী, ‘যে ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট পদে যোগ্য নন, তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট পদেও অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।’

যেহেতু ট্রাম্পের দুই মেয়াদ (একটি ২০১৭ সালে শুরু হয়েছিল ও অন্যটি ২০২৫ সালে) পরপর নয় অর্থাৎ অবিচ্ছিন্ন নয়, তাই যদি প্রস্তাবিত সংশোধনীটি পাস হয়, তবে এটি ট্রাম্পকে ২০২৯ সালে শুরু হওয়া তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ দেবে।

ট্রাম্প কি ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে পারবেন

এমন গুঞ্জনও উঠেছে যে ট্রাম্প ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে পারেন। তাঁর দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী দায়িত্ব গ্রহণের পর পদত্যাগ করলে তিনি আবার প্রেসিডেন্ট পদে ফিরতে পারেন, তবে ট্রাম্প গতকাল এ গুঞ্জন নাকচ করে দেন।

মালয়েশিয়া থেকে জাপানে যাওয়ার সময় সরকারি উড়োজাহাজে ট্রাম্প সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি চাইলে এটি করতে পারতাম। কিন্তু মানুষ হয়তো তা পছন্দ করবে না।’

তবে ট্রাম্প ভাইস প্রেসিডেন্ট পদেও নির্বাচন করতে পারবেন না। কারণ, সংবিধানের ১২তম সংশোধনী অনুযায়ী, ‘যে ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট পদে যোগ্য নন, তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট পদেও অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।’