কোটা বাতিলের পর বিসিএসে পিছিয়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রার্থীরা

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন
ফাইল ছবি

কোটাপদ্ধতি বাতিল হওয়ার আগে ৩৮তম বিসিএসে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ২১ জন সুপারিশ পেয়ে সরকারি চাকরি পান। তাঁদের মধ্যে প্রশাসনে ১০ জন। অন্যরা পররাষ্ট্র, পুলিশসহ সাতটি ক্যাডারে। কোটা বাতিল হওয়ার পর এখন পর্যন্ত দুটি সাধারণ বিসিএসের (৪০ ও ৪১তম) ফল প্রকাশিত হয়েছে। দুটিতেই ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর একজন করে সুপারিশ পেয়েছেন। তাঁদের একজন ৪০তম বিসিএসে নিরীক্ষায়, অন্যজন ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতিসহ নানা নিরিখে এখনো অনেক পিছিয়ে। তাঁরা ঐতিহাসিকভাবে বঞ্চনার শিকার। সংবিধানে এসব জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে সুবিধা দেওয়ার কথা বলা আছে। সরকারি চাকরিতে কোটা পাওয়া তাঁদের অধিকার।
—সঞ্জীব দ্রং, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক

সরকারি ক্যাডারে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোটা বাতিলের পর ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর চাকরিপ্রার্থীরা পিছিয়ে পড়তে শুরু করেছেন। অথচ কোটা বাতিলের সময় সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রতিবন্ধী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটাব্যবস্থা চালু রাখার কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু তা করা হয়নি।

এ পটভূমিতে আজ বুধবার (৯ আগস্ট) বিশ্বে পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস’। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য—‘আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আদিবাসী তরুণেরাই মূল শক্তি’।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতিসহ নানা নিরিখে এখনো অনেক পিছিয়ে। তাঁরা ঐতিহাসিকভাবে বঞ্চনার শিকার। তাই সারা বিশ্বে এসব জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বিশেষ সুবিধা পান। বাংলাদেশের সংবিধানে এসব জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে সুবিধা দেওয়ার কথা বলা আছে। সরকারি চাকরিতে কোটা পাওয়া তাঁদের অধিকার। তা না হলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তরুণেরা আরও পিছিয়ে পড়বেন।’

আরও পড়ুন

দেশে ৫০টির বেশি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী আছে। এসব জাতির মানুষ ছড়িয়ে আছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম, বৃহত্তর সিলেট, উত্তরাঞ্চল ও উত্তর মধ্যাঞ্চলে। বেশির ভাগ জাতিগোষ্ঠীর মানুষ দারিদ্র্যপীড়িত, শিক্ষায় বেশ পিছিয়ে। দেশে এখন সাক্ষরতা ৭৬ শতাংশ। পার্বত্য তিন জেলার মধ্যে সাক্ষরতায় সবচেয়ে এগিয়ে রাঙামাটি—৬৮ শতাংশ; খাগড়াছড়িতে যা ৪৪ শতাংশ ও বান্দরবানে ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ।

সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) ‘এক্সট্রিম পোভার্টি: দ্য চ্যালেঞ্জেস অব ইনক্লুশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা অনুযায়ী, দেশের সবচেয়ে দরিদ্র জেলা কুড়িগ্রাম, তারপরই বান্দরবানের অবস্থান। আর দেশের সবচেয়ে দরিদ্র দুই উপজেলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও আলীকদম।

কোটা বাতিলের ঘটনায় শুরু থেকেই বিরোধিতা করে আসছিলেন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। আজ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে ১২ দফা দাবি তুলেছে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম। সেখানে সরকারি প্রথম শ্রেণিতে আগের মতো আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ করা এবং অন্যান্য চাকরিসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে কোটা বাস্তবায়নের দাবি তোলা হয়েছে।

শিক্ষাসহ নানা নিরিখে পিছিয়ে থাকা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য সরকারি ক্যাডারে ৫ শতাংশ কোটা ছিল। বিসিএসে এসব জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের আসার সংখ্যাও ক্রমে বাড়ছিল। আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা বাতিল করে সরকার।

এর আগে ৩১তম থেকে ৩৮তম বিসিএসে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ১৭৯ জন সুপারিশ পান। কোটা বাতিলের পর ৩৯তম বিসিএসে (চিকিৎসকদের জন্য বিশেষ) ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ২৪ জন সুপারিশ পেয়েছেন। পরের দুটি সাধারণ বিসিএসে সুপারিশ পেয়েছেন মাত্র দুজন।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

তবে কোটা বাতিলের ঘটনায় শুরু থেকেই বিরোধিতা করে আসছিলেন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। আজ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে ১২ দফা দাবি তুলেছে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম। সেখানে সরকারি প্রথম শ্রেণিতে আগের মতো আদিবাসী কোটা সংরক্ষণ করা এবং অন্যান্য চাকরিসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে কোটা বাস্তবায়নের দাবি তোলা হয়েছে।

এ বিষয়ে সংসদ সদস্য ও আদিবাসী-বিষয়ক সংসদীয় ককাসের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক রাশেদ খান মেনন বলেন, কোটা বাতিলের সময় প্রতিবন্ধী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা রাখার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। পরে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা হয়নি। বিষয়টি নজরের বাইরে চলে গেছে। এখন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা বিসিএসে এত কম আসছেন যে এটা তাঁদের মধ্যে হতাশা তৈরি করবে।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য সরকারি চাকরিতে কোটা রাখার কথা আমি একাধিকবার বলেছি। মন্ত্রিসভার বৈঠকেও বলেছি। এটা দরকার। কিন্তু কোথায় বিষয়টি আটকে আছে, তা বুঝতে পারছি না।
—বীর বাহাদুর উশৈসিং, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী

সরকারে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর যে মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যরা আছেন, তাঁরাও চান কোটা চালু থাক। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য সরকারি চাকরিতে কোটা রাখার কথা আমি একাধিকবার বলেছি। মন্ত্রিসভার বৈঠকেও বলেছি। এটা দরকার। কিন্তু কোথায় বিষয়টি আটকে আছে, তা বুঝতে পারছি না।’

আরও পড়ুন