ইভিএম কিনতে হঠাৎ তড়িঘড়ি

  • নিয়ম ভেঙে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্প।

  • আগের প্রকল্পের মধ্যবর্তী মূল্যায়ন হয়নি।

  • একনেক বৈঠকের সূচিতে নেই, তবে তোলা হতে পারে।

ইভিএম
ছবি: সংগৃহীত

দুই লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার প্রকল্প অনুমোদন দিতে হঠাৎ তড়িঘড়ি শুরু করেছে সরকার। পরিকল্পনা কমিশনে গতকাল বুধবার থেকে ইভিএম কেনার প্রকল্প নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়। দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, ১৭ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হতে পারে।

নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট নিতে চায়। এ জন্য ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে তারা। যদিও ইভিএমে ভোট গ্রহণ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। আবার অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে বিপুল অর্থ ব্যয়ে ইভিএম কেনা ও এর পেছনে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

১৭ জানুয়ারি একনেক বৈঠকে অনুমোদনের জন্য তোলা হতে পারে ৮৭১১ কোটি টাকার প্রকল্প। পরিকল্পনা কমিশনে তৎপরতা।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অর্থ সংগ্রহের জন্য সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ৫১টি সেবার মূল্য ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড হারে বাড়িয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। সরকার চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ কমিয়েছে। নতুন প্রকল্প গ্রহণ নিরুৎসাহিত করেছে। এমন সময়ে বিপুল ব্যয়ে ইভিএম কেনা কেন, যেখানে জনগণের করের টাকা যেমন ব্যয় হবে, তেমনি ব্যয় হবে বৈদেশিক মুদ্রা।

আরও পড়ুন

এসব প্রশ্নের মধ্যে ইভিএম কেনার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা ছাড়া। যদিও সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ৫০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের প্রকল্পে অভিজ্ঞ, নিরপেক্ষ ও পেশাদারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে আবশ্যিকভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করতে হবে।

একই ধরনের নতুন প্রকল্প নিতে হলে আগের প্রকল্পের (২০১৮ সালে) মধ্যবর্তী মূল্যায়ন প্রয়োজন। ইভিএম কেনার আগের প্রকল্পের কোনো মধ্যবর্তী মূল্যায়ন হয়নি। এ নিয়ে আপত্তি ছিল পরিকল্পনা কমিশনেরও। অবশ্য নতুন প্রকল্প অনুমোদন দিতে তড়িঘড়ি করে মধ্যবর্তী মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মূল্যায়নের কাজ এখনো শুরু হয়নি।

১৭ জানুয়ারি ইভিএম কেনার নতুন প্রকল্প একনেকে তুলতে মধ্যবর্তী মূল্যায়নের সময় আছে পাঁচ দিন।

১৭ জানুয়ারি যে একনেক বৈঠক রয়েছে, তার আলোচ্য সূচিতে (অ্যাজেন্ডা) ১১টি প্রকল্প থাকলেও ইভিএম কেনার প্রকল্প নেই। সূত্র বলছে, সরকার এতটাই তড়িঘড়ি করছে যে আলোচ্য সূচির বাইরে এ প্রকল্প তোলা হতে পারে।

নির্বাচন কমিশন থেকে কয়েক দিন ধরে বলা হচ্ছে, মধ্য জানুয়ারির মধ্যে ইভিএম প্রকল্পটি অনুমোদন দিতে হবে। নইলে নির্বাচনের আগে ১৫০ আসনে ইভিএমে নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।

জানতে চাইলে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম গতকাল দুপুরে তাঁর দপ্তরে প্রথম আলোকে বলেন, ইভিএম প্রকল্পটি অনুমোদন দিতে পরিকল্পনা কমিশনের কোনো আপত্তি নেই। মূল বিষয় হচ্ছে টাকার জোগান দেওয়া। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে টাকার নিশ্চয়তা পাওয়ার বিষয় আছে। তিনি আরও বলেন, ১৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া একনেক সভায় ইভিএম কেনার প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হতে পারে।

আরও পড়ুন

মূল্যায়ন কমিটির সভাই হয়নি

নির্বাচন কমিশন গত জুলাই মাসে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে সংলাপ করে, তাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ইভিএমে ভোট চায়। অন্যদিকে বিএনপি ইভিএমকে ‘কারচুপির যন্ত্র’ বলে অভিযোগ করে আসছে। সংলাপে ২২টি দল ইভিএম নিয়ে তাদের মতামত দিয়েছিল। জাতীয় পার্টিসহ ১৪টি দল ইভিএম নিয়ে তাদের সংশয় ও সন্দেহের কথা স্পষ্টভাবেই বলেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজেও সংলাপে বলেছিলেন, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমে বিশ্বাস করছে না।

