নেতা-কর্মীদের বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে শামীম হকের সমর্থক ও পুলিশ

ফরিদপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন এ কে আজাদ। শনিবার দুপুরে শহরের ঝিলটুলী মহল্লায়
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ (ঈগল প্রতীক) অভিযোগ করেছেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে আমার নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। তাঁরা যাতে বাসায় না থাকেন, এই ভয়ও দেখানো হয়। শামীম হকের বাহিনী ও পুলিশ এই হুমকি দিচ্ছে।’

ফরিদপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন এ কে আজাদ। আজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের ঝিলটুলী মহল্লা এলাকায় নিজ বাসভবনে এ সংবাদ সম্মেলন করেন এ কে আজাদ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ঈগলের পক্ষে জনসমর্থন দেখে, তা নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শামীম হক ও তাঁর সমর্থকেরা। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে বারবার নানা কায়দায় বাধার সৃষ্টি করছেন। গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ঈগল সমর্থক-নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা, মামলা, ভয়ভীতি অব্যাহত রয়েছে। ক্যাম্প পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটাচ্ছে। এসব ঘটনায় ৫টি মামলা এবং ১৪টি লিখিত অভিযোগ (জিডি) করার পরও দু-একটি ছাড়া তেমন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

আজাদ আরও বলেন, গত রাতেও পুলিশ ঈগল সমর্থক একাধিক নেতা-কর্মীর বাসায় হানা দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়েছে। এতে করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গতকাল রাতে আলিয়াবাদ ইউনিয়নে পলি মেম্বারের বাড়িতে হামলার ঘটনায় ছয়জনকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। মাচ্চরে হামলার ঘটনায় তিনজনকে আহত হয়েছে। অম্বিকাপুরে সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাইদ চৌধুরীর বাড়ির কাছ থেকে ঈগলের সমর্থক তোতা চৌধুরী ও রইস মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ।

এ ছাড়া শহর যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী সোহাগকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। ভোটের মাঠে ভীতি সঞ্চার করতে ও সুষ্ঠু পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করতে হামলা-হুমকি ও ভয় দেখানো অব্যাহত রয়েছে। বিনা পরোয়ানায় (ওয়ারেন্ট) নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অথচ মামলা নিয়েও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে অনেকেই।

আরও পড়ুন

এ কে আজাদ প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, তিনি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করবেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়, যাতে মানুষ পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন।

আজাদ বলেন, ‘আমি যখন আপনাদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করছি, ঠিক এই সময়েই অনেক নেতা-কর্মীকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে আমার কাছে খবর আসছে। নির্বাচনের বাকি আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। এর মধ্যেই কোথাও কোথাও নিজেরা নিজেদের ক্যাম্পে আগুন দিয়ে আমার নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি অব্যাহত রেখেছে। যাতে করে নির্বাচন ঘিরে একধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। যেখানে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াটা আমার লক্ষ্য, সেখানে আমার প্রতিপক্ষ শামীম হক শেষ মুহূর্তে এসে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা সৃষ্টি করছে।’

আরও পড়ুন

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা বিপুল ঘোষ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শামসুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ফারুক হোসেন, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভী মাসুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হক বলেন, ‘উনি (এ কে আজাদ) যেসব অভিযোগ করছেন, এসবের কোনো ভিত্তি নেই। বরং আজাদের কর্মীরাই আমার নির্বাচনী ক্যাম্প পুড়িয়ে, আমার কর্মীদের ওপর হামলা করছেন। আজাদ সাহেব দুইটা মিডিয়ার মালিক। এ জন্য উনি ইচ্ছা হলেই সংবাদ সম্মেলন করতে পারেন, অনেক কথা বলতে পারেন। আসলে উনি (আজাদ)—মাইরাও জিততে চান, কাইন্দাও জিততে চান।’

আরও পড়ুন

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলমের সরকারি মুঠোফোনে চার দফা ফোন করা হলে তিনি ফোন না ধরায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আবদুল গাফফার বলেন, পুলিশ কারও পক্ষে কাজ করছে না। এ কে আজাদ অভিযোগ বেশি করছেন এবং সেই অভিযোগ অনুযায়ী তাঁরা ব্যবস্থা নিচ্ছেন।‌ পুলিশ অন্যায়ভাবে কাউকে হয়রানি করছে না। অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, পুলিশ সুপার জেলায় একেবারে নতুন। তবে তিনি পেশাদারি নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি তাঁকে অভিযোগগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। একপক্ষীয় অভিযোগগুলো আমলে নেওয়া হচ্ছে, এ অভিযোগ ঠিক নয়। কেননা, স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। প্রশাসন যেকোনো মূল্যে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করবে। তাদের কাজ একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও মুক্ত পরিবেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেওয়া। কাউকে জেতানো কিংবা হারানো তাদের দায়িত্ব নয়। সে দায়িত্ব ভোটারদের।