বাংলাদেশ জেলের নাম পরিবর্তন করে ‘কারেকশন সার্ভিসেস বাংলাদেশ’ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই পরিবর্তন কবে নাগাদ বাস্তবায়িত হতে পারে? শুধু নাম পরিবর্তন করলেই কি সুফল আসবে, নাকি কাঠামোগত সংস্কারও করা হবে?
সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন: আপনারা জানেন, বাংলাদেশ জেলের নাম পরিবর্তনের প্রপোজাল মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। পলিসি চেঞ্জ বা নাম পরিবর্তনের যে অফিশিয়াল কার্যক্রমগুলো আছে, এটা চলমান। আশা করছি, খুব শিগগির সরকার একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
শুধু নাম পরিবর্তন করলেই যে সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যাবে, তা নয়। আগে ছিল, মানুষকে পানিশমেন্ট দিয়ে সংশোধন করতে হবে। এই থিওরিটা আসলে কাজ করেনি। দেখা যায়, যারা এ রকম এক্সট্রিম টাইপ আছে, তারা আরও এক্সট্রিম থেকে এক্সট্রিম হয়ে যায়। যে কারণে কিন্তু বিশ্ব এখন ধ্যানধারণা পরিবর্তন করেছে। মোটিভেশন, কাউন্সেলিং, রিহ্যাবিলিটেশন ও ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে তাদের কারেকশন করতে হবে। আগে ছিল পিটিয়ে সোজা করতে হবে। এই ধ্যানধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ জেলের নাম পরিবর্তনের পাশাপাশি আইন পরিবর্তনে কাজ করছি। এটা যখন সাকসেসফুলি করতে পারব, তখন এটির আলোকে অনেকগুলো প্রভিশনিং ক্রিয়েট হবে। তার মাধ্যমে হয়তোবা আমরা বন্দীদের অধিকতর সংশোধনের জায়গায় নিয়ে যেতে পারব।
দীর্ঘ মেয়াদে কারাগারকে কীভাবে একটি সংশোধনাগার বা পুনর্বাসনকেন্দ্রে রূপান্তরিত করা যায়? এ ব্যাপারে কি কোনো পরিকল্পনা আছে?
মোতাহের হোসেন: কারেকশনাল সার্ভিস অ্যাক্ট-২০২৫-এর খসড়া ইতিমধ্যে প্রস্তুত করেছি। বর্তমানে বন্দী ব্যবস্থাপনার যে বিষয়গুলো আছে, তা অতি পুরোনো। এটি ১৮৬৪ সালের জেলকোড দ্বারা পরিচালিত। এটাকে নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এখানে ফোকাসটা করা হয়েছে, সংশোধন ও সংশোধনের মাধ্যমে স্ট্রাকচার রি–এন্ট্রি টু দ্য সোসাইটি। অর্থাৎ যাতে একজন বন্দী কারাগারে ঢোকার পর তাঁকে সংশোধন করা যায়। পরবর্তী সময়ে পরিশোধিত মান হিসেবে আবার তাঁকে সোসাইটিতে এন্ট্রি করানোর ব্যবস্থা করা যায়। পাশাপাশি আমরা ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল কিছু কাজের প্রস্তাব করেছি। যেমন ওপেন জেল। যেখানে বন্দীরা কাজ করবেন। যথাযথ সম্মানী পাবেন। তাঁরা ট্রেনিং করতে পারবেন। তাঁরা প্রোডাক্টিভও হবেন। সবকিছু মিলিয়ে কারেকশনাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক নামে একটি জোনেরও প্রস্তাব দিয়েছি। এই কাজগুলো হলে বাংলাদেশ জেল প্রকৃতপক্ষে একটি সংশোধনকেন্দ্র বা সংশোধনাগার হিসেবে রূপান্তরিত হবে।
দেশের কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বন্দী থাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকি ও নিরাপত্তার সমস্যা তৈরি হয়। এ সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন কি?
