থানচিতে দুর্গম পাহাড়ে অভিযানে ১৭ জন জঙ্গি গ্রেপ্তার

গ্রেপ্তার জঙ্গি ও কেএনএফ সদস্যরা
ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানের থানচি উপজেলার দুর্গম পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে ১৭ জন জঙ্গি ও ৩ জন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় সাত লাখ টাকা, অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করা হয়েছে।

এ নিয়ে গত ৩ অক্টোবর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলমান অভিযানে ২৯ জন জঙ্গি ও ১৭ জন কেএনএফ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলো। আজ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলন করে র‍্যাব এ তথ্য জানায়।

আরও পড়ুন

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কুমিল্লার সামী রহমান ওরফে সাদ (১৯), জহিরুল ইসলাম ওরফে ওমর ফারুক সাংওয়াই (২৭), সাখাওয়াত হোসেন ওরফে মাবরুর রিসিং (২১), বরগুনার সোহেল মোল্লা ওরফে সাইফুল্লাহ (২২), যোবায়ের আহম্মেদ ওরফে আইমান (২৯), পটুয়াখালীর মো. আল আমিন ওরফে মোস্তাক (১৯), মিরাজ সিকদার ওরফে আশ্রাফ হোসেন দোলন (২৬), মো. ওবায়দুল্লাহ ওরফে ওবায়দুল শান্ত (২০), জুয়েল মাহমুদ ওরফে মাহমুদ (২৭), শামীম হোসেন ওরফে আবু হোরায়রা চামদুর (২৬), টাঙ্গাইলের ইলিয়াস রহমান ওরফে তানজিল থানবোয়াং (৩২), ঝালকাঠির হাবিবুর রহমান ওরফে মোড়া (২৩), মুন্সিগঞ্জের রিয়াজ শেখ ওরফে জায়েদ, বরিশালের আবদুস সালাম রাকি ওরফে দুমচুক (২৮), মোহাম্মদ মাহমুদ ডাকুয়া ওরফে হাকা (২০), হবিগঞ্জের তাওয়াবুর রহমান সোহান ওরফে মিন্ট (২০), মাগুরার আবু হুরাইরা ওরফে মিরাজ সাইসো (২২)। গ্রেপ্তার কেএনএফের তিন সদস্য হলেন লাল মোল সিয়াম বম, ফ্লাগ ক্রস বম ও মালসম পাংখুয়া। তাঁদের তিনজনের বাড়ি রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলায়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার থানচি-রেমাক্রি-লেইক্রি সড়কের রেমাক্রি ব্রিজ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এলাকাটি থানচি উপজেলা সদর থেকে ২৭ কিলোমিটার দূরে। সেখানে র‌্যাবের সঙ্গে কেএনএফ ও শারক্কীয়া জঙ্গিদের গোলাগুলিতে আটজন র‌্যাব সদস্য সামান্য আহত হয়েছিলেন। অভিযানে একটি গোপন আস্তানা থেকে ১৭ জন জঙ্গি ও ৩ জন কেএনএফ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে সাত লাখ টাকা, দেশি-বিদেশি অস্ত্র, গোলাবারুদ, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, উগ্রবাদী বই, লিফলেট ও বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।

র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তার ১৭ জন জঙ্গির মধ্যে ৮ জন মাদ্রাসার ও ৭ জন কলেজের ছাত্র। তাঁরা পড়াশোনা ছেড়ে জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়ে দল বেঁধে পাহাড়ে কেএনএফের প্রশিক্ষণ ছাউনিতে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলেন। অন্য দুজনের মধ্যে একজন জুতার ব্যবসায়ী ও অন্যজন মধ্যপ্রাচ্যফেরত। গ্রেপ্তার কেএনএফের সদস্যদের মধ্যে ফ্লাগ ক্রস বম কেএনএফপ্রধান নাথান বমের ঘনিষ্ঠ বলে জানা যায়।

খন্দকার আল মঈন বলেন, কেএনএফের গোপন আস্তানায় এখনো শারক্কীয়ার জঙ্গিদের অবস্থান রয়েছে। রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ির দুর্গম এলাকা থেকে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার ১৭ জনসহ ২৯ জন জঙ্গি; ৩ জনসহ ১৭ জন কেএনএফ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া সমতলের বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরও ২৬ জন জঙ্গিকে। পাহাড় ও সমতল মিলিয়ে এ পর্যন্ত নতুন জঙ্গি সংগঠন শারক্কীয়ার ৫৫ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে।

আরও পড়ুন

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে হিজরতের নামে কেএনএফের প্রশিক্ষণে যাওয়া ও র‌্যাবের তালিকায় থাকা ৫৫ জন জঙ্গির বাইরেও পাহাড়ে জঙ্গি থাকতে পারে। গত ২০ অক্টোবর রুমা ও রোয়াংছড়ি থেকে গ্রেপ্তার ৭ জন, নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে গ্রেপ্তার ২ জনের ১ জন জঙ্গির নাম ওই ৫৫ জনের তালিকায় নেই। হিজরতের তালিকার ৫৫ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত র‌্যাবের হাতে ২৩ জন ও পুলিশের কাছে ২ জনসহ মোট ২৫ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। পাহাড়ে প্রশিক্ষণে গিয়ে দুজন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। সে হিসাবে তালিকাভুক্ত ৫৫ জন জঙ্গির মধ্যে এখনো ২৮ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তাঁদের গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত জঙ্গিবিরোধী র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সমন্বিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।