সিআইডির নজরদারিতে ঢাকার ৮৭ অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ

অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের তালিকা ধরে অনুসন্ধান চালাচ্ছে সিআইডি
প্রতীকী ছবি: রয়টার্স

অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসা করে অনেকেই বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তথ্য রয়েছে। বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচার আড়ালে অর্থ পাচারে জড়িত সন্দেহে বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সংস্থাটি বলছে, এই অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তারা ঢাকার ৮৭টি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের লেনদেন, ব্যাংক হিসাব ও মালিকদের সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করছে। অনুসন্ধান শেষে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অর্থ পাচারে জড়িত অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

সিআইডি বলছে, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের একটি তালিকা তাদের দিয়েছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সিআইডি আরেকটি তালিকা তৈরি করেছে। এই দুই তালিকা ধরে সিআইডির অনুসন্ধান চলছে।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিআইডির তথ্যমতে, সারা দেশে অন্তত ৭০০ অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা ডলার কেনাবেচার আড়ালে অর্থ পাচারে জড়িত।

প্রশাসনের নাকের ডগায় বছরের পর বছর ধরে অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো চলে আসছে। দেশে ডলার-সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়।

সিআইডি সূত্র বলছে, ঢাকাসহ সারা দেশে অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীদের তালিকা তারা তৈরি করছে। এর ধারাবাহিকতায় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় থাকা অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের তালিকা করে তারা তদন্ত শুরু করেছে।

সিআইডির কর্মকর্তারা বলেন, তালিকা ধরে অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পদের তথ্য চেয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সিআইডির নোটিশ পেয়ে ইতিমধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মালিকেরা।

সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে। এসব প্রতিষ্ঠানের লেনদেন ও সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। অর্থ পাচারের তথ্য পাওয়া গেলে জড়িত মানি এক্সচেঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

আরও পড়ুন

সিআইডির একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সবকিছু জানার পরও অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জে অভিযান চালাতে তাঁরা কিছু সংশয় বোধ করেন। কারণ হিসেবে তাঁরা বলেন, হয়তো কোনো অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জে অভিযান চালিয়ে পাঁচ হাজার ডলার উদ্ধার করা হলো। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের মালিক আদালতে গিয়ে দাবি করেন, তাঁর মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ৫০ হাজার ডলার নিয়ে আসা হয়েছে। এমন অভিযোগের কারণে উল্টো তাঁদের বিপদে পড়তে হয়।

অবশ্য সিআইডি বলছে, পূর্বের এমন অভিজ্ঞতা থেকে তারা শিক্ষা নিয়ে অভিযানের ক্ষেত্রে নতুন কৌশল নিয়েছে। সিআইডির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এখন একজন পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জে অভিযান পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি পুরো অভিযানের ভিডিও চিত্র ধারণ করা হবে, যাতে অভিযান–পরবর্তী কোনো অভিযোগ না ওঠে।

সিআইডি বলছে, ১৩টি মানি এক্সচেঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। তথ্য অনুযায়ী, এগুলোর অনেকেই অবৈধভাবে ব্যবসা করছে। তবে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন

সিআইডির নজরদারিতে যারা

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অনেকগুলো অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে বলে জানায় সিআইডি।

সংস্থাটির তথ্যমতে, ঢাকায় সবচেয়ে বেশি অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান রয়েছে উত্তরা, আশকোনা, গুলশান, মতিঝিল, দিলকুশা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর এলাকায়।

আরও পড়ুন

সিআইডি ৮৭টি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানকে নজরদারিতে রাখার কথা জানিয়েছে। এই মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলো তারা অবৈধ বলছে। সিআইডির তালিকা অনুযায়ী, বিমানবন্দরের আশকোনায় রয়েছে ওয়াই এম সি মানি চেঞ্জার, সানশাইন মানি চেঞ্জার, সি এম সি মানি চেঞ্জার, কে এম সি মানি চেঞ্জার, কসমিক মানি চেঞ্জার, ইস্টল্যান্ড মানি চেঞ্জার।

উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় রয়েছে এম বি মানি এক্সচেঞ্জ, আল মদিনা মানি চেঞ্জার, মিম মানি চেঞ্জার, ডব্লিউ এম এফ মানি চেঞ্জার, এইচ এম ট্রাভেলস, নাইটিঙ্গেল মানি চেঞ্জার, আরিয়ান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, এম এম মানি চেঞ্জার।

ঢাকার অন্যান্য এলাকায় রয়েছে দোহার মানি এক্সচেঞ্জ, ওয়েলকাম মানি এক্সচেঞ্জ, খান অ্যান্ড চৌধুরী মানি চেঞ্জার, সোনাগাঁও ট্রাভেল ইন্টারন্যাশনাল, এ জে মানি চেঞ্জারস লিমিটেড, আনন্দ মানি চেঞ্জার, খান এন্টারপ্রাইজ, তৃষা মানি চেঞ্জার, রাজ মানি এক্সচেঞ্জ, মির্জা মানি এক্সচেঞ্জ, গ্যালাক্সি মানি এক্সচেঞ্জ, আবিয়া মানি এক্সচেঞ্জ, জে এম মানি চেঞ্জার, অ্যাঞ্জেলস মানি চেঞ্জার, এস কে মানি চেঞ্জার, মেঘা মানি চেঞ্জার, কে টি মানি এক্সচেঞ্জ, কে অ্যান্ড কে এক্সচেঞ্জ ইন্টারন্যাশনাল, আলম অ্যান্ড ব্রাদার্স মানি এক্সচেঞ্জ, প্রাইম ফরেন মানি এক্সচেঞ্জ, গোল্ডেন মানি এক্সচেঞ্জ, আলম মানি এক্সচেঞ্জ, তানিয়া মানি এক্সচেঞ্জ, ভাই ভাই স্টোর, রিপন স্টোর, ওয়াহিদুল স্টোর, স্বর্ণা মানি এক্সচেঞ্জ, তৈমুর মানি চেঞ্জার, রিলায়েবল মানি এক্সচেঞ্জ, ইস্পা মানি চেঞ্জারস, হাসান মানি চেঞ্জার, নাইটিঙ্গেল মানি এক্সচেঞ্জ, হক মানি এক্সচেঞ্জ, এস এস মানি চেঞ্জার, জে এম মানি চেঞ্জার, আইডিয়াল মানি এক্সচেঞ্জ, জে অ্যান্ড জে মানি এক্সচেঞ্জ, এম কে মানি চেঞ্জার, এয়ার ম্যাগনেট টুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস।

আরও পড়ুন

সিআইডির তালিকায় আরও যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে টাইম মানি এক্সচেঞ্জ, নবারুন মানি এক্সচেঞ্জ, আশাহি মানি এক্সচেঞ্জ, তাহসিনা মানি এক্সচেঞ্জ, এম বি মানি এক্সচেঞ্জ, সন্তু মানি চেঞ্জার, তোন্না মানি এক্সচেঞ্জ, রহমান মানি চেঞ্জার, শাপশা মানি এক্সচেঞ্জ, বি এন কে, টিপু মানি চেঞ্জার, কর্নিকা মানি চেঞ্জার, ময়মনসিংহ মানি চেঞ্জার, রিয়েল মানি চেঞ্জার, সিয়াম মানি চেঞ্জার নামে পৃথক দুটি দোকান, খাদিজা মানি চেঞ্জার, সানজিদা মানি চেঞ্জার, রিলাইস মানি চেঞ্জার, সানসিটি মানি চেঞ্জার, সারা মানি চেঞ্জার, ভৈরব মানি চেঞ্জার, কপোতাক্ষ মানি চেঞ্জার, এম বি মানি চেঞ্জার, ই পি মানি চেঞ্জার, আমির মানি এক্সচেঞ্জ, মানি মাস্টার এক্সচেঞ্জ, লিগ্যাল মানি এক্সচেঞ্জ, এস এম টি মানি এক্সচেঞ্জ, টাইম মানি এক্সচেঞ্জ।