সাফজয়ী নিলুফাকে ফুল ছিটিয়ে বরণ করে নিলেন এলাকাবাসী

সাফজয়ী নিলুফা নিজ এলাকায় পৌঁছালে এলাকাবাসী তাঁকে ফুল ছিটিয়ে বরণ করে নেন। শনিবার বিকেলে শহরের জুগিয়া সবজিফার্ম পাড়ায়ছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ায় সাফজয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সদস্য নিলুফা ইয়াসমিন নিলাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার বেলা একটায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এ সংবর্ধনার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। তিনি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিলুফাকে এক লাখ টাকা দেন। অনুষ্ঠানে নিলুফা ও তাঁর মা বাছিরন আক্তারকে ফুল, ক্রেস্ট ও উপহার দেওয়া হয়। এ সময় নিলুফার নানিসহ ছোট বোন উপস্থিত ছিলেন।

কখনো কল্পনা করতে পারিনি এভাবে আমাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। শহরে ঘোরার সময় অনেকে অভিবাদন জানিয়েছেন। আমি অভিভূত। আমার খুবই ভালো লেগেছে।
নিলুফা ইয়াসমিন নিলা, সাফজয়ী নারী ফুটবলার

এর আগে দুপুর ১২টায় ঢাকা থেকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সাদা প্রাইভেট কারে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার সৈয়দ মাছ উদ রুমী সেতু এলাকায় আসেন নিলুফা। সেখানে আগে থেকেই জেলা প্রশাসনের একটি পিকআপ গাড়ি ফুল দিয়ে সাজানো ছিল। ওই গাড়িতে নিলুফাকে কুষ্টিয়া শহরে আনা হয়। গাড়িতে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

লালন আখড়াবাড়ী হয়ে বড় বাজার দিয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করানো হয়। এ সময় সড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষ নিলুফাকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। নিলুফাও হাত নেড়ে অভিবাদন গ্রহণ করেন। থানার মোড় দিয়ে মজমপুর এলাকায় পৌঁছানোর পর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার নিলুফাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমীন আক্তার গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দেন।

আরও পড়ুন

শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নিলুফা ইয়াসমিন তাঁর তিন মিনিটের বক্তব্যে বলেন, ‘কখনো কল্পনা করতে পারিনি এভাবে আমাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। শহরে ঘোরার সময় অনেকে অভিবাদন জানিয়েছেন। আমি অভিভূত। আমার খুবই ভালো লেগেছে।’

কুষ্টিয়ার সন্তান প্রয়াত বাফুফে কর্মকর্তা আহম্মদ সৈয়দ আল ফাত্তাহকে স্মরণ করে নিলুফা বলেন, ‘আমার নিলুফা হওয়ার পেছনে তাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি। আজকের দিনে তাঁকে খুব মনে পড়ছে।’

সাফজয়ী নিলুফাকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। তুলে দেওয়া হয় ক্রেস্ট। শনিবার দুপুরে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অনুপ কুমার নন্দী, জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মকবুল হোসেন, কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম, প্রথম আলো কুষ্টিয়ার নিজস্ব প্রতিবেদক তৌহিদী হাসান প্রমুখ।

পুলিশ সুপার খাইরুল আলম বলেন, ফুটবলে নবজাগরণ উঠেছে। এই সমাজ থেকে নারীরা বের হয়ে এসেছেন। তাঁদের সাহস দিতে হবে। দেশে অনেক নিলুফা লুকিয়ে আছে। তাদের কাজে লাগাতে হবে।

আরও পড়ুন

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, আজ আনন্দের দিন, গর্বের দিন। নিলুফার মায়ের সাহস, পরিশ্রম, ত্যাগ ও দৃঢ় মনোবল নিলুফাকে এগিয়ে নিয়েছে। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ, ধন্যবাদ। আজকের এই সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে আরও নিলুফা বের হয়ে আসবে। সব সময় তাদের পাশে থাকবে জেলা প্রশাসন।

অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পর্বে নাচ পরিবেশন করেন শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা। এরপর ফুল দিয়ে সাজানো পিকআপে করে নিলুফাকে তাঁর বাড়ি শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের জুগিয়া সবজিফার্ম পাড়ায় পৌঁছে দেওয়া হয়। জুগিয়া সড়কে প্রবেশ করতেই এলাকার নারী-পুরুষসহ শিশুরা ফুল ছিটিয়ে তাঁকে অভিবাদন জানায়। বেলা তিনটায় বাড়িতে পৌঁছালে নিলুফার মা তাঁকে ঘরে নিয়ে যান। এ সময় তাঁকে দেখতে বাড়িতে এলাকার মানুষ ভিড় করে।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আগে খোলা পিকআপে কুষ্টিয়া শহর প্রদক্ষিণ করেন সাফজয়ী নিলুফা। শনিবার দুপুরে শহরের মুজিব চত্বর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

নিলুফার মা বাছিরন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রায় তিন মাস পর নিলুফা বাড়িতে এল। দেশের সুনাম বয়ে এনেছে। আমি নিজে গর্বিত, সারা দেশ গর্বিত।’

নিলুফা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি জানতাম, শুধু এলাকার কাউন্সিলর আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। এখন দেখছি, পুরো ওয়ার্ডের মানুষ দাঁড়িয়ে। এতে আমি সারপ্রাইজড। কী বলব, ভাষা হারিয়ে ফেলছি। মানুষের এত ভালোবাসা।’

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন