বহিষ্কৃত ছাত্রনেতারা এখনো ক্যাম্পাসে, ফেরেননি নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীরা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ফাইল ছবি

শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালানোর অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) শিক্ষা কার্যক্রম ও ক্যাম্পাস থেকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার হওয়া ছাত্রলীগ নেতাদের কয়েকজন এখনো ক্যাম্পাসে ঘোরাফেরা করে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, এই নেতাদের একজন রিয়াজুল ইসলাম ওরফে জয় পুনরায় ছাত্রাবাসেও উঠেছেন। এভাবে ক্যাম্পাসে বহিষ্কৃত নেতাদের আনাগোনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া।

তবে কলেজ ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে নির্যাতনের শিকার চার ছাত্র এখনো ক্যাম্পাসে ফেরেননি। তাঁদের অভিভাবকেরা আরও কিছুদিন পরিস্থিতি দেখে সন্তানদের ক্যাম্পাসে ফেরত পাঠাতে চান। সন্তানদের নিরাপত্তার দিকটি নিশ্চিত করার জন্য তাঁরা কলেজ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন।

বহিষ্কৃত নেতাদের একজন রিয়াজুল ইসলাম ওরফে জয় পুনরায় ছাত্রাবাসেও উঠেছেন বলে জানা গেছে। এভাবে ক্যাম্পাসে বহিষ্কৃত নেতাদের আনাগোনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি চমেকের প্রধান ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে নিয়ে চার শিক্ষার্থী চতুর্থ বর্ষের সাকিব হোসেন, জাহিদ হোসেন, আবু রাইয়াত ও মোবাশ্বির হোসেনকে পেটানো হয়। এতে গুরুতর আহত হলে দুজনকে চমেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়া হয়। অপর দুজন রাইয়াত ও মোবাশ্বির বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা নেন। ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত অভিযোগে নির্যাতন করা হয়েছিল এই চারজনকে।

মারধরের ঘটনায় গত ১৬ মার্চ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত সাত ছাত্রকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়। তাঁদের মধ্যে তিন বছরের জন্য অভিজিৎ দাশ এবং দুই বছরের জন্য রিয়াজুল ইসলাম, সাজু দাশ ও সৌরভ দেবনাথকে বহিষ্কার করা হয়। আর দেড় বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয় মাহিন আহমেদ, জাকির হোসেন ও ইব্রাহিম খলিলকে।

তাদের (নির্যাতনের শিকার চার শিক্ষার্থী) অভিভাবকেরা আরও কিছুদিন সময় নিয়েছেন। কয়েক দিন পর আসবেন তাঁরা। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। দোষী শিক্ষার্থীদের শাস্তিও দিয়েছি।
—অধ্যাপক সাহেনা আক্তার, অধ্যক্ষ, চমেক

বহিষ্কারের পরও অভিজিৎ, রিয়াজুলসহ কয়েকজন ক্যাম্পাসে ঘোরাফেরা করছেন অবাধে। নিজেদের ফেসবুক পেজে ঘোরাফেরার ছবিও প্রকাশ করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একজন (রিয়াজুল) ছাত্রাবাসে এসে উঠেছেন। এটি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যরা ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় আসেন।

আরও পড়ুন

জানতে চাইলে চমেকের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাহেনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে (বহিষ্কৃতদের) আসার বিষয়ে আমরা নজরে রাখছি। এ ছাড়া তাদের কেউ ছাত্রাবাসে যদি উঠে থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে রিয়াজুলের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এদিকে, নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফেরত না আসার বিষয়ে জানতে চাইলে আবু রাইয়াতের বাবা আবু জামাল বলেন, ‘ছেলেকে দু-এক দিনের মধ্যে ক্যাম্পাসে দিয়ে আসব। এ বিষয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সাহেনা আক্তার বলেন, ‘তাদের (নির্যাতনের শিকার চার শিক্ষার্থী) অভিভাবকেরা আরও কিছুদিন সময় নিয়েছেন। কয়েক দিন পর আসবেন তাঁরা। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। দোষী শিক্ষার্থীদের শাস্তিও দিয়েছি।’

আরও পড়ুন

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছাত্রলীগের দুটি অংশ সক্রিয়। এর মধ্যে বহিষ্কৃত সাত শিক্ষার্থী নিজেদের শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী বলে পরিচয় দেন। তবে মহিবুল হাসান তাঁর কোনো পক্ষ নেই বলে দাবি করে আসছেন।

ছাত্রলীগের আরেকটি অংশ নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে এই পক্ষের জাবেদুল ইসলাম নামে এক নেতা ইশতিয়াকুর রহমান নামের এক ছাত্রকে মারধর করেন। পরে চমেক কর্তৃপক্ষ জাবেদকেও এক বছরের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম ও ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কার করে। জাবেদুলও ক্যাম্পাসে ঘোরাফেরা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে ২০২১ সালের ৩০ অক্টোবর ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারির পর চমেক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তখন মারামারিতে মহিবুলপন্থী মাহাদি জে আকিব নামের এক ছাত্র গুরুতর আহত হন। তাঁর খুলির হাড় ভেঙে গিয়েছিল। এরপর চমেক ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ওই ঘটনায় অভিজিৎসহ ৩১ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

আরও পড়ুন