টানা ১৪ দিন ধরে ক্লাস বর্জন ও বিক্ষোভ, অধ্যক্ষ বললেন, ‘আমি নির্দোষ’

ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুরে বগুড়ার ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি চত্বরে
ছবি: সোয়েল রানা

বগুড়ার ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) শিক্ষার্থীদের নির্যাতনে সহায়তার অভিযোগ তুলে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের অপসারণসহ তিন দফা দাবিতে ১৪ দিন ধরে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ৩০ আগস্ট থেকে প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত।

আজ সোমবার সকাল থেকেই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দেখা গেছে। দুপুরে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আমায়াত উল হাছিন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির কাছে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে এসে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন। এ সময় অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি করে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে অধ্যক্ষ আমায়াত-উল-হাসিন তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে বসেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমি নির্দোষ।’

আজ বেলা ১১টায় প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, ছাত্রলীগের নেতা সজল কুমার ঘোষকে গ্রেপ্তার, অধ্যক্ষের অপসারণ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দাবিতে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী ক্লাস বর্জন করে ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করছেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা থেমে থেমে নানা স্লোগান দিচ্ছেন। প্রধান ফটকের কাছে আন্দোলনরত দুই শিক্ষার্থী রোহান ও মাহফুজ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের স্যালাইন দেওয়া হয়।

অধ্যক্ষ আমায়াত-উল-হাসিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০২০ সালের জুন মাসে এখানে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেছি। সজল কুমার ঘোষ এরও আগে থেকে প্রতিষ্ঠানে অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। আমি যোগদানের পর তাঁর নিয়োগ বাতিল করেছি। হোস্টেলের কক্ষ দখল করে অনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং শিক্ষার্থীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালানোর বিষয়ে কেউ কখনো আমার কাছে অভিযোগ করেননি।’ অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘২৯ আগস্ট আন্দোলনের আগে সজল ঘোষের অপকর্ম সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। পাঁচ সদস্যের হোস্টেল কমিটিও আগে থেকে কিছুই জানায়নি। এখন শিক্ষার্থীদের মতো আমিও সজলের গ্রেপ্তার চাই। শিক্ষার্থীরা আমার অপসারণ দাবি করছে, আমি নির্দোষ। তদন্ত কমিটি যদি মনে করে, আমি দোষী। তবে অধিদপ্তর থেকে যে শাস্তি দেবে, তা মাথা পেতে নেব।’

আরও পড়ুন

সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষার্থীদের মারধর, আসন-বাণিজ্য, মাদকসেবন ও পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায়ের অভিযোগ আছে ছাত্রলীগের নেতা সজল কুমার ঘোষের বিরুদ্ধে। তাঁকে আসামি করে ২ সেপ্টেম্বর বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন আইএইচটির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হোসেন। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন আজ পর্যন্ত তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। সজল কুমার ঘোষকে নানাভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আসা অধ্যক্ষকে এখান থেকে প্রত্যাহারের জন্য দুই সপ্তাহ ধরে আন্দোলন চললেও তাঁকে প্রত্যাহার করা হয়নি। শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, তিন দফা দাবি আদায় হলেই আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে। এই দাবির মধ্যে আছে ছাত্রলীগের নেতা সজলকে গ্রেপ্তার, অযোগ্য অধ্যক্ষকে প্রত্যাহার ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

আন্দোলন শুরুর পর থেকে প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ আমায়াত-উল-হাসিন। আজ সোমবার তিনি কার্যালয়ে আসেন
ছবি: প্রথম আলো
আরও পড়ুন

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আইএইচটির ছাত্র না হয়েও এক যুগ ধরে অবৈধভাবে ছাত্রাবাসের ২১৮ নম্বর কক্ষ দখল করে রেখেছেন সজল কুমার ঘোষ। সেখানে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছেন তিনি। শিক্ষার্থীদের মারধর, হলে সিট-বাণিজ্য, মাদকসেবন এবং পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা জোর করে আদায় করেন সজল। গত ২৯ আগস্ট বিকেল থেকে তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে বিক্ষোভে নামেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে ওই দিনই আত্মগোপনে চলে গেছেন সজল ঘোষ।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে ৩ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিকে পাঁচ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। সে অনুযায়ী, আজ সোমবারের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা। তদন্ত কমিটির প্রধান ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (অলটারনেটিভ মেডিসিন) গাউসুল আজিম চৌধুরী বলেন, শেষ দিন হলেও সমস্যা নেই। আজকের মধ্যেই তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

আরও পড়ুন