মোতাহের হোসেন: আমি যখন দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলাম, তখন সারা দেশে ৬৮টি কারাগার ছিল। এখন ৭৪টি কারাগার আছে। এর মধ্যে ১৫টি কেন্দ্রীয় কারাগার। ৫৯টি জেলা কারাগার। এটি বন্দী ধারণক্ষমতা বাড়ানোর প্রাথমিক পদক্ষেপ। কিছু পুরোনো কারাগার রেডি ছিল। সেগুলো আমরা চালু করেছি। আর বৃহৎ পরিসরে দেশে ১৭টি অতি পুরোনো কারাগার আছে। এর মধ্যে চারটি রিবিল্টের কাজ চলছে। বাকি ১৩টিও ধাপে ধাপে আমরা সম্প্রসারণ ও রিবিল্ট করব। সেটি হলে হয়তো বন্দী ধারণের সক্ষমতা বাড়বে। আসলে কারাগার বানিয়ে, ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে কখনো সমস্যার সমাধান করা যাবে না। আমাদের বন্দীর সংখ্যা কমাতে হবে। আপনারা জানেন, আন্ডার ট্রায়াল প্রিজনের সংখ্যা অনেক। তিন ভাগের দুই ভাগই বিচারাধীন বন্দী। আসলে আমাদের জুডিশিয়ারিটা যদি এফিশিয়েন্ট হয়, আর আমরা যদি তাঁদের (বন্দী) প্রোডাক্টিভ মোডে নিয়ে যেতে পারি, তাহলে এ রকম ওপেন জেল কনসেপ্টে তখন হয়তোবা এই সমস্যার সমাধান আমরা পাব।
গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের সময় দুর্বৃত্তরা দেশের পাঁচটি কারাফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে আগুন দেয়। অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় অনেক বন্দী পালিয়ে যায়। কারারক্ষীরা কেন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারলেন না? এর কোনো পর্যালোচনা কি হয়েছে? ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কতটা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে?
মোতাহের হোসেন: আমরা প্রতিটি ঘটনাকেই আলাদাভাবে পর্যালোচনা করেছি। যদিও ৫ আগস্টকেন্দ্রিক ঘটনার একটির সঙ্গে আরেকটির সম্পর্ক নেই। যেমন প্রথম ঘটনা ঘটেছে নরসিংদীতে। একটি বড় ক্রাউডে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার লোক আসেন। তখন কারা ও ল এনফোর্সিং এজেন্সি কাজ করে। আবার কাশিমপুর হাই সিকিউরিটিতে বন্দীরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেন, তখন তাঁরা নিজেরা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিছু কিছু জায়গায় মব এসে ভেঙেচুরে নিয়ে যায়। কিছু বন্দী পালাতে পেরেছেন। কিছু পালাতে পারেননি। আমাদের দুটি কারাগার—জামালপুর ও শেরপুরে পুরোটা জ্বালিয়ে দিয়েছে। বাকিগুলো বিভিন্ন রকম। আমরা প্রতিটি ঘটনাকে আসলে আলাদাভাবে পর্যালোচনা করে বের করার চেষ্টা করেছি। ঘটনাগুলো কেন ঘটেছে। এখানে আমাদের নিজস্ব কিছু ফাইন্ডিং আছে। আমাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল দুর্বলতা আছে। যেটি হচ্ছে এ রকম টাইপের মবের জন্য ইনফ্রাস্ট্রাকচারগুলো বানানো হয়নি। এটির কারণ সাবকন্টিনেন্টে আসলে এ রকম ঘটনা আগে ঘটেনি। সেই জায়গায় আমাদের কিছু কিছু রিকমেন্ডেশন আছে। যেটি আমরা ফিউচার প্রজেক্টগুলো ও নতুন এক্সিস্টিংগুলোতে ইমপ্লিমেন্ট করছি। আমি বলব, আমাদের নিজস্ব রক্ষী বা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্বলতা আমরা পেয়েছি। দে আর নট এফিশিয়েন্ট। যে কারণে তাঁদের কর্মদক্ষতা নিয়ে আমরা একটি ট্রেনিং মডিউল ডেভেলপ করেছি। তাঁরা এখন নিয়মিত প্রতিটি স্তরে ট্রেনিংয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
আরেকটি সিরিয়াস বিষয় আমরা আইডেনটিফাই করেছি। বন্দী ব্যবস্থাপনায় অনেক অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা ছিল। যে কারণে বন্দী বিদ্রোহের মতো ঘটনা ঘটেছে। আমরা সেগুলোকে আইডেন্টিফাই করে তাতে একটি স্বচ্ছতা নিয়ে আসতে পারি। বাইরের আক্রমণ প্রতিহত করার সক্ষমতা আমাদের নেই। সব সময় ল এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির ওপর ডিপেন্ড করি। ৫ আগস্ট আমরা তাদের সাপোর্ট পাইনি। তবে মিলিটারির সাপোর্ট পাওয়ায় অন্য কারাগারগুলো রক্ষা পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা আমাদের সক্ষমতাকে একটু বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি।
