স্টেশন চালান এক কর্মকর্তা ও কর্মচারী, দুর্ভোগ চরমে

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টারের কার্যালয়। স্টেশনমাস্টার খলিলুর রহমানের এক হাতে টেলিফোন। ফোনে তিনি ট্রেনের অবস্থান জেনে নিচ্ছেন। আরেক হাতে যাত্রীদের টিকিট দিচ্ছেন। ফাঁকে ফাঁকে শুনছেন যাত্রীদের অভিযোগ।
১৪ মার্চ সরেজমিনে কুলিয়ারচর রেলওয়ে স্টেশনটির এ অবস্থা দেখা যায়। স্টেশনটির মর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণির। এটির অবস্থান ভৈরব-ময়মনসিংহ রেলপথে।
স্টেশন মাস্টারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কুলিয়ারচর স্টেশনে তিনটি আন্তনগর ট্রেন ছয়বার এবং চারটি লোকাল ট্রেন আটবার যাত্রা বিরতি করে। স্টেশনটির কার্যক্রম ২৪ ঘণ্টার। দ্বিতীয় শ্রেণির স্টেশনের জন্য তিনজন স্টেশন মাস্টার, চারজন পিম্যান, দুজন পোর্টার ও দুজন বুকিং ক্লার্কের পদ রয়েছে। মূলত আট ঘণ্টা পর পালা পরিবর্তনের বিধান রাখা আছে। কিন্তু এখানে তিনজনের পরিবর্তে মাস্টার আছেন দুজন। পিম্যান আছেন দুজন। পোর্টার ও বুকিং ক্লার্কের পদগুলো শূন্য। এ কারণে টিকিট বিক্রির দায়িত্ব পালন করেন স্টেশন মাস্টার নিজেই। দুজন পিম্যান ১২ ঘণ্টা করে পালার দায়িত্ব পালন করেন। একজন পিম্যান নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি দুজন পোর্টারের দায়িত্বও পালন করে আসছেন। অর্থাৎ আট ঘণ্টা করে পরিবর্তনের কথা থাকলেও এই স্টেশনে পালার পরিবর্তন হয় ১২ ঘণ্টা পর। ফলে একটি পালা স্টেশন একজন স্টেশনমাস্টার ও একজন পিম্যান চালান। এ স্টেশনে প্রতিদিন আন্তনগর ট্রেনের ১৪০টি আসন বরাদ্দ। কিন্তু আসনবিহীন যাত্রী হয় দ্বিগুণেরও বেশি। গত ফেব্রুয়ারিতে আন্তনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয়েছে ৮ হাজার ৩২৭টি। স্টেশনটির গড় মাসিক আয় ৭ লাখ টাকা।
স্টেশন মাস্টার খলিলুর রহমান বলেন, এটা তো নিত্যদিনের ঘটনা। কষ্ট হলেও মেনে নিতে হচ্ছে। তবে সমস্যা হলো লোকবল না থাকায় যাত্রীসেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। সবচেয়ে সমস্যা হয় যদি কেউ ছুটিতে থাকেন। এ রকম পরিস্থিতিতে পুরো ২৪ ঘণ্টার দায়িত্ব পালন করতে হয় দুজনকে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, কুলিয়ারচর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরাসরি বাস যোগাযোগ না থাকায় স্থানীয় ব্যক্তিরা মূলত ট্রেনের ওপর নির্ভরশীল। তা ছাড়া কিশোরগঞ্জের হাওরবেষ্টিত উপজেলা অষ্টগ্রামের প্রবেশদ্বার এই কুলিয়ারচর। ফলে এ দুটি উপজেলার যাতায়াতে প্রধান ভরসা ট্রেন। এই স্টেশন দিয়ে প্রচুর মাছ, শুঁটকি ও চাটাই দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। এ কারণে এটিকে বাণিজ্যিক স্টেশন হিসেবে ভাবা হয়।
১৪ মার্চ গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনটির একমাত্র দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্রামাগারটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ায় তালাবদ্ধ আছে। প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের বসার আসন নেই, ছাউনি নষ্ট হয়ে গেছে। তাই বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। বৃষ্টির পানি পড়ে স্টেশন মাস্টারের কার্যালয়েও।
কথা হয় যাত্রী ইমরান হোসেনের সঙ্গে। তিনি একটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি। পেশাগত প্রয়োজনে ট্রেনে করে সপ্তাহে কয়েকবার তাঁকে কুলিয়ারচর আসতে হয়। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেও টিকিট সংগ্রহের জন্য কাউকে পাওয়া যায় না। এ নিয়ে অভিযোগ জানাবেন এমন লোকও নেই।
যাত্রীদের দুর্ভোগের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আছেন প্ল্যাটফর্মের ভেতরের দোকানি চান মিয়া। তিনি বলেন, শৌচাগার না থাকায় এখানে যাত্রীদের ভীষণ বিব্রত হতে হয়।
একাই কয়েকটি পদের দায়িত্ব পালন করার ব্যাপারে বিরক্তি প্রকাশ করলেন পিম্যান আতর আলী। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে তিনি পারিবারিক প্রয়োজনে ১৫ দিনের ছুটি নিয়েছিলেন। ছুটি মঞ্জুরও হয়। শেষে ছুটি আর ভোগ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঊর্মি বিনতে সালাম বলেন, ট্রেনের আসন বৃদ্ধি ও লোকবল বাড়ানো ছাড়া স্বাভাবিক স্টেশন পরিচালনা ও যাত্রীসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে গতকাল শনিবার রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক আরিফুজ্জামান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সমস্যাগুলোর কথা জেনেছেন। খোঁজ নিয়ে এসব সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে।