শিক্ষার্থীদের মিছিলে পুলিশের বাধা

শিক্ষার্থীদের মিছিলে পুলিশের বাধা।ছবি: সাজিদ হোসেন

নোয়াখালীতে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনসহ সারা দেশে একের পর এক ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনার বিচারের দাবিতে ঢাকায় শিক্ষার্থীদের গণ–অবস্থান ও মিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ। এ সময় ধস্তাধস্তিতে কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা জানান।

আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে জড়ো হয়ে গণ–অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের মধ্যে বামধারার কয়েকটি ছাত্রসংগঠনের সমর্থক শিক্ষার্থীরাও ছিলেন। সোয়া একটার দিকে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীরা কালো পতাকা মিছিল বের করেন। মিছিলটি শাহবাগ থেকে টিএসসি হয়ে আবার শাহবাগ হয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় অভিমুখে রওনা দেন। এরপর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে পুলিশ শিক্ষার্থীদের বাধা দেয়। এ সময় ধস্তাধস্তিতে কয়েকজন আহত হন। তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হয়।

আহত এক শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাচ্ছেন অন্যরা
ছবি: সাজিদ হোসেন

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বিপরীত পাশের সড়কে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। এ সময় তাঁরা পুলিশ দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করার প্রতিবাদে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন। দুপুর দুইটার দিকে সড়ক ছেড়ে দিয়ে তাঁরা শাহবাগে চলে যান।

ছাত্র ইউনিয়নের কলাবাগান থানার সদস্য সাদিয়া ইমরোজ প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ আমাদের বাধা দেয়। এ সময় ছাত্র ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর থানার সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক আসমানী আশাসহ ৬ জন আহত হয়েছেন।

শাহবাগে ‘ধর্ষকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ লেখা ব্যানার নিয়ে গণ-অবস্থান চলে। অবস্থানকারীরা ‘ধর্ষক লীগের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘আমার মাটি আমার মা, ধর্ষকদের হবে না’,‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘যে রাষ্ট্র ধর্ষক পুষে, সে রাষ্ট্র ভেঙে দাও’, ‘ধর্ষকদের কারখানা, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘পাহাড় কিংবা সমতলে, লড়াই হবে সমানতালে’ স্লোগানে স্লোগানে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা গণ-অবস্থান থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানান।

শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে শিক্ষার্থীদের গণ-অবস্থান। নোয়াখালীতে বিবস্ত্র করে নারী নির্যাতনসহ সারা দেশে একের পর এক ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিচার দাবিতে এই কর্মসূচি পালিত হয়
ছবি: সাজিদ হোসেন

গণ-অবস্থানে ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণের ঘটনার কারণ যতটা না জৈবিক বিকার, তার চেয়ে ক্ষমতার বিকার।

পাহাড়ে, সিলেটের এমসি কলেজে, নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ও বেগমগঞ্জে যেসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, তাতে দেখা গেছে ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্যই জৈবিক বিকার ঘটছে। দেশে গণতন্ত্রহীন ক্ষমতার কারণেই একের পর এক ধর্ষণ ঘটছে।

আরও পড়ুন

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ বলেন, সারা দেশে নারী ও শিশুর প্রতি অব্যাহত নিপীড়ন নেমে এসেছে। এসব যারা করছে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে সরকার। ধর্ষণের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে তা বন্ধ হবে না।

ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি
ছবি: সাজিদ হোসেন

বিক্ষোভে ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি জহর লাল রায় বলেন, ক্ষমতার কাঠামো থেকে ধর্ষণের সম্পর্ক আছে।

লালবাগ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী মো. শাহাদাত হোসেন চোখে কালো কাপড় ও মুখে কালো মাস্ক পরে গণ-অবস্থানে এসেছেন। তাঁর মাস্কের ওপরে লেখা ‘পুরুষতন্ত্র নিপাত যাক’। শাহাদাত প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই রাষ্ট্রে আমরা নাগরিকেরা এখন অন্ধের মতো হয়ে গেছি। ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে, তবু বিচার হচ্ছে না। আইনের আওতায় আনা হয় খুবই কম। জামিন পেয়ে ধর্ষকেরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। ন্যায্য বিচার হলে বারবার ধর্ষণের ঘটনা ঘটত না। এ কারণেই চোখ থাকতে আমরা অন্ধ।’

আরও পড়ুন

বেলা ১১টা থেকে ‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে এই গণজমায়েত হওয়ার কথা ছিল। সকালে বৃষ্টির কারণে কিছুটা দেরিতে ধর্ষণবিরোধী গণ-অবস্থান শুরু হয়েছে।

আরও পড়ুন
প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসহ শিক্ষার্থীরা কর্মসূচিতে অংশ নেন
ছবি: সাজিদ হোসেন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি

‘সন্ত্রাস ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন পদযাত্রা করেন। এ কর্মসূচির আয়োজন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

পদযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, আদালত এলাকা, জনসন রোড, রায়সাহেব বাজার ঘুরে বাহাদুর শাহ পার্ক, কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ঘুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে গিয়ে শেষ হয়। শিক্ষার্থীরা দুই সারিতে সারিবদ্ধ হয়ে পদযাত্রাটি করেন। এতে আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

আরও পড়ুন

কর্মসূচির আয়োজকেরা জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সন্ত্রাস ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে অবস্থান করছেন। দেশে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ, নিপীড়নের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে এবং নির্মমতার মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা আরও তলিয়ে বিচার করতে হবে। অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ধর্ষণ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে শুধু আইন প্রণয়ন যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন ও সামাজিক আন্দোলন। নারীর অগ্রগতির পথে এ ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড বিরাট অন্তরায়। কঠোরভাবে আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে সন্ত্রাস ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।

আরও পড়ুন