কারাগারে মাদক সরবরাহ ও সেবনের সঙ্গে কারারক্ষীদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অতীতে বহুবার উঠেছে। এটা প্রতিরোধে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? গত এক বছরে এমন ঘটনায় কতজনের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
মোতাহের হোসেন: কারাগারে প্রচুর মাদকসংক্রান্ত মামলার আসামি ও মাদকগ্রহণকারী অনেক আছে। এখানে এনভায়রনমেন্টটা এ রকম যে, একটা প্রবণতা আছে। এবং অভিযোগটা সত্য। কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সহযোগিতা করেন, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। যে কারণে আমাদের নীতি হচ্ছে জিরো টলারেন্স। আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি, মাদকসংক্রান্ত বিষয়ে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা পেলে তাঁরা ডিপার্টমেন্টে থাকবেন না। গত বছর প্রায় ২৯ জন কারারক্ষীকে মাদকসেবন অথবা বহনে সহযোগিতার জন্য চাকরিচ্যুত থেকে ফৌজদারি মামলা পর্যন্ত দিয়েছি। আমাদের কারারক্ষীদের পুলিশের কাছে হ্যান্ডওভার করেছি। আমরা আশা করছি, এর মাধ্যমে একটি সুফল পাওয়া যাবে। কারণ. তাঁরা সচেতন হবেন যে এ রকম করলে পার পাওয়া যাবে না। একই সঙ্গে আমরা বিশেষ তল্লাশি ও অভিযান অব্যাহত রেখেছি। কারাগারের ভেতরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহায়তায় কাউন্সেলিং করছি। বন্দীদের যাতে এই প্রবণতা দূর করা যায়। সেপ্টেম্বরকে মাদকবিরোধী মাস হিসেবে ধরে সব কারাগারে মাদকবিরোধী অভিযান চলেছে। কাউন্সেলিং ও মোটিভেশনের পাশাপাশি সার্চ এবং কারও কাছে মাদক পাওয়া গেলে তাঁকে বিচারের আওতায় আনার ব্যবস্থা আমরা করছি। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে আমরা একটি ভালো ফল দেখতে পাব। আরেকটু বলে রাখি, এখন কারা অধিদপ্তর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডোপ টেস্ট করে। ধরা পড়লে ব্যবস্থা নিই।
বর্তমানে কারাগারগুলোর ভেতরে নিরাপত্তাব্যবস্থা আসলে কতটা কার্যকর? বিশেষ করে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কীভাবে ভেতর থেকে ফোন ব্যবহার করে বাইরের অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে? এমন অভিযোগও পুরোনো।
মোতাহের হোসেন: এটি আসলে এমন একটি অভিযোগ, অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আমাদের প্রচেষ্টা হলো, অবৈধ মুঠোফোন কীভাবে ইরাডিকেট (সমূলে উৎপাটন) করা যায়। এটি এমন একটি সমস্যা যে এত ছোট ছোট মুঠোফোন, ম্যানুয়াল সার্চ অথবা কারা কর্মকর্তারা যদি সঠিকভাবে না চলেন, তাহলে এটি বন্ধ করা খুব মুশকিল। আমরা তল্লাশি জোরদার করেছি। গত এক বছরে রাতের বেলায় ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে এক হাজারের ওপর অভিযান পরিচালনা করেছি। ইনিশিয়ালি অনেক মুঠোফোন আমরা পেয়েছি। আস্তে আস্তে এটি কমে আসছে। এখন দু-চারটি আইসোলেটেড ইনসিডেন্ট আছে। যারা টপ টেরর অথবা আলোচিত অথবা সেনসিটিভ টাইপের বন্দী আছেন, ওই সব জোনে এখন ফ্রিকোয়েন্সি জ্যামার ব্যবহার করছি। অনেকেই বলবেন যে সুব্রত বাইন কথা বলেছেন। আমি বলেছি, এভিডেন্স দেন। তখন আর কিন্তু দিতে পারেন না। তবে ওই রকম দু-চারটি ঘটনা যে ঘটেনি, তা নয়। আমরা আইডেনটিফাই করেছি। এমনকি আমাদের শ্রেণিপ্রাপ্ত বন্দীদেরও কিন্তু আমরা পানিশ করেছি। এ জন্য ডিভিশন ক্যানসেল করে দিয়েছি।
সম্প্রতি কিশোরগঞ্জ কারাগারে থাকা আলোচিত এনবিআরের (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) সাবেক সদস্য মতিউর রহমানকে পরিবারের সঙ্গে গোপনে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়ার ঘটনায় ১১ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কারাগার থেকে আদালতে আনা-নেওয়ার পথে অর্থের বিনিময়ে প্রভাবশালী বন্দীদের এ রকম সুযোগ করে দেওয়া হয়, এ অভিযোগও পুরোনো। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে কি বাড়তি ব্যবস্থা নেবেন?