অবশ্য নির্বাচন কমিশন ২৩ আগস্ট জানায়, তারা সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের কাছে দেড় লাখ ইভিএম আছে। ১৫০ আসনে ভোট নিতে প্রয়োজন আরও ২ লাখ ইভিএম।

নতুন করে ইভিএম কিনতে ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয় গত ১৯ অক্টোবর। প্রকল্পটির নাম ‘নির্বাচনী ব্যবস্থায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার বৃদ্ধি এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা’। প্রকল্পের পুরো টাকা সরকার জোগান দেবে।

নিয়ম অনুযায়ী, যেকোনো প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের আগে অবশ্যই প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করতে হয়। যেখানে প্রকল্পের ওপর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা তাঁদের মতামত তুলে ধরেন। কিন্তু ইভিএম প্রকল্পে এখন পর্যন্ত পিইসি সভাই হয়নি।

গতকাল পরিকল্পনা কমিশনে গিয়ে জানা যায়, ইভিএম কেনার প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা একাধিক বৈঠক করেছেন। বিকেল চারটায় নির্ধারিত অফিস সময়ের পর পরিকল্পনা কমিশনে যান নির্বাচন কমিশনের ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল রাকিবুল হাসান। পরিকল্পনা কমিশনে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইভিএম প্রকল্প নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন যেসব পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে, আমরা তার জবাব দিয়েছি। কমিশনের আরও কোনো জিজ্ঞাসা আছে কি না, তা জানতেই আমি পরিকল্পনা কমিশনে এসেছি।’

পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি যেসব বিষয়ে

নির্বাচন কমিশনের প্রকল্পে ৬ হাজার ৬৬০ কোটি টাকায় দুই লাখ ইভিএম এবং যন্ত্রগুলো বিভিন্ন জায়গায় আনা–নেওয়ার জন্য ২৬৪ কোটি টাকায় ৫৩৪টি যানবাহন (ডাবল কেবিন পিকআপ) কেনার কথা বলা হয়েছে। ইভিএম রাখতে ৩৭০ কোটি টাকায় ১০টি গুদাম (ওয়্যারহাউস) নির্মাণ করা হবে এই প্রকল্পের আওতায়। এর বাইরে ইভিএমে ভোট দেওয়ার বিষয়ে প্রচারে ২০৬ কোটি টাকা, নির্বাচনে ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরা ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম ভাড়ায় ১৩২ কোটি টাকা এবং অন্য আরও খাতে ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটি আসার পরে বেশ কিছু আপত্তি তুলে ধরে। গত ৯ নভেম্বর আপত্তির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের জবাব জানতে চিঠি দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশন গত রোববার আপত্তির জবাব দিয়েছে। জবাব কী, সে বিষয়ে গতকাল এই প্রতিবেদককে জানান প্রকল্প পরিচালক কর্নেল রাকিবুল হাসান।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরিকল্পনা কমিশনের একটি আপত্তি ছিল গাড়ি কেনা নিয়ে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, অর্থনৈতিক সংকটে এত গাড়ি কেনা যাবে না। প্রয়োজন হলে ভাড়া করা যেতে পারে। জবাবে নির্বাচন কমিশন বলেছে, বাংলাদেশে এত বিপুলসংখ্যক গাড়ি ভাড়া দেওয়ার মতো কেউ নেই। তা ছাড়া ইভিএম স্থানান্তরের জন্য জরুরি ভিত্তিতে গাড়ির প্রয়োজন হতে পারে। সে জন্য গাড়ি কেনা তাদের জন্য জরুরি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৫৭টি পিকআপ (ডাবল/সিঙ্গেল কেবিন) নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০২২ সালেই নিবন্ধন দেওয়া হয় ৯ হাজার ৮০৪টি পিকআপ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, ভোটের জন্য চাইলে সরকার গাড়ি ভাড়া নিতে পারে।

সম্ভাব্যতা সমীক্ষা না করে প্রকল্প পাঠানোর বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তির জবাব কী দেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক জানান, সমীক্ষা করতে গেলে আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। তাই সমীক্ষা করা হয়নি।

মধ্যবর্তী মূল্যায়ন নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে চিঠি চালাচালি হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন গত ২৯ ডিসেম্বর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিবকে একটি চিঠি দেয়। এতে বলা হয়, ২০১৮ সালে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রথম নেওয়া ইভিএম কেনার প্রকল্প চলমান। এটি ২০২৩ সালে শেষ হবে। এই প্রকল্পের ইভিএম দিয়ে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬০টি নির্বাচন সফলভাবে শেষ হয়েছে। তাই প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় ইভিএম–সংক্রান্ত নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে চলমান প্রকল্পের মধ্যবর্তী মূল্যায়ন করতে আইএমইডিকে অনুরোধ জানানো হয়। আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ১ জানুয়ারি এ বিভাগে যোগ দিয়েছি। এ–সংক্রান্ত কোনো চিঠি আমার হাতে আসেনি।’

