‘বন্ধ হওয়ার’ পথে আগারগাঁওয়ের প্রবীণ হিতৈষী সংঘ

আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানছবি: সংগৃহীত

দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অনিয়ম ও অভ্যন্তরীণ বিবাদ–বিশৃঙ্খলায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান (বাইগাম) ডুবতে বসেছে। প্রতিষ্ঠানটির ১১৭ জন কর্মকর্তা–কর্মচারী বেতন পাচ্ছেন না এক বছর ধরে। এ অবস্থায় গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে আধঘণ্টা করে কর্মবিরতি ও রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন কর্মীরা।

গত বছরের ২৮ মার্চ সরকার গঠিত চার সদস্যের একটি কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনেও সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম ও ভগ্নদশার কথা উঠে এসেছিল। সে সময় স্বজনপ্রীতিসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ, বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি ও এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের সত্যতা পেয়েছিল তদন্ত কমিটি।

প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হতো প্রবীণ সদস্যদের নিয়ে গঠিত নির্বাচিত কমিটির মাধ্যমে। অনিয়মের অভিযোগে গত বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা শাখার পরিচালক মো. মোকতার হোসেনকে (যুগ্ম সচিব) প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় অধিদপ্তর। আর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রবীণ সদস্যদের নিয়ে গঠিত কমিটি বাতিল করে স্থগিত করা হয় নির্বাচন।

প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত ব্যক্তিদের কয়েকজন বলছেন, যখন যে নির্বাচিত কমিটি এসেছে, তারাই কর্মী নিয়োগ, পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনিয়ম–দুর্নীতি করেছে। কমিটির দুর্নীতিবাজ সদস্যদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মীও হাত মিলিয়েছেন। অর্থাৎ দুর্নীতি–অনিয়ম চলছে ধারাবাহিকভাবে।

প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় কার্যনির্বাহী কমিটির প্রথা বিলুপ্তি করে সমাজসেবা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ‘বঙ্গবন্ধু প্রবীণ কমপ্লেক্স’ তৈরি করার দাবিতে কর্মকর্তা–কর্মচারীরা এখন আন্দোলনে নেমেছেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে তাঁরা গত ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দিয়েছেন।

বিভিন্ন নির্বাচিত কমিটি ধারাবাহিকভাবে দুর্নীতি করেছে। অথচ এসব দুর্নীতির দায় প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নিতে হচ্ছে। কর্মীরা যখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন, তখন এই কর্মীদের দায় কেউ নিতে চাচ্ছে না।
—মো. মহসীন কবির, বাইগামের উপপরিচালক (প্রশাসন)

কর্মীরা জানালেন, এখন পর্যন্ত আন্দোলনের অগ্রগতি, গত ২০ মার্চ সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি প্রতিষ্ঠানটিতে এসে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা থেকে খোঁজখবর নিয়ে গেছেন।

জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা ২০১৩ অনুযায়ী ৬০ বছর বা এর বেশি বয়সী ব্যক্তিরা প্রবীণ। তাঁদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এ কে এম আবদুল ওয়াহেদ রাজধানীর ধানমন্ডিতে তাঁর বাসভবনে ১৯৬০ সালে বাইগাম গড়ে তোলেন। বর্তমানে আগারগাঁওয়ে প্রবীণ ভবনে ৫০ শয্যার প্রবীণ হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট অব জেরিয়েট্রিক মেডিসিন (আইজিএম) এবং পাশে একটি ভবনে ৫০ শয্যার প্রবীণ নিবাস রয়েছে। নিবাসে বাসিন্দা আছেন ৩৬ জন। নিবাসটি ভর্তুকি দিয়ে চালাতে হচ্ছে।

বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম ২০২৩-এর প্রাথমিক ফলাফল বলছে, ২০২৩ সালে দেশে ৬৫ বছরের বেশি বয়সের জনগোষ্ঠী ছিল মোট জনসংখ্যার ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ; যা ২০১৯ সালে ছিল ৫ দশমিক ২৮।

ব্যুরোর জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৫৩ লাখ ২৬ হাজার। তাঁরা মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ।

বাইগামে কর্মরতরা বলছেন, প্রবীণদের কল্যাণে কাজ করা প্রতিষ্ঠানটি এখন বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে দেশে প্রবীণদের চিকিৎসাসহ অন্যান্য সেবা পাওয়া আরও দুরূহ হয়ে পড়বে। প্রতিষ্ঠানটি জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় ৯২টি শাখার মাধ্যমে প্রবীণদের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনিয়মের অভিযোগ থাকায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাইগামের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের থোক বরাদ্দ ৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা ছাড় করা হয়নি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বরাদ্দ কমিয়ে ৪ কোটি টাকা করা হলেও তা–ও ছাড় করা হয়নি। গত অর্থবছরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজকল্যাণ পরিষদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। চলতি অর্থবছরে এ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।

এদিকে হাসপাতালসহ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আয়ের খাতও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। সরকারি বরাদ্দ ও বেতন বন্ধ থাকায় কর্মীদের অনেকের বাড়িতে রান্না প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এখন তাঁরা পরিবার–পরিজন নিয়ে ঈদ উদ্‌যাপনের আশা বাদ দিয়েছেন। কর্মীদের এ অবস্থা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

