মাগুরায় গ্রেপ্তার অস্ত্রধারী যুবক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, দাবি বিএনপির

মাগুরায় স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে এই যুবককে দেখা যায়। তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ
ছবি: সংগৃহীত

মাগুরায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ছুটতে থাকা যুবক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বলে দাবি করেছে স্থানীয় বিএনপি। তাঁর নাম শাহিন খান (২৫)। অবশ্য ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে মাগুরা সদর উপজেলার আলোকদিয়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে সদর থানা-পুলিশ।

গত বুধবার দুপুর ১২টার দিকে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষের সময় ধারণ করা ভিডিও ও স্থির চিত্রে কলেজ রোডে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে এক যুবককে দেখা যায়। সেই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ওই যুবককে খুঁজছিল পুলিশ।

পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার ওই যুবকের নাম শাহিন খান। তাঁর বাড়ি জেলা শহরের স্টেডিয়াম পাড়ায়। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতার করা মামলায় ৯০ নম্বর আসামি শাহিন খান। তাঁর নামে মাদক এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এর আগে আরও দুটি মামলা রয়েছে।

আজ রোববার বিকেলে মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সেকেন্দার আলী প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্ত শাহিনকে আদালতে পাঠানো হচ্ছে। তাঁর হাতে দেখা যাওয়া অস্ত্রটি এখনো উদ্ধার করা যায়নি। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করবে পুলিশ।

গত বুধবার স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় তিন শতাধিক মানুষকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি বারিউল ইসলাম ওরফে রিয়াদ। মামলায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভীতি সৃষ্টি ও হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে করা ওই মামলায় ১০৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১৫০ থেকে ২০০ জনকে। আসামিদের মধ্যে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের শীর্ষ নেতা ছাড়াও বিএনপির নেতা-কর্মীরা আছেন। ওই মামলায় শাহিন খানকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।

আরও পড়ুন

মামলাটির প্রায় সব আসামি বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও অস্ত্রধারী যুবক ছাত্রলীগের সাবেক নেতা বলে দাবি করছেন বিএনপি নেতারা। শনিবার দুপুরে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলী আহম্মদ ও সদস্যসচিব আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মামলার ৯০ নম্বর আসামি শাহিন খান মাগুরা আদর্শ কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। তাঁকে সেদিন আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে এবং তিনি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গেই ছিলেন।

বিএনপির দাবি, সেদিন শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান। সেই অপকর্ম ঢাকতে আবার বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৯ এপ্রিল মাগুরা আদর্শ কলেজের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি শেখ রেজাউল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মীর মেহেদী হাসান। ওই কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নাম ছিল শাহিন নামে এক যুবকের। আদর্শ কলেজের ওই কমিটির সভাপতি ছিলেন নাজমুল হুদা ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জাহিদ হোসেন।

আরও পড়ুন


এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শেখ রেজাউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই (২৯ এপ্রিল) তারিখে আমরা কোনো কমিটি ঘোষণা করেছিলাম বলে মনে নেই। আর আমরা আদর্শ কলেজের যে আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছিলাম, তাতে শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ছিল।’

ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শাহিন নামের ওই যুবক ওই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে ছিল কি না, এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। অবশ্য শৃঙ্খলা ভঙ্গের (শিক্ষার্থীদের ভর্তি জালিয়াতি) অভিযোগে ওই কমিটি পরবর্তী সময়ে বাতিল করা হয়েছিল।’

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্য, ছাত্রলীগ, যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে শাহিন নামের ওই যুবকের অসংখ্য ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এমনকি মামলার বাদীও তাঁর (শাহিন) পাশাপাশি বসে বৈঠক করছেন, এমন ছবিও রয়েছে। ঘটনাস্থলে ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গেও তাঁকে কথা বলতে দেখা গেছে। আর কী প্রমাণ চায় তারা (আওয়ামী লীগ)? অথচ নিজেদের অপকর্মের দায় আমাদের ওপর চাপাতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে উল্টো মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। তার মধ্যে ওকে (শাহিনকে) আবার আসামি হিসেবে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, বিএনপির কর্মী হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার জন্য।’

আরও পড়ুন