মোতাহের হোসেন: এটির রেসপন্সিবিলিটি পুলিশের। আপনারা জানেন যে কারাগার থেকে বন্দীকে আমরা পুলিশের কাছে হ্যান্ডওভার করি। আদালত ঘুরে এসে তারা আবার আমাদের কাছে রিটার্ন করে। তাই এই মাঝপথে এলে আমাদের কোনো রিপ্রেজেন্টেশন থাকে না। এনবিআর কর্মকর্তার এ তথ্য কিন্তু আমি প্রথমে পুলিশকে দিয়েছি। পুলিশ সে অনুসারেই ব্যবস্থা নিয়েছে। যখনই আমাদের নজরে আসছে, আমাদের গোয়েন্দা ইউনিট সারভেইল (নজরদারি) করে। তারপর যদি প্রমাণ পায়, আমরা পুলিশকে বলি। এটা আসলে একটি পুরোনো সমস্যা। এমনকি গারদে এসে, অর্থাৎ কোর্টে এসে বন্দী মাদকও নিয়ে যান। শুধু অবৈধ দেখা-সাক্ষাৎ তা নয়, অনেক সময় দেখা যায়, এখান থেকে মাদক নিয়ে চলে যান। এটির জন্য আমরা কিছু আইনি পরিবর্তনের কথা বলছি। আমরা প্রপোজ করছি, জেল কর্তৃপক্ষের রিপ্রেজেন্টেশন থাকবে এই মুভগুলোতে। তাহলে হয়তো আমরা আমাদের সাইড থেকে কন্ট্রোল করতে পারব।
দীর্ঘদিন কারাবন্দী থেকেও সন্তানের বাবা হয়েছেন, এমন উদাহরণ নিকট অতীতে ছিল। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তো লক্ষ্মীপুরে এক সন্ত্রাসী কারাগার থেকে বিয়ে, বাসররাত পর্যন্ত করেছেন। গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা এখনো কি আছে?