আগে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রবীণ নিবাসে থাকা নিবাসীদের ইফতার ও ঈদের দিন ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা হতো। এবার নিবাসীরা ইফতার করছেন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়। ঈদের দিনও ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা সম্ভব না হতে পারে বলে জানা গেছে।

কর্মীরা বলছেন, সরকারি এক একর জমিতে সরকারের তৈরি করে দেওয়া স্থাপনায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চলছে। কিন্তু বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি না বেসরকারি, সে উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। কর্মীদের দেখভাল করা কিংবা প্রতিষ্ঠানটিতে হওয়া অনিয়মের দায় কেউ নিচ্ছে না।

অনিয়ম ও দুর্নীতির কিছু চিত্র

প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়ম নিয়ে ২০২৩ সালের ২৯ মে প্রথম আলোতে প্রবীণ হিতৈষী সংঘে ‘তুঘলকি কাণ্ড’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে ‘তুঘলকি কাণ্ড’ চলছে বলে প্রথম আলোর কাছে মন্তব্য করেছিলেন বাইগামের প্রশাসক মো. মোকতার হোসেন। তিনি তখনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মরতদের অনেকেই চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখাই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির ১ হাজার কেভি সাবস্টেশন (ট্রান্সফরমার) স্থাপনের দরপত্র প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি, প্রবীণ হাসপাতালের জন্য কিডনি ডায়ালাইসিস যন্ত্র কেনায় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ না দেওয়া, নিয়োগের আগে জনবলের সঠিক চাহিদা নিরূপণ না করা, ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালের প্রবীণ বার্তা প্রকাশের ক্ষেত্রে ভ্যাট ও ট্যাক্সের চালানের টাকা নির্ধারিত খাতে জমা না দেওয়া, ২০১৫ সালে লটারি দুর্নীতি, প্রতিষ্ঠানের তিনটি গাড়ির ব্যবহার, দোকান ভাড়াসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছিল তদন্ত কমিটি।

প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত ব্যক্তিদের কয়েকজন বলছেন, যখন যে নির্বাচিত কমিটি এসেছে, তারাই কর্মী নিয়োগ, পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি করেছে। কমিটির দুর্নীতিবাজ সদস্যদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মীও হাত মিলিয়েছেন। অর্থাৎ দুর্নীতি-অনিয়ম চলছে ধারাবাহিকভাবে।

তদন্তে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে কার্যনির্বাহী কমিটির অনুমোদন ও জনবলকাঠামোবহির্ভূত ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছে। নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়সের শর্ত মানা হয়নি। ৪৩ লাখ টাকায় প্রবীণ নিবাসীদের বনভোজন আয়োজনেরও সত্যতা পায় তদন্ত কমিটি।

বনভোজনসংশ্লিষ্ট নথিতে উল্লেখ ছিল, বনভোজনে গিয়ে একজন প্রবীণ ব্যক্তি দুপুরে আধা কেজি করে খাসির মাংস খেয়েছেন। সঙ্গে ছিল আরও আধা কেজি করে মুরগির মাংস। ছিল দইসহ অন্যান্য খাবার। এ নিয়ে তখন আপত্তি তুলেছিলেন বনভোজনে অংশ নেওয়া প্রবীণদের অনেকে।

আরও পড়ুন

কর্মকর্তা–কর্মচারীদের দাবি

বাইগামের কর্মীরা ৫০ আসনের পরিবর্তে ২০০ আসনের প্রবীণ নিবাস তৈরির দাবি তুলেছেন; যেখানে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ প্রবীণেরা থাকার সুযোগ পাবেন। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, যাঁদের বয়স ৬০ বছর এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ, শুধু তাঁরাই এখানে থাকতে পারবেন।

৮০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য কেয়ার গিভারদের মাধ্যমে ‘লং টার্ম কেয়ার সেন্টার’ তৈরি, প্রবীণদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার, অ্যান্ড লাইফ (মৃত্যুপথ যাত্রী) কেয়ার সেন্টার ও গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার কথাও বলছেন কর্মীরা। প্রবীণদের সামাজিক নিরাপত্তাকেন্দ্র স্থাপন করা ও প্রতিষ্ঠানটি থেকে সরকারি হটলাইন নম্বর চালু এবং সামাজিক সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার কথাও তাঁরা বলছেন।

এ ছাড়া দাবি তোলা হচ্ছে প্রবীণদের জন্য স্বল্পমূল্যে বিশেষায়িত ফিজিওথেরাপি ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু, প্রবীণবান্ধব সেবাকর্মী (জেরিয়েট্রিক কেয়ার গিভার) তৈরি করাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে ‘বঙ্গবন্ধু প্রবীণ কমপ্লেক্স’ নির্মাণের।

আরও পড়ুন

জানতে চাইলে বাইগামের উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. মহসীন কবির প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য ৪ কোটি ১০ লাখ টাকার লটারি ফান্ড, ৮৮ লাখ টাকার মেম্বার সাবস্ক্রিপশন ফান্ডের টাকা বিগত কমিটিগুলো তছরুপ করেছে। সংস্থার মোট স্থায়ী আমানত (এফডিআর) ৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ভাঙা হয়েছে; প্রবৃদ্ধিসহ যার মূল্য ৪ কোটি ৯৭ লাখ ৬৮ হাজার ৪৮৫ টাকা। এ অর্থ কর্মীদের বেতন-ভাতা ও প্রতিষ্ঠানের আনুষঙ্গিক কাজে ব্যয় দেখানো হয়েছে। অথচ এ টাকা প্রবীণদের উন্নয়নে ব্যয় করার কথা।

মহসীন কবির আরও বলেন, ‘বিভিন্ন নির্বাচিত কমিটি ধারাবাহিকভাবে দুর্নীতি করেছে। অথচ এসব দুর্নীতির দায় প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নিতে হচ্ছে। কর্মীরা যখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন, তখন এই কর্মীদের দায় কেউ নিতে চাচ্ছে না। তাই আমরা কমিটি প্রথা বিলুপ্ত করে প্রতিষ্ঠানটি যাতে সরকার পরিচালনা করে ও প্রবীণদের সমন্বিত সেবা দেওয়া যায়, সে জন্য বঙ্গবন্ধু প্রবীণ কমপ্লেক্স তৈরির দাবি জানাচ্ছি।’

বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন আগারগাঁওয়ে প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরাবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা
ছবি: সংগৃহীত

বিলুপ্ত কমিটির সদস্য ও প্রশাসকের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য

প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরতরা কমিটি প্রথা বিলুপ্তির দাবিতে আন্দোলন করছেন। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটির জীবন সদস্যরা (প্রবীণ) কার্যনির্বাহী কমিটি গঠনে নির্বাচনের দাবি তুলছেন। প্রশাসক মোকতার হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, প্রশাসনিক অনিয়ম, অদক্ষতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয় উল্লেখ করে গত ৮ ফেব্রুয়ারি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এই সদস্যরা।

প্রতিষ্ঠানের তিনটি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা নিয়ে কমিটির ওই সদস্যদের অভিযোগ করা প্রসঙ্গে মোকতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দুটি মাইক্রো ও একটি অ্যাম্বুলেন্স ছিল। মাইক্রো দুটি কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি, সেক্রেটারিকে আনা–নেওয়ায় ব্যবহার করা হতো। কমিটি বিলুপ্তির পর তাঁরা এখন নেই। আর প্রশাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি চালানোর দায়িত্ব প্রশাসকের। মাইক্রো দুটি সচল রাখতেই এক দিন একটি, অন্যদিন আরেকটি ব্যবহার করা হচ্ছে। তাঁর দাবি, ব্যক্তিগত কাজে একটি মাইক্রো কিছুদিন ব্যবহার করেছিলেন তিনি। তবে এজন্য যে খরচ হয়েছে, তা প্রতিষ্ঠানে জমা দিয়েছেন।

নিয়মবহির্ভূতভাবে চারজনের পদোন্নতি দেওয়া প্রসঙ্গে মোকতার হোসেন বলেন, ‘কর্মীরা বেতন না পেয়ে চাকরি ছেড়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ ১৬ থেকে ২০ বছর একই পদে কাজ করছেন। কেউ কাউকে মানতে চাচ্ছেন না। শৃঙ্খলা ধরে রাখতে চারজনকে বেতন না বাড়িয়ে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। আর চাকরিচ্যুত করার যে অভিযোগ তা ঠিক নয়।’

আরও পড়ুন

প্রশাসক মোকতার হোসেন জানান, যৌন হয়রানি, দুর্নীতির অভিযোগে তিন–চারজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কেউ কেউ পরিচিতি জালিয়াতি করে কাজ করছিলেন, তাঁদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আর যেহেতু কর্মীদের বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তাই যে কর্মীদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল, তাঁদের চুক্তি নবায়ন করা হয়নি। বিভিন্ন শর্তে রাজি হয়ে তাঁরা হাসপাতালে কাজ করছেন। সব মিলে ৪৩ জনের চাকরি নেই।

কর্মীদের বেতন দিতে না পারা প্রসঙ্গে মোকতার হোসেন জানালেন, অনিয়মের অভিযোগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দিচ্ছে না। হাসপাতাল, প্রবীণ নিবাস, দোকানসহ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আয় তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। কর্মীদের বেতন দিতেই লাগে ২৫ লাখ টাকা। ফলে বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আয়সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া সহায়তা দিয়ে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত কর্মীদের শুধু বেসিকটুকু দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন প্রসঙ্গে মোকতার হোসেন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি এমনিতেই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এখন আবার কর্মীরা আন্দোলন করছেন নির্বাচন যাতে না হয়, আর প্রবীণ সদস্যরা দাবি জানাচ্ছেন নির্বাচনের। নির্বাচন করতে কমপক্ষে ২৫ লাখ টাকা লাগবে। সে টাকা তো নেই প্রতিষ্ঠানের।’