বন্যার্তদের জন্য সাদের অন্য রকম সেবা

বন্যার্তদের জন্য জেনারেটর চালিয়ে বিনা মূল্যে মুঠোফোন চার্জের ব্যবস্থা করেন শেখ সাদ ইসলাম নামের এক তরুণ। গতকাল রোববার রাতে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা সদরে
ছবি: প্রথম আলো

বন্যায় বিদ্যুৎকেন্দ্রে পানি ঢুকে পড়ায় দুই দিন হলো এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন এলাকার বাসিন্দারা মুঠোফোনের চার্জ দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েন। মুঠোফোনে চার্জ না থাকায় জরুরি মুহূর্তে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না বন্যা-কবলিত এলাকার বাসিন্দারা। এমন পরিস্থিতিতে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন শেখ সাদ ইসলাম (২৩) নামের তরুণ এক শিক্ষার্থী।

বাবার স্টুডিওর দোকানে জেনারেটর চালিয়ে বিনা মূল্যে মানুষের মুঠোফোন চার্জের ব্যবস্থা করেছেন। মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা সদরের বিজিবি ক্যাম্প চত্বরে এমনই উদ্যোগ নিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী।

আরও পড়ুন

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা সদরে বিজিবি ক্যাম্প চত্বরে সব দোকানপাট বন্ধ। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। এর মধ্যে একটি দোকানে লোকজনের ভিড়। সেখানে জেনারেটর চলছিল। লোকজনের হাতে মুঠোফোন ও চার্জার। তাঁরা একের পর এক দোকানে ঢুকে মুঠোফোনে চার্জ দিচ্ছেন। দোকানের ভেতরে অন্তত ৫০টি মুঠোফোন ও চার্জার লাইটে চার্জ দেওয়া হচ্ছিল। কাজটি তদারকিতে ব্যস্ত শেখ সাদ।

শেখ সাদের বাড়ি পাশের কামিনীগঞ্জ বাজার এলাকায়। ‘ইমরুল স্টুডিও’ নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি চালান তাঁর বাবা ইমরুল ইসলাম। লেখাপড়ার ফাঁকে বাবাকে সহযোগিতা করেন শেখসাদ। তিনি বাংলা সাহিত্য নিয়ে স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন।

বাবার স্টুডিওর দোকানে জেনারেটর চালিয়ে শেখ সাদ বন্যার্ত মানুষকে বিনা মূল্যে মুঠোফোন চার্জের ব্যবস্থা করেন
ছবি: প্রথম আলো

ব্যস্ততার ফাঁকে শেখ সাদ প্রথম আলোকে বলেন, বিনা মূল্যে তিনি সকাল থেকে বন্যার্ত মানুষকে এই সেবা দিচ্ছেন। এমন উদ্যোগের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। প্রতিবেশী অনেকের মুঠোফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় তিনি কিছু করার কথা ভাবেন। সেই ভাবনা থেকেই এই উদ্যোগ।

গতকাল রোববার সকাল থেকে তিনি এই কার্যক্রম শুরু করেন। মাঝে কিছু সময় বিরতি দিয়ে জেনারেটর চালান। রাত পর্যন্ত অন্তত ২০০ মুঠোফোন চার্জের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। জেনারেটর চালাতে প্রায় ১০ লিটার জ্বালানি তেল খরচ হয়েছে তাঁর।

ধামাই চা-বাগান থেকে আসা রাজীব বৈদ্য জানান, মুঠোফোনে চার্জ না থাকায় বন্যাদুর্গত বন্ধু-বান্ধবসহ স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। খবর পেয়ে বন্যার পানিতে ভিজে ছুটে এসেছেন। মুঠোফোনে ২০ শতাংশ চার্জ দিয়ে বাড়ি ফিরে যান।

স্থানীয় বাসিন্দা নাইয়ান আহমদ, জাফরান আহমদ ও মিলন দেবনাথ বলেন, শেখ সাদের এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। দুর্যোগে সবার সাধ্যমতো এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো দরকার বলে তাঁরা মনে করেন।

আরও পড়ুন