মোতাহের হোসেন: আমি বিশ্বাস করি, এখন এ রকম ঘটনা পাবেন না। উই আর কোশাস। যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে, এ জন্য কিন্তু আমরা কিছু টেকনোলজির হেল্প নেওয়ার চিন্তা করছি। আমরা কিছু ইনোভেশন ব্যবস্থা করেছি। এই মুহূর্তে এক জেল থেকে প্রিজন ভ্যানে বন্দী অন্য জেলে নেওয়ার সময় আমরা সাধারণত সিসিটিভি সার্ভিল্যান্স রেখেছি। এমনকি মুভ অবস্থায় আমরা মনিটর করতে পারি। জিপিএস ট্র্যাকিং এবং আরএফ আইডি কন্ট্রোল মেজারস এখানেই আছে, যেটি বন্দীদের হাতে থাকবে। সো ইট গিভ আস সিগন্যাল। আলটিমেটলি আমাদের তার মুভমেন্ট ট্র্যাক করতে সহায়তা করবে। অদূর ভবিষ্যতে আমরা বিশ্বাস করি, এ রকম অভিযোগ অন্তত পাওয়া যাবে না। ইট উইল বি আন্ডার মনিটর।
জামিনে মুক্তি পাওয়া আসামিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একজন ব্যক্তি কারাগারে যাওয়ার পর থেকে পদে পদে টাকা না দিলে ভেতরে সব অধিকার পান না। লোকমুখে এমন প্রবাদও আছে, টাকা খরচ করলে কারাগারে বাঘের চোখও মেলে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
মোতাহের হোসেন: আমি অনুরোধ করব, আপনারা একটু সার্ভে করেন অথবা তথ্য কালেক্ট করেন। এ রকম প্রবণতা বর্তমানে আই ডু নট বিলিভ দ্যাট এক্সিস্ট করে। তারপরও একদম যে ১০০ শতাংশ ইরেডিকেট করার দিকে আছে, তা নয়; কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে অন্তত ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ আমরা রিমুভ করতে পেরেছি। কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে এ রকম কোনো অভিযোগের যদি প্রমাণ পাই, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমরা ‘উইথইন টোয়েন্টিফোর আওয়ারস, ডোন্ট টেক টাইম’। তাই এ ক্ষেত্রে প্রচুর ব্যবস্থা নিয়েছি আমরা। এ প্রবণতা একদম জিরো হয়নি; কিন্তু প্রবণতা অনেক কমে এসেছে।
কারাগারে বন্দীদের ব্যক্তিগতভাবে রান্না করার কোনো ব্যবস্থা আছে কি? কারাগারের ভেতরে নাকি চাল, ডাল, সবজি, চা–পাতা, চিনি ইত্যাদি বিক্রি করে থাকে কর্তৃপক্ষ? যদি রান্না করার বা চুলা জ্বালানোর কোনো ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে এসব বিক্রি করা হয় কেন?
মোতাহের হোসেন: প্রথমত চাল-ডাল এগুলো বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের কিছু সুনির্দিষ্ট আইটেম বিক্রি হয়। তার মধ্যে রয়েছে আলু, পেঁয়াজ ও শর্ষের তেল। তাঁরা আলুভর্তা বানান। আমার পর্যবেক্ষণে যেটি দেখেছি, তারা চানাচুর দিয়ে মুড়িভর্তা করে খান। আর পেঁয়াজ তাঁরা ভাতের সঙ্গে খান। এটি ছাড়া আসলে চাল-ডাল এগুলো রান্না করার ব্যবস্থা নেই। চুলার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই আসলে তথ্যটা ঠিক নয়। অতীতে কী হয়েছে, আসলে আমি কমেন্ট করতে পারব না। কারণ, আমি এসে বর্তমানে যে সিস্টেম দেখছি, এটাতে কোনো সুযোগ নেই। যদি কারও যদি কিছু খাওয়ার প্রয়োজন হয়, আমাদের অথরাইজড ক্যানটিন আছে।
কারাগারের ভেতরে দুর্নীতি ও অবৈধ লেনদেনের ঘটনায় গত এক বছরে কী কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? কতজনের বিরুদ্ধে নিয়েছেন? এ ধরনের ঘটনা বন্ধে দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
মোতাহের হোসেন: আমরা আসলে অত্যন্ত কঠোর এ বিষয়ে। আমি আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি, আমরা কোনো রকমের অনিয়ম-দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছি না। ১২ জনকে আমরা বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছি। এর মধ্যে সিনিয়র সুপার থেকে শুরু করে বিভিন্ন র্যাঙ্কের নিচ পর্যন্ত আছে। ৩৪ জনকে চাকরিচ্যুত করেছি। ৪৪০ জনের জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছি। ১৭২ জনকে বিভাগের বাইরে বদলি করেছি। বিভাগের বাইরে বদলি করা কিন্তু কারও কারও জন্য অত্যন্ত টাফ পানিশমেন্ট। তাঁদের খরচ থেকে শুরু করে জীবনযাপন খুব কঠিন হয়ে যায়। আবার যাঁরা কঠোর ও ভালো কাজ করছেন, তাদের পুরস্কৃত করছি। আশা করছি, এর মাধ্যমে হয়তো যে অভিযোগগুলো আপনারা ট্র্যাডিশনাল পেয়ে আসছেন কারাগার সম্পর্কে, সেটি থেকে আমরা অনেকটা বের হয়ে আসতে পারব।
আপনাকে ধন্যবাদ।
মোতাহের হোসেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।