নিয়োগ নিয়ে হট্টগোল, কার্যালয় ছেড়ে নিয়োগ বোর্ড গেল উপাচার্যের বাংলোয়

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগকে কেন্দ্র করে উপাচার্যের কার্যালয়ে শিক্ষক–কর্মকর্তাদের হট্টগোলছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম নিয়োগ বোর্ড বন্ধের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-কর্মকর্তাদের একটি অংশ। তাঁদের দাবি, নিয়োগ বোর্ডে অনিয়ম-দুর্নীতি করা হচ্ছে। তবে উপাচার্য বলছেন, যাঁরা নিয়োগ বোর্ডে আছেন, তাঁদের চেয়ে ফেয়ার (স্বচ্ছ) কেউ বাংলাদেশে হতে পারে না।

এ নিয়ে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপাচার্যের কার্যালয়ে উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষকদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সেখানে হট্টগোল তৈরি সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে দিনভর উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস। শিক্ষক-কর্মকর্তারা উপাচার্যের কার্যালয় থেকে ফিরে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছেন। দুপুরের পর ইমাম নিয়োগ বোর্ড প্রশাসনিক ভবন থেকে উপাচার্যের বাংলোতে নিয়ে যাওয়া হয়।

আরও পড়ুন

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন নতুন নিয়োগ বন্ধ থাকার পর আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম নিয়োগের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। নিয়োগপ্রক্রিয়ায় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বোর্ড বাতিলের দাবি করে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের একটি পক্ষ। সকালে উপাচার্যের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁরা উপাচার্যের বিরুদ্ধে ওঠা আগের নিয়োগ-সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত নতুন নিয়োগ বন্ধের দাবি জানান। পরে শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতা-কর্মীরা নিয়োগ চালু রাখার দাবিতে উপাচার্যের কার্যালয়ে ঢোকেন। তাঁরা উচ্চ স্বরে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে শিক্ষকদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়ান। উপাচার্যের সঙ্গেও বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম। গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে উপাচার্যের কণ্ঠসদৃশ ১৭টি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে দুদক। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনও (ইউজিসি) তদন্ত করছে। এর মধ্যে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম নিয়োগের বোর্ড ছিল।

আরও পড়ুন

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, সকালে ওই নিয়োগ বোর্ড বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা সমিতি ও প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন ‘শাপলা ফোরামের’ নেতারা উপাচার্যের কার্যালয়ে যান। শিক্ষক নেতারা বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ভিসির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সুরাহা হবে না, ততক্ষণ কোনো নিয়োগ বোর্ড হবে না। অন্যদিকে নিয়োগপ্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে চালু রাখার দাবিতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। তখন শিক্ষক ও নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্চবাচ্য ও বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

এ সময় উপাচার্যের পাশে সহ–উপাচার্য মাহবুবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন ভূঁইয়াসহ কয়েকজন শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন। উপাচার্যের টেবিলের অন্য প্রান্তে ছিলেন সাবেক প্রক্টর মাহবুবুর রহমান, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রহমান, শাপলা ফোরামের সভাপতি পরেশ চন্দ্র বর্মণ, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আরেফীন, ছাত্র উপদেষ্টা শেলীনা নাসরীনসহ অন্তত ৩০ জন শিক্ষক।

আরও পড়ুন

উপাচার্যের কার্যালয়ে ছাত্রলীগকে ডেকে এনে শিক্ষকদের অপমান করা হয়েছে দাবি করেন শিক্ষকেরা। তাঁরা কার্যালয় থেকে বের হয়ে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন করেন। এ ছাড়া সকাল থেকে কর্মকর্তারা নিয়োগ বোর্ড বাতিলের দাবিতে প্রশাসন ভবনের সামনে আন্দোলন করেন। শিক্ষকদের দাবি, ‘দুর্নীতিবাজ’ উপাচার্যকে দিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করাতে চায় একটি পক্ষ।

মানববন্ধনে ছাত্র উপদেষ্টা শেলীনা নাসরীন বলেন, ‘কেন ছাত্রদের শিক্ষকদের মুখোমুখি করা হলো? পরিকল্পিতভাবে তাঁদের ডেকে আনা হয়েছে। শিক্ষকেরা লাঞ্ছিত হলেন, অপমানিত করা হলো। যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে ভবিষ্যতে ক্লাসরুম থেকে শিক্ষকদের বের করে দেওয়া হতে পারে। এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমি এখানে থাকব।’

আরও পড়ুন
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী ওরফে আরাফাত বলেন, ‘নিয়োগসংক্রান্ত বিষয়ে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ইমাম নিয়োগেও কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। উপাচার্যের কক্ষে কারা গিয়েছেন, জানি না।’

বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আরেফীন প্রথম আলোকে বলেন, ইমাম নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে। আগেও ভিসির অডিও ফাঁস হয়েছে। সেগুলোর তদন্ত চলছে। সব মিলিয়ে এসব তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিয়োগ বন্ধ রাখতে বলা হচ্ছিল। কথাও চলছিল; কিন্তু হঠাৎ কিছু বহিরাগত ব্যক্তি প্রবেশ করে হট্টগোল করতে থাকেন। তাঁরা শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। এটা কাম্য না। মনে হচ্ছে, উপাচার্য পরিকল্পিতভাবে এটা করেছেন।

আরও পড়ুন

উপাচার্য শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘নিয়োগ বাণিজ্যের সাতে-পাঁচে আমি নেই। যাঁরা বোর্ডে আছেন, তাঁদের চেয়ে ফেয়ার বোর্ড বাংলাদেশে হতে পারে না। যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে, তাতে আমি বিব্রত হই, শক্তিশালীও হই। আজ কক্ষে যা হয়েছে, তা অপ্রত্যাশিত। কারা ঢুকেছে জানি না ও চিনি না। কয়েকজনের মুখ চিনি, কারও নাম জানি না। ছাত্র-শিক্ষক নিয়ে খেলি না। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে, আমি মুখোমুখি হচ্ছি। একটার প্রমাণ দিক।’

এদিকে দুপুরের পর ইমাম নিয়োগ বোর্ড প্রশাসনিক ভবন থেকে উপাচার্যের বাংলোতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বাংলোর প্রধান ফটক বন্ধ রাখা হয়েছে। ফটকের সামনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নিয়ে আছেন।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন