আইনশৃঙ্খলার কারণে নির্বাচন ব্যর্থ হলে দায় ডিসি-এসপির: কুমিল্লায় সিইসি

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। রোববার কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন ব্যর্থ হলে দায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারের (এসপি)। আর সফল হলে প্রশংসা তাঁদের। তাই নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণভাবে দেখতে হবে।

আজ রোববার দুপুরে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাজী হাবিবুল আউয়াল এসব কথা বলেন।

আরও পড়ুন

কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার উদ্যোগে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক ছাড়া অন্য ৪ প্রার্থী, ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। নির্বাচনের আগে মক ভোটিং হবে। ইভিএম নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। নির্বাচনের দিন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়বৃষ্টি হলে সেটি আমরা দেখব।’

প্রার্থীদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন কিন্তু যুদ্ধ নয়। লাঠিসোঁটা ও পেশিশক্তি ব্যবহার করে জিততে হবে—এ ধরনের মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। নির্বাচনে কেউ পেশিশক্তির ব্যবহার করলে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের আছে। এ ধরনের ঘটনা যেন কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে না হয়, সেদিকে সবাইকে নজর দিতে হবে। আমরা একটি মডেল নির্বাচন করতে চাই। কুমিল্লা একটা মডেল হতে পারে।’

কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, ‘নির্বাচন এলে উত্তেজনা ও আবেগ তৈরি হয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আবেগ যেন যুদ্ধ ও সহিংসতার কারণ না হয়। নির্বাচনে সবাই জয়লাভ করতে পারবে না। ভোটকেন্দ্র আমাদের (নির্বাচন কমিশন) নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ইভিএমে পেশিশক্তি ব্যবহারের ক্ষমতা নেই। নির্বাচন আনন্দমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করতে সবার সহযোগিতা চাই।’

আরও পড়ুন

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায় ফুটবল খেলা হয়। সেখানে কি মারদাঙ্গা হয়? অলিম্পিক স্পিরিট নিয়ে খেলা হয়। নির্বাচনে কোনো হেলমেট বাহিনী থাকতে পারে না। নির্বাচনে কোনো কূটকৌশল করবেন না। মনে রাখবেন, ভোট নাগরিকের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য।’

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে ভোটার উপস্থিতি বেশি। এটা ৬০ শতাংশ, ৭০ শতাংশ ও তার বেশিও হতে পারে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে এতসংখ্যক ভোটার উপস্থিত থাকেন না। আমাদের দেশের ভোটাররা সচেতন।’

আচরণবিধি প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘প্রার্থীদের অবশ্যই আচরণবিধি অনুসরণ করতে হবে। যেসব বিধিমালা, নিষেধাজ্ঞা আছে, সেগুলো যেন লঙ্ঘন করা না হয়। ইভিএমে পেশিশক্তি দিয়ে কিছু করা যায় না। ভোটকেন্দ্রের বাইরে অহেতুক খারাপ অবস্থা তৈরি করবেন না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের ভয় দেখানো যেন না হয়। নির্বাচনে জাল ভোট ও সহিংসতা হবে না। যদি কেউ করার অপচেষ্টা করেন, আমরা আইনি ক্ষমতা ব্যবহার করব। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ওপর অন্যায় হলে প্রতিরোধের জন্য সহিংস পদ্ধতিতে নয়, অহিংস পদ্ধতি বেছে নিন।’

বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। জেলার জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মঞ্জুরুল আলমের সঞ্চালনায় সভায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান, পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ, রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী, কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দুলাল তালুকদার প্রমুখ বক্তব্য দেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের মোট ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ২ জন। ৭১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০টি কক্ষে ভোট গ্রহণ করা হবে। মোট ১৪৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটের আগে ১৩ জুন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মক ভোটিং হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটাররা সেখানে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন।