ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে গঙ্গায়ও পানি বাড়ছে, বন্যা বেশি দিন থাকার শঙ্কা

সিলেটে বন্যায় তলিয়ে গেছে গোয়াইনঘাট উপজেলা। পানিবন্দী উপজেলার সালুটিকর এলাকা। ছবিটি রোববার সকালে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

দেশের উজান ও ভাটিতে পাল্লা দিয়ে নামা বৃষ্টির কারণে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ওই বিভাগের বেশির ভাগ জেলায় পানি আরও বাড়তে পারে। তবে মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টি কমে বন্যার পানি কমতে পারে। সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এমনটা বলা হয়েছে।

অন্যদিকে দেশের উত্তরের জনপদ কুড়িগ্রাম দিয়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি দ্রুত বাড়ছে। এর প্রভাবে আরেকটি ভাটির এলাকা গাইবান্ধা, রংপুর, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। আগামী কয়েক দিন সেখানে পানি আরও বাড়তে পারে। অন্যদিকে বাংলাদেশের উজানের আরেক নদী গঙ্গা অববাহিকায় ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ফলে সেখানে পানি বেড়ে তা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশের মধ্যাঞ্চলে প্রবেশ করতে পারে।

নদী ও পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি একযোগে বাড়লে দেশে মাঝারি থেকে বড় বন্যা হয়ে থাকে। কারণ, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় পানি বাড়লে তা চার থেকে সাত দিনের মধ্যে পদ্মা হয়ে বঙ্গোপসাগরে নেমে যায়। কিন্তু গঙ্গার পানি একই সময়ে বাড়লে তা ব্রহ্মপুত্রের পানির চাপে দেশের উত্তর থেকে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত পানি আটকে থাকে। ফলে পানি ১০ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এ বছর এ ধরনের বন্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, ব্রহ্মপুত্রের পানি এরই মধ্যে বেড়ে গেছে, গঙ্গার পানি দ্রুত বাড়ছে। অন্যদিকে সিলেটের বন্যার পানি এখনো বাড়ছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এ কে সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সিলেটের বন্যার পানি নেমে যেতে না যেতে উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে পানি বাড়তে শুরু করতে পারে। আর ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গার পানি একসঙ্গে বাড়লে বন্যা আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে ও দীর্ঘ সময় স্থায়ী হতে পারে।

এদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, গতকাল ভোর ছয়টা থেকে আজ ভোর ছয়টা পর্যন্ত সিলেট মোট বৃষ্টি হয়েছে ৩০৪ মিলিমিটার। আর ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিবহুল এলাকা চেরাপুঞ্জিতেও একই সময়ে এই পরিমাণে বৃষ্টি হয়নি। সেখানে ওই সময়ে ২৮৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তবে আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সিলেটে তেমন বৃষ্টি হয়নি, এক মিলিমিটারের চেয়ে কম বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। তাই সিলেটের বৃষ্টি কমে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা তৈরি করছে।

অন্যদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ বলছে, সিলেটে বৃষ্টি কমে গেলেও চট্টগ্রামে বৃষ্টি বাড়তে শুরু করেছে। আজ সকাল ছয়টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। কক্সবাজারসহ আশপাশের এলাকাগুলোতও আজ দিনভর বৃষ্টি চলেছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় তা আরও বাড়তে পারে।

এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয়বাষ্পপূর্ণ মেঘ আসা অব্যাহত রয়েছে। আর তা হিমালয় পর্বতমালাসহ বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকায় বাধা পেয়ে বৃষ্টি ঝরাচ্ছে। আগামী কয়েক দিন দেশের উত্তরাঞ্চল এবং চট্টগ্রাম বিভাগে বৃষ্টি বাড়তে পারে।