সড়ক নয় যেন ধানের খেত

>

বরিশাল-ভান্ডারিয়া-পিরোজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পিরোজপুর অংশের আট কিলোমিটার অংশে কাজ চলছে। সড়কে ফেলা বালু বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে। ফলে সড়কটি কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার পিরোজপুর সদর উপজেলার ভাইজোড়া এলাকায়।  প্রথম আলো
বরিশাল-ভান্ডারিয়া-পিরোজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পিরোজপুর অংশের আট কিলোমিটার অংশে কাজ চলছে। সড়কে ফেলা বালু বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে। ফলে সড়কটি কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার পিরোজপুর সদর উপজেলার ভাইজোড়া এলাকায়। প্রথম আলো

১২টি পথে দূরপাল্লার বাসসহ অন্যান্য যানবাহন এ সড়ক দিয়ে চলাচল করে। সড়ক কাদায় ভরে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন।

ছয় মাস ধরে চলছে সড়কের নির্মাণকাজ। নির্মাণাধীন বালুঢাকা সড়ক বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত হয়ে গেছে। এমন সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি। এটি বরিশাল-ভান্ডারিয়া-পিরোজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পিরোজপুর অংশের আট কিলোমিটার সড়কের চিত্র।

গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার ভাইজোড়া এলাকা থেকে ইন্দুরকানি উপজেলার চরখালী ফেরিঘাট পর্যন্ত আট কিলোমিটার সড়কের নির্মাণকাজ চলছে। নির্মাণাধীন সড়কে বালু ফেলে রাখায় বৃষ্টির পানিতে তা কাদার সঙ্গে মিশে গেছে। এর মধ্যেই সড়কটি দিয়ে বাস, ট্রাকসহ ভারী যানবাহন এবং মোটরসাইকেল, ইজিবাইক ও রিকশা চলাচল করছে। যাত্রী নিয়ে হালকা যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। গাড়ির চাকা আটকে যাচ্ছে।

এ ছাড়া ভাইজোড়া থেকে পিরোজপুর শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কের নির্মাণকাজ এখনো শুরু হয়নি। ওই দুই কিলোমিটার সড়কে সৃষ্টি হয়েছে ছোট–বড় অসংখ্য গর্ত। কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে পুরো সড়কটি এখন বেহাল হয়ে পড়েছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বরিশাল-ভান্ডারিয়া-পিরোজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের চরখালী ফেরিঘাট থেকে পিরোজপুর সদর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়ক ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ চলছে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। এ বছরের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা। সাব–কন্ট্রাক্টরিতে এই সড়কের কাজ করছেন স্থানীয় ঠিকাদার মো. খোকন ও আবু হানিফ।

স্থানীয় লোকজন বলেন, ঠিকাদার ছয় মাস আগে কাজ শুরু করেছে। এখনো কাজ শেষ হয়নি। এদিকে ঠিকাদার সড়কে পাথর কম দিয়েছেন। ফলে বালু ভিজে কাদার সঙ্গে মিশে যাওয়ায় সড়কের অবস্থা আরও বেহাল হয়েছে।

ঠিকাদার মো. খোকন বলেন, ‘পাথর ও বালু পরিমাণ মতো দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টিতে সড়কটি দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করায় বালু দেবে গিয়ে সড়কটি কর্দমাক্ত হয়ে গেছে। দ্রুত সড়কটির কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।’

কয়েকজন বাসচালক বলেন, সড়কটি দিয়ে পিরোজপুর, ভান্ডারিয়া, ইন্দুরকানি, মঠবাড়িয়া, পাথরঘাটা, রাজাপুর, কাঁঠালিয়া, ঝালকাঠি, বরিশাল, বাগেরহাট, খুলনা ও ঢাকার পথে দূরপাল্লার বাসসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে।

ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের চালক মো. মাসুম বলেন, ছয় মাস ধরে সড়কের নির্মাণকাজ চলছে। ঠিকাদার পাথর কম ব্যবহার করে বালু ফেলে রাখেন। বৃষ্টিতে বালু দেবে সড়কে গর্ত হয়ে যায়। যানবাহনের চাকা আটকে যাচ্ছে। যন্ত্রাংশ ভেঙে ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ছে।

পথচারী হাবিবুর রহমান বলেন, চরখালী ফেরিঘাট থেকে পিরোজপুর শহর পর্যন্ত ইজিবাইকের ভাড়া ২৫ টাকা। সড়ক বেহাল হয়ে পড়ায় এখন ৬০ টাকা ভাড়া নিয়েছেন ইজিবাইকচালক।

ইজিবাইকচালক সোহাগ হাওলাদার বলেন, সড়কে গাড়ির চাকা আটকে যাচ্ছে। খানাখন্দে গাড়ি চালাতে কষ্ট হচ্ছে। গাড়ির ব্যাটারির চার্জ দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে যাত্রীদের কাছে ভাড়া বেশি নিতে হচ্ছে।

স্থানীয় লোকজন ও পথচারীরা বলেন, গত সোমবার থেকে বৃষ্টিপাতের কারণে সড়ক কর্দমাক্ত হয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজন দুর্ভোগ এড়াতে চরখালী ফেরিঘাটের টগরা এলাকার ওয়াবদা বাজার সড়ক হয়ে প্রায় চার কিলোমিটার পথ ঘুরে বিকল্প পথে যাতায়াত করছেন। কিন্তু ওই সড়কটিও বেহাল।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের পিরোজপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ মাহামুদ বলেন, তিনি সড়কটি পরিদর্শন করে ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ শেষ করতে বলেছেন।