‘সাধারণ মানুষের যে দুর্ভোগটা হলো, এটা কিন্তু সরকারের বিপক্ষেই গেল’

বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের কারণে গতকাল থেকেই সিলেটের সড়কে যান চলাচল বন্ধ আছে। যানবাহন না চলায় ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ছবিটি আজ সকাল সাড়ে সাতটার দিকে তোলাছবি: আনিস মাহমুদ

সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগে পরিবহননেতাদের ডাকা ধর্মঘট এবং থ্রি-জি ও ফোর-জি ইন্টারনেট–সেবা বন্ধ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাঁরা বলেছেন, গণসমাবেশে যাঁরা যোগ দেওয়ার, তাঁরা ঠিকই নানা কৌশলে যোগ দিয়েছেন। মাঝখানে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ শুরু হয়েছে। এর আগে বেলা ১১টার দিকে নগরের বন্দরবাজার এলাকার মাছবাজারে মইনুল হোসেন নামের শহরের এক বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাসায় মাছ নেই। তাই কিনতে এলাম। যানবাহন বন্ধ, এ কারণে প্রায় আধা ঘণ্টা হেঁটে মাছবাজারে এলাম। মানুষ ঠিকই বুঝেছে, এই ধর্মঘটের পেছনে সরকারের হাত রয়েছে। সাধারণ মানুষের যে দুর্ভোগটা হলো, এটা কিন্তু সরকারের বিপক্ষেই গেল।’

আরও পড়ুন

মইনুলের মতো নগরের বিভিন্ন এলাকার নয়জন মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রথম আলোর এ প্রতিবেদক। তাঁরা সবাই বলেছেন, কর্মসূচিটি বিএনপির, কিন্তু তাদের কর্মসূচিতে বাধা দিতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে যে দুর্ভোগ দেওয়া হয়েছে, তা আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য কেবল দুর্নামই বয়ে আনবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগরের বাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ও ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, পরিবহনশ্রমিকেরা যে ধর্মঘট ডেকেছেন, এর পেছনে যে সরকারের হাত রয়েছে, সেটা বোঝার কারও বাকি নেই। দেশের প্রতিটি অঞ্চলে বিভাগীয় সমাবেশকে ঘিরে পরিবহন ধর্মঘট ডেকে সাধারণ মানুষকে অযথাই দুর্ভোগে ফেলা হয়েছে। অথচ প্রতিটি সমাবেশই সফল হয়েছে। তাহলে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে এমন বাধা দিয়ে লাভটা কী হলো?

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বিরোধী দলের গণসমাবেশ সফল না হওয়ার জন্য সরকার যে শিশুসুলভ আচরণ করেছে, তা হাস্যকর। এমন আচরণ জনভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি বিভাগীয় গণসমাবেশে পরিবহন ধর্মঘট দিয়ে লোকসমাগম বন্ধের চেষ্টা হয়েছে। সিলেটেও একই কাণ্ড করা হলো। সকাল থেকে ইন্টারনেট-সংযোগ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। যতই বাধা দেওয়া হোক, দলীয় নেতা-কর্মীরা এসব কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে সমাবেশ ঠিকই করত। কিন্তু সরকারি দলের বাধার কারণে সাধারণ মানুষ অংশ নিয়ে সমাবেশকে এখন সত্যিকার অর্থেই গণসমাবেশে পরিণত করবে।

আরও পড়ুন

বিএনপির প্রথম গণসমাবেশ হয় গত ১২ অক্টোবর, চট্টগ্রামে। এরপর ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল ও ফরিদপুরে (বিএনপির সাংগঠনিক বিভাগ) গণসমাবেশ করেছে বিএনপি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ ছাড়া বাকি সব স্থানে সমাবেশের এক দিন আগে থেকেই ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়। ময়মনসিংহে গণসমাবেশের আগে অঘোষিতভাবে সব গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়।

একইভাবে সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে গতকাল শুক্রবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। তবে সিলেট জেলায় ধর্মঘট শুরু হয় আজ সকাল ছয়টা থেকে। এ ধর্মঘট চলবে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। তবে ধর্মঘট উপেক্ষা করে অনেকে মোটরসাইকেলে, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বা হেঁটেই সমাবেশে এসেছেন।