ডেসটিনির হারুনসহ ৪৫ জনের সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের আপিল শুনবেন হাইকোর্ট

হাইকোর্ট ভবন
ফাইল ছবি

অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের এক মামলায় ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশিদসহ ৪৫ আসামির সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা আপিল শুনানির জন্য নিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিচারিক আদালতে হারুন-অর-রশিদের চার বছরের কারাদণ্ড হয়। এ ছাড়া ৪৫ আসামির বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। সাজার বিরুদ্ধে হারুন-অর-রশিদের করা আপিলের সঙ্গে দুদকের এই আপিলের শুনানি হবে বলেও জানিয়েছেন আদালত।

ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি ও ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের নামে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রফিকুলসহ ডেসটিনির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয়। রাজধানীর কলাবাগান থানায় এ মামলা করে দুদক। দুই মামলায় মোট ৪ হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়।
ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের ওই মামলায় গত ১২ মে রায় দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক। রায়ে রফিকুল আমীন, হারুন–অর-রশিদসহ ৪৬ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।

আজ আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন।

পরে খুরশীদ আলম খান প্রথম আলোকে বলেন, ৪৬ আসামির মধ্যে শুধু রফিকুল আমীনকে (ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক) ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাকি ৪৫ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে, যা আইন অনুসারে অপর্যাপ্ত বলে দুদক বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। ৪৫ জনের সাজা কেন বৃদ্ধি করা হবে না, সে বিষয়ে নোটিশ ইস্যু করেছেন হাইকোর্ট।

বিশেষ জজ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করার পাশাপাশি জামিন চেয়ে আবেদন করেন হারুন-অর-রশিদ। ৯ জুন হাইকোর্ট তাঁর আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে জামিন আবেদন সরাসরি খারিজ করে দেন। একই সঙ্গে আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে মামলার নথি (রেকর্ড কল) তলব ও পেপার বুক প্রস্তুত (মামলার বৃত্তান্ত) করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

এ ছাড়া পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ মহাপরিদর্শক, দুদকসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। স্বতঃপ্রণোদিত এই আদেশে দেশের বাইরে থাকা দণ্ডিত ব্যক্তিদের ফেরাতে প্রয়োজনে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করতেও বলা হয়।

আরও পড়ুন

দুই বছর তদন্তের পর ২০১৪ সালের ৪ মে উভয় মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ৪৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। আর ট্রি প্ল্যান্টেশনের মামলায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। দুই মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫৩। রফিকুলসহ ১২ জনের নাম ২টি মামলাতেই রয়েছে। আসামিদের মধ্যে আগে থেকেই কারাগারে আছেন ডেসটিনির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন ও রফিকুল আমীন। মোহাম্মদ হোসেনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় দণ্ডিত অন্য আসামিরা হলেন—মোহাম্মদ গোফরানুল হক, মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান, মেজবাহ উদ্দিন, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আহমেদ, ফারাহ দিবা, জামসেদ আরা চৌধুরী, শেখ তৈয়েবুর রহমান, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস, জাকির হোসেন, আজাদ রহমান, আকবর হোসেন, মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, সাইদুল ইসলাম খান, সুমন আলী খান, শিরীন আকতার, রফিকুল ইসলাম সরকার, মজিবুর রহমান, দিদারুল আলম, এম হায়দার উজ্জামান, জয়নাল আবেদীন, কাজী মো. ফজলুল করিম, মোল্লা আল আমীন, শফিউল ইসলাম, জিয়াউল হক মোল্লা, সিকদার কবিরুল ইসলাম, ফিরোজ আলম, ওমর ফারুক, সুনীল বরণ কর্মকার, ফরিদ আকতার, এস সহিদুজ্জামান চয়ন, আবদুর রহমান, সাকিবুজ্জামান, এস এম আহসানুল কবির, এ এইচ এম আতাউর রহমান, জি এম গোলাম কিবরিয়া, আতিকুর রহমান, খন্দকার বেনজীর আহমদ, এ কে এম সফিউল্লাহ, শাহ আলম, দেলোয়ার হোসেন, জেসমিন আক্তার ও শফিকুল হক।