যৌথ বাহিনীর হাতে আটকের পর যুবদল নেতার মৃত্যুর ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
কুমিল্লায় যৌথ বাহিনী আটক করার পর যুবদল নেতা মো. তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর প্রতিবাদে শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ, মশালমিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। একাধিক পক্ষ আলাদা আলাদা করে এসব কর্মসূচি পালন করেছে।
‘গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট’ সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে মিছিল শুরু করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।
এরপর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিচারবহির্ভূত হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’–এর ব্যানারে আলাদা আরেকটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে (ভিসি চত্বরে) এই মানববন্ধন হয়। এর আগে সন্ধ্যায় মশাল মিছিল ও সমাবেশ করে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন।
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমাবেশে মো. তৌহিদুল ইসলামসহ সব বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান শেষ হলেও গুম-খুনের রাজত্ব শেষ হয়নি। নিরাপত্তার নামে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার মধ্য দিয়ে জনগণকে আরও বেশি অনিরাপদ করা হচ্ছে।’
বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা বলেন, ‘সেনা কর্তৃক নাগরিক হত্যার ঘটনা এ দেশে বহু পুরোনো। পাহাড়ে সেনা শাসনের মধ্য দিয়ে নিপীড়নের অনুশীলন হয়।’
গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময়েও সেনাবাহিনীর বিতর্কিত ভূমিকা আমরা ভুলিনি। যারা সেনা মদদে ক্ষমতায় এসেছে, তারা জনগণের সঙ্গে বেইমানি করেছে। এর ফলাফল হিসেবে একের পর এক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে; কিন্তু এ দেশে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বারবার বিদ্রোহ হয়েছে। আজও জনগণের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ বলেন, ‘জনগণ একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিল। পুলিশি রাষ্ট্র গঠন করা অভ্যুত্থানের চেতনাবিরোধী। অথচ আমরা দেখছি, বর্তমান সরকারের আড়ালেও যারা সরকার পরিচালনা করছে, তাদের দ্বারা এই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও খুনের সংস্কৃতি পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে।’
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমাবেশে অবিলম্বে তৌহিদুল ইসলাম হত্যার সুষ্ঠু বিচার, সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রত্যাহার এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানানো হয়। গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক রাফিকুজ্জামান ফরিদ সভাপতিত্ব এবং সহ-সমন্বয়ক জাবির আহমদ জুবেল অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
এর আগে তৌহিদুল ইসলাম হত্যার প্রতিবাদে মশালমিছিল করে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। সন্ধ্যায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক সমাবেশে ছাত্রসংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেন, ‘গুম-খুন-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে হাসিনা তাঁর ফ্যাসিস্ট শাসন জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষ সেই ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াই করেছেন, যার ধারাবাহিকতায় জুলাইয়ে অভ্যুত্থানের মধ্যে হাজারো প্রাণের বিনিময়ে হাসিনার পতন হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এমন একটি দেশের স্বপ্ন দেখেন, যেখানে সেই ফ্যাসিবাদী শাসনের কোনো চিহ্ন থাকবে না, গুম-খুন-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড থাকবে না।’
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ভিসি চত্বরে একটি মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’র ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে এই হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের দাবি জানানো হয়। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ ও প্রিতম সোহাগসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী বক্তব্য দেন।