হল-মার্কের তানভীর, জেসমিন, তুষারসহ ৯ জনের যাবজ্জীবন, ৮ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড

হল-মার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ, জেসমিন ইসলামসহ নয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত

সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় করা মামলায় হল-মার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ, জেসমিন ইসলামসহ নয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁদের পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করেছেন আদালত।

এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবিরসহ ৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এর বিচারক আবুল কাসেম আজ মঙ্গলবার এই রায় ঘোষণা করেন।প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের সরকারি কৌঁসুলি মীর আহমেদ আলী সালাম।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া নয়জন হলেন, তানভীর মাহমুদ, তানভীর মাহমুদের  স্ত্রী ও হল-মার্ক  গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম,  তানভীরের ভায়রা হল-মার্ক গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ, টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিযা, প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, সাইফুল হাসান, নকশী নিটের এমডি মো. আবদুল মালেক ও আবদুল মতিন।

আরও পড়ুন
হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম।
ফাইল ছবি

দণ্ডিত বাকি আট আসামি হলেন, সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন সরকার, সোনালী ব্যাংক ধানমন্ডি শাখার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা মেরি, সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সাবেক মহাব্যবস্থাপক ননী গোপাল নাথ ও মীর মহিদুর রহমান, প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) মাইনুল হক, উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সফিজউদ্দিন এবং এজিএম মো. কামরুল হোসেন খান। এই আটজনের মধ্যে জামাল উদ্দিনের পাঁচ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। বাকিদের ১৭ বছর করে  কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

আসামিদের মধ্যে জামাল উদ্দিন ও আলতাফ হোসেন জামিনে রয়েছেন। আর পলাতক রয়েছেন সাইফুল ইসলাম, আবদুল মতিন, হুমায়ুন কবির, গোপাল নাথ, তসলিম, সাইফুল হাসান, মেহেরুন্নেসা ও জাকারিয়া। কারাগারে আছেন তানভীর, তুষার,জেসমিনসহ অপর আটজন।

জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় হল-মার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে ৪ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় এ মামলা করে দুদক। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পরের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থের অপব্যবহার, প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ  এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎকালীন উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান ও বাদী নাজমুচ্ছায়াদাৎ।

আরও পড়ুন

মামলায় জালিয়াতির মাধ্যমে ৫২৫ কোটি ৬২ লাখ ৯২ হাজার ৮০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।

মামলার কাগজপত্রের তথ্য বলছে, সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে রূপসী বাংলা (সাবেক শেরাটন) হোটেল শাখা থেকে হল-মার্ক মোট ২ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। এর মধ্যে স্বীকৃত বিলের বিপরীতে দায় (ফান্ডেড) অর্থ হচ্ছে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৭ টাকা। এ ঘটনায় ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর রমনা থানায় মামলা করে দুদক।

তদন্ত শেষে পরের বছর ২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর ১১টি মামলায় হল-মার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ, তাঁর ভায়রা তুষার আহমেদসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়। পরে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ও ২৭ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এই ১১টি মামলা বিচারের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এ বদলি করা হয়। আজ একটি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি মামলা বিচারাধীন।