৬৩ জনের চোখে সমস্যা, ৬ জনকে নেওয়া হবে ঢাকায়

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা চলছে
ফাইল ছবি

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে আহত ব্যক্তিদের ৬৩ জনের চোখ কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁদের ৬ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিস্ফোরণে আহত রোগীদের দেখতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে যান জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক দ্বীন মোহাম্মদ নুরুল হক। তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করে চমেক কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেয়।

চমেক হাসপাতালের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক হক জানান, বিস্ফোরণে ৬৩ জন রোগীর চোখে নানা সমস্যা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কিছু রোগী রয়েছে, যাঁদের চোখ ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে গেছে।

আরও পড়ুন

তিনি বলেন, ছয়জনের চোখের অবস্থা বেশি খারাপ। তাঁদের চোখের গঠন ওলট-পালট হয়ে গেছে। কারও চোখের কর্নিয়া ফেটে গেছে; আইবল আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। আবার একজনের চোখ একেবারে ফেটে গেছে। এই ছয়জনকে ঢাকায় নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে অধ্যাপক হক বলেন, ঢাকায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হবে। বোর্ডে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকবেন।

তিনি জানান, এই ছয়জনের বাইরে আরও পাঁচজনের চোখও বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু তাঁদের শরীরের নানা জায়গায় সমস্যা রয়েছে। এ কারণে এখনই তাঁদের ঢাকায় পাঠানো যাবে না। তাঁদের অন্তত সাত দিন চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হবে। এরপর অবস্থা বুঝে ঢাকায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

অধ্যাপক হক আরও জানান, আহত ব্যক্তিদের চোখে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হতে পারে। তাই তাঁদের নিয়মিত বিরতিতে চিকিৎসা দেওয়া হবে। বেশির ভাগই সুস্থ হয়ে যাবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাসায়নিকের কারণে চোখে সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। তবে কোন কোন রাসায়নিকের কারণে চোখে সমস্যা হয়েছে, তা এখনই বলা যাবে না।

এদিকে দায়িত্বরত কয়েকজন চিকিৎসক প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, আহত অনেকের চোখে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। পানি জমে চোখ ও মুখমণ্ডল ফুলে গেছে। কারও কর্নিয়ায় আঘাত লেগেছে। আবার কারও চোখের সাদা অংশ লাল হয়ে গেছে। আগুন ও রাসায়নিক—দুই কারণেই এ অবস্থা হতে পারে। একজনের একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুনঃ

গত শনিবার রাত সোয়া নয়টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপো লোডিং স্টেশন এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এর দেড় ঘণ্টা পর একটি কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক বিস্ফোরিত হয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় তিন দিনে ৪৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত হয়েছেন কয়েক শ। প্রায় ৬১ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কথা জানায় সেনাবাহিনী।

বিস্ফোরণে হতাহতের সামগ্রিক পরিস্থিতি তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান আহসান জানান, নিহত ব্যক্তিদের ২৬ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে।

আরও পড়ুন

তাঁদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি মরদেহগুলো বর্তমানে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়েছে। তাঁদের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

শামীম আহসান বলেন, হাসপাতালে ২৩০ জন রোগী আহত অবস্থায় এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১৬৭ জন ভর্তি হন। বর্তমানে ভর্তি আছেন আছেন ৬৩ জন। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন দুজন। এ ছাড়া চট্টগ্রামের জেনারেল হাসপাতালে একজন, পার্কভিউ হাসপাতালে ১২ জন ও চট্টগ্রামের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি আছেন ১৪ জন।