মনসুর–ওয়াদুদের দূরত্ব বাড়ছেই, একজন যেখানে যান, আরেকজন সেখানে নেই

আবদুল ওয়াদুদ ও মনসুর রহমান
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য মনসুর রহমান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছেই। একজন যেখানে যান, আরেকজন সেখানে নেই। দলের কর্মসূচিতেও দুজনকে একসঙ্গে দেখা যায় না। এতে দুই নেতার অনুসারীরাও বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

আবদুল ওয়াদুদ এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে দুবার সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ পান। আর দলের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হন মনসুর রহমান।

এবার পুঠিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের শোক দিবসের অনুষ্ঠানে বর্তমান সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সাবেক সংসদ সদস্য সেখানে যাননি। তিনি উপজেলার একটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শোক দিবসের কর্মসূচিতে ছিলেন। সেখানে আবার বর্তমান সংসদ সদস্য ছিলেন না। এর আগে পুঠিয়ায় শান্তি সমাবেশের কর্মসূচিতে বর্তমান সংসদ সদস্য ছিলেন। সাবেক সংসদ সদস্য আলাদা কর্মসূচি পালন করেছিলেন। আরও বিভিন্ন কর্মসূচিতে দুই নেতার অনুসারীরাও বিভক্ত হয়ে পড়ছেন।

১৮ আগস্ট পুঠিয়া উপজেলার আওয়ামী লীগের ব্যানারে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালিত হয়েছে। উপজেলার পিএন স্কুলমাঠে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য মনসুর রহমান। নিজের নির্বাচনী এলাকার এ অনুষ্ঠানে আবদুল ওয়াদুদ ছিলেন না।

আরও পড়ুন

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে দাওয়াত করা হয়নি। তিনি পুঠিয়াতেই ছিলেন। পরে ব্যানারও দেখেছেন, সেখানে তাঁর নাম নেই। এই জন্য তিনি যেতে পারেননি।

দাওয়াত না দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, গত বছর উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শোক দিবসের কর্মসূচির অনুষ্ঠানের ব্যানারে আবদুল ওয়াদুদের নাম দেওয়া হয়েছিল, দাওয়াত করা হয়েছিল। তিনি আসেননি। এবার ১৫ আগস্ট উপজেলার বানেশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ব্যানারে তিনি শোক দিবসের কর্মসূচি পালন করেছেন।

নজরুল ইসলাম বলেন, সাংগঠনিক রেওয়াজ অনুযায়ী ইউনিয়ন পর্যায়ে অনুষ্ঠান করতে হলে উপজেলা আওয়ামী লীগকে অবহিত করতে হবে। তা করা হয়নি। আবার গত ফেব্রুয়ারি মাসে উপজেলার বানেশ্বরে শান্তি সমাবেশ করা হয়েছিল। সেখানে আবদুল ওয়াদুদকে প্রধান বক্তা রাখা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। তারপরও আবদুল ওয়াদুদ সেই সভায় উপস্থিত না হয়ে পাল্টা সমাবেশ করেছিলেন। এই জন্য এবার তাঁকে আর দাওয়াতই করা হয়নি।

সংসদ সদস্য মনসুর রহমান দাবি করেছেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার রহিমের মাধ্যমে সাবেক সংসদ সদস্যকে দাওয়াত করা হয়েছিল। তাঁরা দাওয়াত দিতে কখনো কার্পণ্য করেননি। কিন্তু তিনি আসেননি। ২০২২ সালের মার্চে পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর আবদুল ওয়াদুদকে আর কোনো কর্মসূচিতে এক মঞ্চে পাননি উল্লেখ করে মনসুর রহমান বলেন, যিনিই নৌকার মনোনয়ন পাবেন, তিনি তাঁর জন্যই কাজ করবেন। এই বিভেদের কোনো মানে হয় না।

আরও পড়ুন

এদিকে উপজেলার বানেশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শোক দিবসের কর্মসূচিতে আবদুল ওয়াদুদ দলের ‘শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী’ নেতাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। তবে তিনি কারও নাম ধরে বলেননি। তিনি বলেন, ‘একধরনের নেতা রয়েছেন, তাঁরা নিজে নমিনেশন (মনোনয়ন) না পেলে আওয়ামী লীগ করেন না, বিদ্রোহী হন। তাঁদের কাছেই প্রশ্রয় পায় কিছু নেতা।’ তিনি বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে একটি আসনে মনোনয়ন না দিয়ে বলেছিলেন, “ওনাকে দিলাম। ভোট করে দাও।” আমি তাকে ভালোমতো চিনতাম না, জানতাম না। আমার কথা হলো তিনি যাকে দিয়েছেন, তার জন্যই...। মনে দুঃখ পেয়েছি, ব্যথা পেয়েছি, কষ্ট পেয়েছি—পেতেই পারি। কিন্তু নেতার আদর্শ, নেতার সিদ্ধান্ত মেনেছি।’

আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘আপনারা এখানকার কিছু ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রকারী রাজশাহী শহর থেকে কিছু ষড়যন্ত্রকারী ভেবেছিলেন আমাকে বোধ হয় ফেলেই দিলেন। অত সহজ নয়। আমার নেতা আমাকে চেনেন। অনেক চেষ্টা করেছেন আমি যেন আর ফিরতে না পারি। মাসের পর মাস ঢাকায় গিয়ে বসে থেকেছেন। আমার টেলিফোনটা পর্যন্ত ধরেননি। আজ রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সুশৃঙ্খলভাবে চলছে। কিন্তু সব জায়গায় ষড়যন্ত্রকারীদের ছোবল এখনো থেমে নাই।’

কার বিরুদ্ধে এ বক্তব্য দিলেন, তা জানতে চাইলে আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যাঁরা খারাপ, জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত মানি না। তাঁদের উদ্দেশেই এসব কথা বলেছি।’

পুঠিয়ায় এখন নেতা-কর্মীরা দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের যাতায়াতের জন্য টাকা তোলা নিয়ে গত ২৫ জানুয়ারি দলের দুই পক্ষের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে গুরুতর আহত একজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে এসে দুই পক্ষের চারজনকে আটকও করে।

গত শুক্রবার পুঠিয়ার শোকসভায় এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাঁকে মনোনয়ন দেবেন, তাঁকেই ভোট দিয়ে বিজয়ী করে আনতে হবে।