প্রথম আলোর কর্মীদের হয়রানি বন্ধের আহ্বান সিপিজের

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান (বাঁয়ে) ও নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান
ফাইল ছবি

সাংবাদিকতার কারণে প্রথম আলোর কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক সব তদন্ত বন্ধে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। একই সঙ্গে সিপিজে প্রথম আলোর কর্মীদের অবাধে তাঁদের পেশাগত কাজ করতে দিতে আহ্বান জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক সংগঠনটি গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানায়। সিপিজের ওয়েবসাইটে বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২৬ মার্চ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ‘মিথ্যা খবর’ ছড়ানোর অভিযোগে হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গত বুধবার ভোরে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ।

বুধবার রাতে ঢাকায় (রমনা থানায়) প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান, এক অজ্ঞাত ক্যামেরাম্যানসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একই আইনে আরেকটি মামলার তদন্ত শুরু করে কর্তৃপক্ষ।

একই দিন চট্টগ্রামের আইনজীবী মিঠুন বিশ্বাস প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ ও প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে একটি আইনি নোটিশ পাঠান। এতে তিনি ২৬ মার্চের প্রতিবেদনের জন্য এই তিনজনকে সাত দিনের মধ্যে নিঃশর্তে ও প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান। অন্যথায় আইনি ব্যবস্থার গ্রহণ করার কথা বলেন। নোটিশটির অনুলিপি ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানতে পেরেছে সিপিজে।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল সকালে শামসুজ্জামানকে ঢাকার একটি আদালতে হাজির করা হয়। তাঁর জামিন নামঞ্জুর করা হয়।

আরও পড়ুন

সিপিজের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর কার্লোস মার্টিনেজ দে লা সেরনা বলেন, প্রথম আলোর কর্মীদের বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের হয়রানি এবং কঠোর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি গণমাধ্যমের সমালোচনামূলক প্রতিবেদন বন্ধের সুস্পষ্ট প্রচেষ্টা। কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে শামসুজ্জামানকে মুক্তি দিতে হবে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়ার অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে, যা গণমাধ্যমের ওপর ভীতিকর প্রভাব ফেলে।

প্রথম আলোর ২৬ মার্চের একটি প্রতিবেদন ফেসবুকে শেয়ার দেওয়া হয়। ফেসবুকে দেওয়া গ্রাফিক কার্ডে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে একজন প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকের একটি উদ্ধৃতির সঙ্গে একটি শিশুর ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল। গ্রাফিক কার্ডের অসংগতি দ্রুত নজরে আসে প্রথম আলোর। পোস্টটি দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে প্রথম আলো সংশোধনীসহ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।

বুধবার রাতে ঢাকার রমনা থানায় আবদুল মালেক নামের একজন আইনজীবীর মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশি তদন্ত শুরু হয়। তিনি অভিযোগ করেন, আসামিরা ‘রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুণ্নের জন্য প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যবহার করেছেন। তাঁরা এই ভ্রান্ত চিত্র প্রদর্শন করেছেন। আবদুল মালেক ফোনে সিপিজেকে বলেন, তিনি তাঁর অভিযোগের পক্ষে আছেন। দেশের ‘স্বাধীনতার বিরুদ্ধে’ কাজের জন্য সাংবাদিকদের শাস্তি হওয়া উচিত।

মামলার প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুলিশ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের তিনটি ধারার আওতায় অভিযোগ তদন্ত করছে। এই ধারাগুলো আপত্তিকর, মিথ্যা বা হুমকিমূলক তথ্য প্রচার বা প্রকাশ; আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটায়—এমন তথ্য প্রকাশ বা প্রচার; এবং প্ররোচনার সঙ্গে সম্পর্কিত।

আরও পড়ুন

আইন অনুসারে, প্রথম দুটি অপরাধের জন্য তিন থেকে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং তিন লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। প্ররোচনার ক্ষেত্রেও একই শাস্তি হতে পারে।

আরও পড়ুন

বক্তব্য জানতে সিপিজে রমনা থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবু আনসার ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা রায় নিয়তিকে ফোন করে, বার্তা পাঠায়। কিন্তু তাঁদের কাছ থেকে কোনো উত্তর পায়নি সিপিজে।

আইনি নোটিশে আইনজীবী মিঠুন বিশ্বাসের যে ফোন নম্বর উল্লেখ রয়েছে, তাতে কল করেছিল সিপিজে। কিন্তু নম্বরটি ভুল বলে বার্তা আসে। সিপিজে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের অন্য নম্বর পায়নি।

আরও পড়ুন

গত ফেব্রুয়ারি মাসে সিপিজে সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি দিয়েছিল। এই চিঠিতে প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে বিচারিক হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছিল। তিনি ঔপনিবেশিক যুগের অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও দণ্ডবিধির অধীনে হওয়া মামলায় চলমান তদন্তের মুখোমুখি। করোনা মহামারির শুরুর দিকে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক মামলা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।