আগামী শনিবার যশোরে জনসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। পূর্বঘোষিত এ কর্মসূচির মাত্র এক দিন বাকি থাকলেও এখনো প্রশাসনের অনুমতি পায়নি দলটি। বিপরীতে একই দিনে বিএনপির পছন্দের তালিকায় থাকা টাউন হল মাঠে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত একটি সংগঠনকে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন। এ ছাড়া যশোরে বিএনপি কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে তা প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ।
এ অবস্থায় ২৭ মে যেকোনো মূল্যে শহরের ভোলা ট্যাংক (নীল রতন ধর) সড়কে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে দলটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত এ ঘোষণা দেন। ওই সমাবেশে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। তিনি অসুস্থ থাকায় প্রধান অতিথি হিসেবে যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
একই দিনে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত শ্রমিক সংগঠন ও বিএনপি পাশাপাশি সমাবেশ করার ঘোষণায় যশোরের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। উভয় পক্ষের মিছিল–সমাবেশে শক্তির মহড়া জানান দেওয়ার চেষ্টা করবে দুই দল। এতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। যদিও এ ব্যাপারে বিচলিত নন পুলিশ ও বিএনপির নেতারা।
যশোর জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, একই দিনে দুটি সমাবেশ হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার শঙ্কা নেই। কারণ, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করার জন্য পুলিশ দুই পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে। তা ছাড়া পুলিশের অতিরিক্ত সতর্কতা থাকবে বলে তিনি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির নেতা অনিন্দ্য ইসলাম বলেন, ‘২৭ মে যশোরে বিএনপির সমাবেশ ঘোষণা করা হয় ১৬ মে। তাঁদের লক্ষ্য ছিল গোটা যশোর শহর সমাবেশস্থলে পরিণত করা। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির মহাসচিবের যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর পুলিশ ও আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা মরিয়া হয়ে উঠেছেন। নেতা-কর্মীদের গণগ্রেপ্তার শুরু করে পুলিশ। এক সপ্তাহে যশোরের আটটি উপজেলা থেকে অন্তত ১৪০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সমাবেশ প্রতিহত করতে টাউন হল মাঠে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত শ্রমিক সংগঠন। যদিও এতে আমরা বিচলিত না। একই দিনে দুটি সমাবেশ হতেই পারে। আমরা আমাদের কাজ করব। তাঁরা তাঁদের কাজ করবে।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ নেতা-কর্মীদের মুক্তি, সরকার পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে যশোরে সমাবেশ করবে বিএনপি। সমাবেশ সফল করতে ইতিমধ্যে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রস্তুতি সভা করেছে জেলা বিএনপি। সমাবেশের এক দিন বাকি থাকলেও এখনো প্রশাসন বিএনপির সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে সমাবেশ প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের হুমকি ও সমাবেশের অনুমতি না পাওয়া নিয়ে বিএনপির অবস্থান জানাতে আজ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জেলা বিএনপি।
সংবাদ সম্মেলনে অনিন্দ্য ইসলাম বলেন, ‘দুঃখের বিষয় আমরা সমাবেশস্থলের অনুমতি চাইলেও প্রশাসন এখনো অনুমতি দেয়নি। প্রথমে আমরা শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ ও টাউন হল মাঠে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছিলাম। কিন্তু ঈদগাহ মাঠে ঈদের প্যান্ডেল থাকায় অনুমতি দেয়নি। আর টাউন হল মাঠে আমাদের অনুমতি না দিয়ে সরকার দলীয় শ্রমিক সংগঠনকে অনুমতি দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রশাসন সমাবেশ করার অনুমতি দিলেও করব, না দিলেও করব। ২৭ মে শহরের ভোলা ট্যাংক রোডে সমাবেশ করা হবে। সরকার দলের হামলা-হুমকি উপেক্ষা করেই সমাবেশ সফল করা হবে। বিএনপি সমাবেশের আয়োজন করলেও বাস্তবায়ন করবে যশোরবাসী।’
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সৈয়দ সাবেরুল হক বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসের রাজনীতি পছন্দ করি না। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হুমকিতে আমরা বিচলিত না। ওনারা তো সমাবেশ করতে দেবেন না বলেই প্রশাসনকে দিয়ে এখনো সমাবেশস্থলের অনুমতি দিতে দেননি। আর পুলিশ দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠাচ্ছেন। রাজপথে প্রতিবন্ধকতা আসবেই; আমরা সেটি পার করেই সমাবেশ সফল করব।’
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন, শহর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির সমাবেশ প্রতিহতের হুমকি দিয়ে রেখেছেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম। তবে আওয়ামী লীগের ওই হুমকি আমলে নিচ্ছে না বিএনপি। তাঁরা যেকোনো মূল্যে সমাবেশ সফল করতে চান। এদিকে টাউন হল মাঠে শ্রমিক সমাবেশের জন্য সরকার–সমর্থিত ‘সম্মিলিত শ্রমিক ঐক্য পরিষদ’ যশোর জেলা শাখা মঞ্চ ও প্যান্ডেল তৈরির কাজ করছে। শহরে প্রচারও চালাতে দেখা গেছে।
জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশ জনগণ যদি প্রতিহত করে তার জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী থাকবে না। ২৭ মে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি রাখা হয়নি।’
যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শহরের ভোলা ট্যাংক রোড চেয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কিছুক্ষণ আগে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। সব দল যাতে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে পারে, সে বিষয় আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। দলের নেতাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কী কী শর্তে সমাবেশ করা যাবে। সেটা পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রুতই তাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।’