প্রতিমন্ত্রী ফরহাদের আয় বেড়েছে, স্ত্রীর বেড়েছে সম্পদ

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন
ফাইল ছবি: বাসস

২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ফরহাদ হোসেন কলেজে শিক্ষকতা করে বছরে আয় করতেন ৬ লাখ ১২ হাজার ৩৪০ টাকা। ১০ বছর পর এখন তিনি কৃষি, ব্যবসা, শেয়ার ও প্রতিমন্ত্রীর পারিশ্রমিক মিলিয়ে বছরে আয় করেন ৭৭ লাখ ১ হাজার ৮৫০ টাকা। যা ২০১৪ সালের তুলনায় ১২ গুণ বেশি।

মেহেরপুর-১ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের তিনটি সংসদ নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে তাঁর স্ত্রী সৈয়দ মোনালিসা ইসলামের নগদ ৫ লাখ টাকা ও ৪০ ভরি সোনা থাকলেও এখন তাঁর অস্থাবর সম্পদের আর্থিক মূল্য দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২০ লাখে। এর মধ্যে নগদ আছে ৪৭ লাখ ও ব্যবসায় বিনিয়োগ আছে ৪০ লাখ টাকা। যদিও কোনো হলফনামাতেই প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রীর আয়ের উৎসের কোনো তথ্য উল্লেখ নেই।

বিরোধীরা সব সময় আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করে আসছে। আমার বিরুদ্ধে একটিও অবৈধ আয়ের উৎস খুঁজে বের করতে পারবে না তারা।
ফরহাদ হোসেন, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী

ফরহাদ হোসেন টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর তিনি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০১৮ সালের নির্বাচনের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, ওই সময় ফরহাদ হোসেন বছরে আয় করতেন ১০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। যার মধ্যে কৃষি খাতে ৪ লাখ, শেয়ার ও সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার ও অন্যান্য খাত থেকে ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

এবারের হলফনামায় উল্লেখ করা তথ্য অনুযায়ী নগদ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ, জিপ, স্বর্ণালংকার, আসবাব, ইলেকট্রনিক সামগ্রী মিলিয়ে প্রতিমন্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি ২৭ লাখ ২ হাজার টাকা। ২০১৪ সালে যার পরিমাণ ছিল ২৬ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৭ টাকা। ১০ বছরে অস্থাবর সম্পদ ১২ গুণ বেড়েছে। ১০ বছর আগে ফরহাদ হোসেনের হাতে নগদ টাকা ছিল ৯ লাখ। ২০১৮ সালে ছিল ৬ লাখ। এখন তাঁর হাতে নগদ টাকা আছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার। ওই সময় তাঁর স্ত্রীর হাতে নগদ ছিল ৫ লাখ টাকা। ১০ বছরের ব্যবধানে তা হয়েছে ৪৭ লাখ টাকা। আগে না থাকলেও এখন প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ঋণ হয়েছে ৫৬ লাখ টাকা।

আরও পড়ুন

এ বিষয়ে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রসুল বলেন, ফরহাদ হোসেন সংসদ সদস্য হওয়ার পরই তাঁর ও তাঁর পরিবারের প্রত্যেকের অর্থনৈতিক করুণ পরিস্থিতি বদলেছে, যেন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছের মতো। এসব অর্থ তিনি কীভাবে আয় করেছেন তা সবার জানা।

সম্পদ বৃদ্ধির বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা যখন যৌথ পরিবার ছিলেন তখন কৃষিজমি থেকে তাঁর নিজস্ব কোনো আয় ছিল না। পরিবারের সম্পত্তি বণ্টন হওয়ার পর কৃষিজমি হয়েছে। এই জমি থেকে আয় হতে শুরু করেছে। বেতন–ভাতা থেকে বছরে ৩০ লাখ টাকার সমপরিমাণ যোগ হচ্ছে। তিনি ঢাকায় কয়েকটি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। সেখান থেকেও আয় হয়। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিরোধীরা সব সময় আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করে আসছে। আমার বিরুদ্ধে একটিও অবৈধ আয়ের উৎস খুঁজে বের করতে পারবে না তারা।’

প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রীর নামে ২০১৪ সালে কোনো জমি ছিল না। বর্তমানে তাঁর ২ বিঘা ৫ কাঠা কৃষিজমি রয়েছে, যার আর্থিক মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতিমন্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ১ কোটি ৩৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা; ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ২৯ লাখ ১ হাজার টাকা; বন্ড, ঋণপত্র ও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা; সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ৪০ লাখ টাকা; ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের জিপ গাড়ি, ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের ২৫ ভরি সোনা (বিয়েতে উপহার ও উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া); ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের গৃহস্থালি সামগ্রী; ব্যবসায় বিনিয়োগ ৩১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা; ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের শর্টগান ও পিস্তল এবং শেয়ার ব্যালেন্স ১২ হাজার ৭৫৩ টাকা। ২০১৮ সালে তিনি ৭৩ লাখ টাকার একটি জিপ ও ৭ লাখ টাকার একটি মাইক্রোবাস থাকার কথা উল্লেখ করেছিলেন।

স্থাবর সম্পদ হিসেবে প্রতিমন্ত্রীর ২৭৪ দশমিক ৪৫ শতক কৃষিজমি, ৩১ দশমিক ৪৩ শতক অকৃষিজমি ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পে ১ হাজার ৬৫৪ বর্গফুটের ফ্ল্যাট হয়েছে; যা ২০১৪ সালের হলফনামায় ছিল না। এগুলো উত্তরাধিকার ও ক্রয়সূত্রে পাওয়া বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ৫১ শতক অকৃষিজমি থাকার কথা উল্লেখ করেছিলেন। তাঁর স্ত্রীর নামে ২০১৪ সালে কোনো জমি ছিল না। বর্তমানে তাঁর ২ বিঘা ৫ কাঠা কৃষিজমি রয়েছে, যার আর্থিক মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

আরও পড়ুন

প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রীর ২০১৪ সালে অস্থাবর সম্পদ হিসেবে ছিল নগদ ৫ লাখ টাকা, বিয়েতে উপহার হিসেবে পাওয়া ৪০ ভরি সোনা, ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকার গৃহস্থালি সামগ্রী। বর্তমানে তাঁর হাতে নগদ ৪৭ লাখ টাকা রয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ২০ লাখ টাকা, সাড়ে ৭ লাখ টাকার একটি মাইক্রোবাস, ১৩০ ভরি সোনা (বিয়েতে উপহার ও উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া), ৪ লাখ টাকার গৃহস্থালি সামগ্রী ও ব্যবসায় ৪০ লাখ টাকার বিনিয়োগ।

এবারের হলফনামায় ফরহাদ হোসেন আয়ের বিভিন্ন খাত উল্লেখ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, কৃষি থেকে তাঁর বছরে আয় ২৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা; ব্যবসা থেকে ১৭ লাখ ৭৯ হাজার ৩৭৪ টাকা; শেয়ারবাজার ও ব্যাংক আমানত থেকে ৪ লাখ ২৮ হাজার ২০১ টাকা এবং পারিশ্রমিক, ভাতা, সম্মানি হিসেবে ২৯ লাখ ৭৬ হাজার ২৭৫ টাকা আয় করেন।

আরও পড়ুন