ইভিএম কিনতে গিয়ে অর্থ ব্যয় ও বৈদেশিক মুদ্রা খরচের বিষয়টি উঠে এসেছিল পরিকল্পনা কমিশনের পর্যবেক্ষণেও। নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া চিঠিতে পরিকল্পনা কমিশন বলেছিল, চলমান ডলার–সংকটের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ব্যাহত হতে পারে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক কর্নেল রাকিবুল হাসান বলেন, ‘ইভিএম কিনবে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)। আমরা তাদের বাংলাদেশি মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করব। তারা কীভাবে ডলার সংগ্রহ করবে, সেটা তাদের বিষয়। আমাদের বিষয় নয়।’

যদিও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ডলার যেখান থেকেই সংগ্রহ করা হোক, সেটা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার বাজারের ওপর চাপ ফেলবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব বলছে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা মজুত (রিজার্ভ) ৩ হাজার ২৫৭ কোটি ডলারে নেমেছে (৩২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন)। উল্লেখ্য, বিএমটিএফ ইভিএমের যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে আমদানি করবে।

পরিকল্পনা কমিশন সরাসরি ক্রয়পদ্ধতির (ডিপিএম) বদলে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে (ওটিএম) প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সুপারিশও করেছিল। পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম সচিব আব্দুর রউফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ প্রকল্পের ওপর আমরা বেশ কয়েকটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছিলাম। তারা সেসব জবাব দিয়েছে। আমরা তা দেখছি।’

দাম নিয়ে প্রশ্ন

নির্বাচন কমিশনের প্রকল্পে প্রতিটি ইভিএমের একক দর ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে নেওয়া প্রথম প্রকল্পে প্রতিটির দর ছিল ২ লাখ ৫ হাজার টাকা। প্রতিটির দাম ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা বা ৬২ শতাংশ বাড়িয়ে ধরার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক কর্নেল রাকিবুল হাসান বলেন, ডলারের দাম ও শুল্ক–কর বেড়েছে। এ কারণেই বেশি দাম পড়ছে।

ব্যাংকগুলোর তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন আমদানিতে ডলারের দাম ধরা হচ্ছে গড়ে ১০৫ টাকা, যা গত মে মাসে ৮৬ টাকা ছিল। সব মিলিয়ে ডলারের দাম বেড়েছে ২২ শতাংশ।

নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালে যখন ইভিএম কেনে, তখনো দাম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ওই সময় ভারতের কেনা ইভিএমের সঙ্গে বাংলাদেশের ইভিএমের দামের পার্থক্য তুলে ধরা হয়। ভারতের নির্বাচন কমিশন ইভিএম কিনেছিল ১৭ হাজার রুপিতে, যা তখন বাংলাদেশি মুদ্রায় ২১ হাজার ২৫০ টাকার সমান ছিল। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) নির্বাচন কমিশনের জন্য যে ইভিএম তৈরি করেছিল, তার প্রতিটির দাম পড়েছিল ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে কিছু ভিন্নতা থাকলেও ২০১৮ সালে কেনা ইভিএমের দামের বিশাল পার্থক্যকে তখন অস্বাভাবিক বলেছিলেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

দেশের ৩৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক গত সেপ্টেম্বরে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলেছিলেন, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও ভোটারদের আস্থাহীনতার কারণে পৃথিবীর অনেক দেশই এখন ইভিএম ব্যবহার থেকে সরে আসছে। পৃথিবীর ১৭৮টির মধ্যে বর্তমানে শুধু ১৩টি দেশ তাদের সব নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করছে।

বাংলাদেশে ইভিএমের কারণে ভোট গ্রহণে দেরি হয়। ভোটারদের আঙুলের ছাপ মেলে না। অনেক সময় প্রবীণ ভোটাররা বিরক্ত হয়ে চলে যান। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি নির্বাচনে ভোট গ্রহণে সন্ধ্যা হয়ে যায়। ইভিএম কেনা হলে ভোটের ব্যয়ও বেশি হবে। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভোট গ্রহণে বরাদ্দ ছিল ৭০০ কোটি টাকা। এবার ইভিএম কিনতেই সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিতে যাচ্ছে সরকার।

দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, দেশে অর্থনৈতিক সংকট চলছে। সরকার কৃচ্ছ্রসাধন করতে জনগণকে অনুরোধ করছে। এমন সময়ে তড়িঘড়ি করে কেন ইভিএম কেনা হচ্ছে, তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হবে। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আপত্তি জানিয়ে আসছে। ইভিএমে নির্বাচনের ফলাফল যে জালিয়াতি করা যায়, তা–ও বিভিন্ন জায়গায় উঠে এসেছে। কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে কার স্বার্থে ইভিএম কেনা হচ্ছে, তা জানা দরকার।