বাহারি নাম আর স্বতন্ত্র স্বাদের ২২৭ জাতের আমের মেলা
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিখ্যাত ক্ষীরশাপাতি, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, ফজলি তো আছেই। জাপানের মিয়াজাকি, আফ্রিকার ব্রুনাই কিং, আমেরিকান রেড পালমার, ভারতের আম্রপালিও আছে। মনমচকা, বউভোলানি, রানিপসন্দ, গুলবাহার, কালুভোগ, ইলামতী, রাজভোজের মতো বাহারি নামের আমও সাজানো থরে থরে।
এমন ২২৭ জাতের আমের সমাহারে চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়েছে আম মেলা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু মঞ্চের সামনে এ মেলার আয়োজন করা হয়। রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় এ আম মেলার আয়োজন করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখা।
প্রধান অতিথি হিসেবে এ আম মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সদর আসনের সংসদ সদস্য আবদুল ওদুদ। এ উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান।
উদ্বোধনের পর মেলা ঘুরে দেখা যায় আশ্বিনা, বোম্বাই ক্ষীরশা, ক্ষুদি ক্ষীরশা ছাড়াও মোহনবাঁশি, মোহনভোগ, মিশ্রিকান্ত, রংভাদুড়ি, জাদুভোগ, জিলাপিক্যাড়া, সাটিয়ারক্যাড়া, গোলাপ খাস, কুমাপাহাড়ি গৌড়মতি, ইলসাপেটি, বাতাসা, ভুজাহারি, রঙ্গিলা, সিঁদুরির মতো আম সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
বিভিন্ন জাতের আম ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন গোপালগঞ্জ থেকে বেড়াতে আসা মো. শামীম। এ সময় তিনি বলেন, আমের মৌসুম উপলক্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বেড়াতে এসেছেন তিনি। এত জাতের আম জীবনে দেখেননি। বেড়াতে এসে এটা এক বাড়তি পাওনা বলে জানান তিনি।
আম মেলায় আসা লেখক ও গবেষক জাহাঙ্গীর সেলিম (৭০) বলেন, শুধু বেশি উৎপাদনের জন্য নয়, এত জাতবৈচিত্র্যের কারণেই চাঁপাইনবাবগঞ্জকে আমের রাজধানী বলা হয়। অসংখ্য বেনামি সুস্বাদ গুটি জাতের আম ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জে। সেগুলোর অনেকগুলোই হারিয়ে গেছে। ১৯৮৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম গবেষণা কেন্দ্র স্থাপিত হলেও বিভিন্ন জাতের আমগাছ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ হিসেবে বিষয়টি ব্যথিত করে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পলাশ সরকার প্রথম আলোকে বলেন, আমের আদি অঞ্চল ও জাতবৈচিত্র্যে ভরপুর চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম। আর কোনো জেলায় এত জাতের আম নেই। প্রকৃতিতে দৈবভাবে শংকরায়ণের মাধ্যমে এত জাতের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি জাতেরই আছে স্বতন্ত্র স্বাদ ও বৈশিষ্ট্য। চাঁপাইনবাবগঞ্জে একসময় তিন শতাধিক জাত ছিল বলে জানতে পেরেছেন। অনেক জাতই বিলুপ্ত হয়ে গেছে বা বিলুপ্তির পথে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষে কেবল ২২৭টি জাত সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। যদিও বেশ কিছু বিদেশি জাতের আম মেলাতে রয়েছে। এগুলো এখন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শৌখিন আমচাষিরা তাঁদের বাগানে চাষ করে থাকেন।
পলাশ সরকার বলেন, এত জাতের আম সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের ধারণা নেই। মূলত নতুন প্রজন্মের মানুষের কাছে ও বাইরের জেলার মানুষের কাছে এত জাতের আমকে পরিচিত করাতে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। কোথা থেকে কোন আমচাষির কাছ থেকে বিভিন্ন জাতের আম সংগ্রহ করা হয়েছে, তা উল্লেখ করে ট্যাগ লাগানো হয়ছে। এতে আগ্রহী চাষি ও আমবিজ্ঞানীদের কাজে লাগে।