বাংলাদেশে সাংবাদিকদের আইনি হয়রানি বন্ধ করুন

বাংলাদেশে সাংবাদিকদের আইনের মাধ্যমে হয়রানি করার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তিনটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। সেই সঙ্গে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান ও নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে করা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে বলেছে তারা।

ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড, আর্টিকেল নাইনটিন ও আইএফইএক্স ১৩ এপ্রিল এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানিয়েছে। বিবৃতিটি ফ্রি প্রেস আনলিমিটেডের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ক্রমবর্ধমান আইনি হয়রানি, গণমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর বৃহত্তর পরিসরে দমনাভিযানে আইনের অপব্যবহারের ঘটনায় তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সম্প্রতি প্রথম আলোর সম্পাদক ও পত্রিকাটির একজন নিজস্ব প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনা এই প্রবণতার উদাহরণ।

বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশের অন্যতম বহুল প্রচারিত নিরপেক্ষ সংবাদ প্রতিষ্ঠান প্রথম আলোর কয়েকজন সাংবাদিক নানা ধরনের আইনি হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন। গত ২৯ মার্চ সম্পাদক মতিউর রহমান ও নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (ডিএসএ) মামলা করা হয়েছে।

অনলাইনে স্বাধীন মতপ্রকাশ ঠেকাতেই এ আইন করা হয়েছে, এমন কথা প্রচলিত। মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর পক্ষে পুলিশ এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য দিতে পারেনি। কিন্তু উচ্চ আদালত তাঁকে মেট্রোপলিটন সেশন জজ আদালতে ছয় সপ্তাহের মধ্যে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করতে বলেছেন।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ক্রমবর্ধমান আইনি হয়রানি, গণমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর বৃহত্তর পরিসরে দমনাভিযানে আইনের অপব্যবহারের ঘটনায় তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সম্প্রতি প্রথম আলোর সম্পাদক ও পত্রিকাটির একজন নিজস্ব প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার ঘটনা এই প্রবণতার উদাহরণ।

এ আইনি হয়রানি শুরু হয়েছে খুবই ভীতিকর এক প্রেক্ষাপটে। যার শিকার ২০২১ সালের শুরু থেকে হয়ে আসছেন প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। তাঁর বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেক্টস আইন ও দণ্ডবিধির আওতায় মামলা করা হয়। এ ঘটনায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বেশ কয়েকটি সংগঠন তাঁর সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।  

আরও পড়ুন
ফ্রি প্রেস আনলিমিটেডের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যৌথ বিবৃতির একাংশের স্ক্রিনশট

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এভাবে ডিএসএকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা ও প্রথম আলোর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে উল্লিখিত দৃষ্টান্তমূলক মামলাগুলো একটি বৃহত্তর প্রবণতার চিত্রই তুলে ধরে। যেখানে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ভয় দেখাতে ও থামিয়ে দিতে আইনের ক্রমবর্ধমান অপব্যবহার করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর বৃহত্তর দমনাভিযানের সঙ্গে এটির মিল রয়েছে। ইতিমধ্যে দৈনিক দিনকালের (বিরোধীদলীয়) মতো সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর অনলাইন ও ছাপা পত্রিকা—উভয় ক্ষেত্রে সাংবাদিকেরা বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হচ্ছেন।    

সংগঠন তিনটি তাদের বিবৃতিতে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কাছে সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।

আরও পড়ুন

এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে সম্পাদক মতিউর রহমান ও নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে করা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার; রোজিনা ইসলামের সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন; সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো আইনের অপব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা; এ আইনকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা, বিশেষত সেখানে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ আইনজীবীদের উচ্চপর্যায়ের প্যানেলকে যুক্ত করা এবং এই স্বাধীন বিশেষজ্ঞ প্যানেলকে বিশেষভাবে ডিজিটাল আইন নিয়ে আইনি সুপারিশ করার অনুরোধ জানানো; সাংবাদিকদের হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করা, তা আইনি, মানসিক বা শারীরিক যা–ই হোক; বিশেষ করে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে গুরুত্বপূর্ণ এ সময়ে কোনো রকমের ভয় ও সহিংসতা ছাড়াই গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের কাজ চালিয়ে যেতে দেওয়া এবং জনগণের প্রতি তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া।

আরও পড়ুন