খুলনার সেই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা ও হয়রানির অভিযোগ

খুলনা জেলার মানচিত্র

খুলনা মহানগরের শেখপাড়ায় অবস্থিত হক নার্সিং হোমের চিকিৎসক শেখ নিশাত আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে হয়রানি ও শিশুর অঙ্গহানির অভিযোগে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে সোনাডাঙ্গা থানায় মামলাটি করেন নুসরাত আরা নামের এক নারী। একই সঙ্গে বুধবার দুপুরে খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।

এর আগে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে একই থানায় নুসরাত আরা ও তাঁর স্বামী পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নাঈমুজ্জামানের বিরুদ্ধে মারধর ও হাসপাতাল ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা করেন চিকিৎসক শেখ নিশাত আবদুল্লাহ।

এদিকে ২৫ ফেব্রুয়ারি হক নার্সিং হোমে অস্ত্রোপচার চলা অবস্থায় চিকিৎসক শেখ নিশাত আবদুল্লাহকে রোগীর স্বজনেরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন চিকিৎসকেরা। এ ঘটনার প্রতিবাদে খুলনার সব হাসপাতালে আজ সকাল থেকে ২৪ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন

নাঈমুজ্জামান সাতক্ষীরা পুলিশ লাইনে কর্মরত আছেন। নিশাত আবদুল্লাহ খুলনার সরকারি শেখ আবু নাসের হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে তাঁর মুঠোফোনে ১০ বার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি এই চিকিৎসকের।

নুসরাত আরা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, গত ৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর মেয়েকে নিয়ে শেখপাড়া হক নার্সিং হোমে নিশাত আবদুল্লাহর চেম্বারে চিকিৎসার জন্য যান। এ সময় তাঁকে সেখানে প্রায় দেড় ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁর মেয়েকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নেওয়া হয়।

এই ফাঁকে নিশাত আবদুল্লাহ তাঁকে বিভিন্ন আপত্তিকর কথাবার্তা বলেন। একপর্যায়ে তাঁর হাত ধরে টেনে কাছে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে তিনি মেয়েকে নিয়ে অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসেন। বিষয়টি ক্লিনিক মালিককে জানানো হলেও তিনি ব্যবস্থা নেননি। উল্টো ঘটনা অন্য কাউকে না বলার জন্য হুমকি দেন।

এ বিষয়ে সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, দুটি মামলাতেই তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।

বুধবার দুপুরে করা সংবাদ সম্মেলনে নুসরাত আরা বলেন, এক বছর বয়সে তাঁদের একমাত্র সন্তান অথৈয়ের হাত পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত বছরের ২১ আগস্ট খুলনার সরকারি শেখ আবু নাসের হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে গেলে নিশাত আবদুল্লাহ দ্রুত অস্ত্রোপচার করাতে বলেন। তাঁরা ওই সরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করাতে চাইছিলেন। কিন্তু হক নার্সিং হোম নামের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন নিশাত আবদুল্লাহ।

আরও পড়ুন

নুসরাত আরা আরও বলেন, গত ১৮ জানুয়ারি মেয়ের হাতের আঙুলে অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর প্রতিদিন ড্রেসিং করাতে হচ্ছিল। একপর্যায়ে আঙুলের অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক দুই ঘণ্টা পরপর হাতের ছবি তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠাতে বলেন। নির্দেশনা অনুযায়ী নিয়মিত ছবি পাঠাতে থাকেন তিনি। এই সুযোগে ওই চিকিৎসক হোয়াটসঅ্যাপে তাঁকে ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা পাঠাতে থাকেন। একপর্যায়ে চেম্বারে একা দেখা করার জন্য বলেন। তাঁর কথায় রাজি না হওয়ায় তিনি অথৈয়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন।

সংবাদ সম্মেলনে এই নারী আরও বলেন, ‘গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে হঠাৎ করে অথৈয়ের একটা আঙুল হাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দ্রুত হক নার্সিং হোমে ছুটে গেলে চিকিৎসক নিশাতসহ অন্যরা চিকিৎসা করাতে রাজি হননি। রাত ১২টার পর কোনোরকমে ড্রেসিং করে বাড়ি ফিরে আসেন তাঁরা। এর পর থেকে অথৈয়ের কোনো চিকিৎসা হচ্ছিল না। এর মধ্যে জানতে পেরেছি, তাদের বাবার নামে মামলা হয়েছে। চিকিৎসকেরা ধর্মঘট ডেকেছেন। ওই ঘটনায় চিকিৎসকদের কাছে ক্ষমা চাইলেও তাঁরা ক্ষমা না করে বিভিন্ন কর্মসূচি দিচ্ছেন।’