ঘরে বসেই পাওয়া যাচ্ছে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ

অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সেবা চালু করা হয় ২০১৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর। জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সারা দেশে।

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ পেতে এখন পুলিশের কোনো কার্যালয়ে বা থানায় যেতে হচ্ছে না। অনলাইনে আবেদন করে কুরিয়ার সার্ভিসে ঘরে বসেই এ সেবা পাচ্ছেন নাগরিকেরা।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সেবা চালু করা হয় ২০১৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর। ওই দিন বাংলাদেশ পুলিশ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই কর্মসূচির যৌথ আয়োজনে রাজারবাগ পুলিশ টেলিকম মিলনায়তনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ সেবার উদ্বোধন করেন।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, সাধারণত বিদেশে চাকরি, লেখাপড়া করা বা বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদের প্রয়োজন হয়। এ সনদে নাগরিকের থানায় কোনো ফৌজদারি অপরাধের রেকর্ড নেই বলে প্রত্যয়ন করা হয়। pcc.police.gov.bd ঠিকানায় অথবা বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটে (www.police.gov.bd) গিয়ে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স মেনুতে ক্লিক করে অনলাইনে আবেদন করা যায়। আবেদনের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সরকারি ফি পরিশোধের চালান স্ক্যান করে আপলোড করতে হয়। আবেদনকারীর ব্যক্তিগতভাবে থানায় যাওয়ার প্রয়োজন হয় না।

এরপর আবেদনকারী অনলাইনে তাঁর আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা নিয়মিত জানতে পারবেন। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদে সংশ্লিষ্ট থানার ওসির স্বাক্ষর, পুলিশ সুপার বা পুলিশের উপকমিশনারের প্রতিস্বাক্ষর এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সত্যায়ন হওয়ার পর আবেদনকারী সশরীর গিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় বা মহানগরের ক্ষেত্রে উপকমিশনারের কার্যালয়ের ওয়ান–স্টপ সার্ভিস কাউন্টার থেকে সনদ গ্রহণ করতে পারবেন। পাশাপাশি আবেদনকারী কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সনদ গ্রহণ করতে চাইলে সেটি উল্লেখ করে কুরিয়ার সার্ভিসের ফি (১৫-২০ টাকা) পরিশোধ করতে হবে। আবেদন জমা হওয়ার পর ঢাকায় সাত কর্মদিবস আর ঢাকার বাইরে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে পাওয়া যায় সনদ।

এ অনলাইন সনদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এটিতে একটি কিউআর কোড থাকে। যেকোনো স্মার্টফোন থেকে কোডটি স্ক্যান করলে ইস্যু হওয়া সনদের একটি অনলাইন লিংক পাওয়া যাবে। লিংক থেকে পাওয়া যাবে একটি অবিকল ডিজিটাল কপি। ফলে এ সনদ জাল হওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না এবং যেকোনো বিদেশি মিশন অনলাইনে এটা যাচাই করতে পারে।

আগে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ পেতে সেবাপ্রত্যাশীরা নির্ধারিত ফরম পূরণ করে ৫০০ টাকা সংশ্লিষ্ট থানার ওসির কাছে জমা দিতেন। তদন্ত শেষে থানার ওসি সেটি সংশ্লিষ্ট উপকমিশনার বা জেলা সুপারের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। ওই কর্মকর্তার স্বাক্ষরের পর আবেদনকারী সেটি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিতেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর আবেদনকারী সনদ তুলতে পারতেন। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, বিষয়টি ভোগান্তির ও সময়সাপেক্ষ ছিল।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-গণমাধ্যম) মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ চালুর ফলে সেবাপ্রত্যাশী জনগণের অর্থ ও সময় সাশ্রয় হচ্ছে। এতে হয়রানিও নেই। পুলিশের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিও এসেছে।

এক সপ্তাহের মধ্যে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ পাওয়ার কথা জানালেন মিরপুরের কাজীপুরের বাসিন্দা জিল্লুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলে শাওন রহমান অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। সে দেশে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদনপত্রের সঙ্গে তাঁর বাংলাদেশের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ যুক্ত করে দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। সম্প্রতি শাওন অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদের জন্য আবেদন করেন। ১০ দিনের মধ্যেই কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে শাওনের সনদ মিরপুরের বাসায় পৌঁছে যায়।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গত পাঁচ বছরে (২০১৭ থেকে ২০২১ সাল) ডিএমপি অনলাইনে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৫০টি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ দিয়েছে। এর মধ্যে ২০২০ সালে দেওয়া হয়েছে ২৯ হাজার ৫৩৪টি। ২০২১ সালে দেওয়া হয়েছে ৪১ হাজার ৬৪০টি। অর্থাৎ ২০২০ সালের তুলনায় গত বছরে ১২ হাজার ১০৬টি বেশি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ নিয়েছেন নগরবাসী।

অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ নিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) কৃষ্ণ পদ রায় প্রথম আলোকে বলেন, বিদেশে চাকরি ও পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের যাতে ভোগান্তি না হয়, সেই বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে এবং তাদের হাতে দ্রুত পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ তুলে দিতে অনলাইন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এখন ঘরে বসেই সবাই কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সনদ পাচ্ছেন। এতে তাঁদের অর্থ, সময় সাশ্রয় হচ্ছে, কমছে ভোগান্তিও।