সড়কে চলে ময়লা বাছাইয়ের কাজ

সড়কের ওপর ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। সেখান থেকে বাছাই করে পলিথিনে ভরে রাখা হচ্ছে ফুটপাতে। গত বুধবার গ্রিন রোডে।  ছবি: প্রথম আলো
সড়কের ওপর ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। সেখান থেকে বাছাই করে পলিথিনে ভরে রাখা হচ্ছে ফুটপাতে। গত বুধবার গ্রিন রোডে। ছবি: প্রথম আলো

একটু পরপর পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ভ্যানে করে ময়লা এনে ফেলছেন সড়কের ওপর। কয়েকজন সেসব ময়লা বাছাই করে প্যাকেট করছেন। প্যাকেট করা শেষে তা রাখা হচ্ছে ফুটপাতে। মূল সড়কে চলা এসব কর্মকাণ্ডের কারণে সেখানে লেগে যাচ্ছে যানজট।

গত বুধবার গ্রিনরোডে দেখা গেছে এ দৃশ্য। সড়কের ঠিক উল্টো পাশে গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভাগাড় সরানোর জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে গত দেড় বছরে তাঁরা বহু আবেদন করেছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

গত বুধবার সড়কের ওই অংশে প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থান করে দেখা যায়, মূল সড়কের এক পাশের প্রায় অর্ধেক অংশজুড়ে ময়লা স্তূপ করে রাখা। সেখানে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে ভ্যানগাড়ি। সড়কের বেশির ভাগ অংশ দখল হয়ে যাওয়ায় মাঝেমধ্যে সেখানে যানজট লেগে যাচ্ছে। লোকজন নাকে–মুখে রুমাল চেপে পথ অতিক্রম করছে।

সেখানে কর্মরত পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা জানালেন, সকাল ১০টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত তাঁরা ময়লা বাছাইয়ের কাজ করেন। বিকেল চারটার দিকে ময়লার গাড়ি আসে। গাড়িতে এসব ময়লা নেওয়া হয় মাতুয়াইলে।

গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসা রোগী জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা পরিচ্ছন্নতা অভিযান’ গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পেয়েছে। অথচ ঢাকায় হাসপাতালের সামনেও ভাগাড়।’ তিনি বলেন, ময়লার দুর্গন্ধে হাসপাতালে আসা রোগীদের বিড়ম্বনা পোহাতে হয়।

গ্রিনরোড দিয়ে নিয়মিত চলাচল করা এক ব্যক্তি বলেন, ময়লার দুর্গন্ধে ওই জায়গা দিয়ে যাওয়ার সময় দম বন্ধ হয়ে আসে। এ ছাড়া সড়কের অর্ধেকজুড়ে ময়লা–আবর্জনা ফেলে রাখায় সড়কে প্রায়ই যানজট লেগে যায়। ওই জায়গায় যানজটে আটকা পড়লে বিড়ম্বনার আর শেষ থাকে না।

এদিকে ওই জায়গায় সড়কে রিকশা ও ভ্যানের গ্যারেজ করা হয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, একদিকে ময়লার ভাগাড়, অন্যদিকে রিকশা ও ভ্যানের গ্যারেজ, সব মিলিয়ে সড়কের এই অংশ দিয়ে হাঁটাচলা করা কঠিন।

গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) সোহরাব আলী প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আবেদনের পর সিটি করপোরেশন থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই জায়গা পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর হোসেন হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ওয়ার্ডে ময়লা ফেলার আর কোনো জায়গা নেই। তাই তাঁদের করারও কিছু নেই। নতুন জায়গা না পাওয়া পর্যন্ত এখান থেকে ময়লা সরানো সম্ভব নয়।

রিকশা ও ভ্যানের গ্যারেজ প্রসঙ্গে কাউন্সিলর হোসেন হায়দারের ভাষ্য, রিকশা ও ভ্যান উঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আস্তে আস্তে আবার তারা রাস্তা দখল করেছে।

এদিকে গ্রিন ভিউ কমপ্লেক্সের সামনে গ্রিনরোডে দীর্ঘদিন ধরে ময়লা ফেলে রাখা হয়। স্থানীয় লোকজন বলেন, রাস্তা দখল করে দিনভর ময়লা ওঠানামা করা হয়। বুধবার সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন জায়গা থেকে ভ্যানে করে ময়লা এনে সড়কে ফেলা হচ্ছে। চারজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ময়লা প্যাকেট করছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ময়লার কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া আছে। বিষয়টি সরেজমিনে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ওই এলাকায় একটি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) করার চিন্তাভাবনা চলছে জানিয়ে ডিএসসিসির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এসটিএস করার জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে। শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

আর রিকশা ও ভ্যানের গ্যারেজ প্রসঙ্গে খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, একাধিকবার তা উচ্ছেদ করা হয়েছে। একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না। রিকশা ও ভ্যানের গ্যারেজ উচ্ছেদে আবারও অভিযান পরিচালনা করা হবে।