ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ৩৪ কিলোমিটার অংশে দুই দিন ধরে দীর্ঘ যানজট
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টানা দুই দিন ধরে দীর্ঘ যানজট চলছে। আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইল উপজেলার বেড়তলা, সরাইল বিশ্বরোড মোড় ও শাহবাজপুর সেতু হয়ে হবিগঞ্জের মাধবপুর এলাকা পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার এলাকায় গতকাল বুধবার ভোর ছয়টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত যানজট দেখা গেছে। বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বরে বড় আকারের গর্ত এ যানজটের প্রধান কারণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে গত দুই দিন দেখা গেছে, বিশ্বরোড় মোড় গোলচত্বরের চারপাশে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গোলচত্বরের তিন–চতুর্থাংশ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জায়গাটি অতিক্রম করার জন্য চালকদের অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। ফলে দূরপাল্লার যানবাহন মহাসড়কের গোলচত্বর এলাকায় এসে থেমে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর সেখানে গর্তে যানবাহন আটকে যাচ্ছে, কোনোটি আবার বিকল হয়ে পড়ছে। ঢাকা থেকে সিলেটগামী পণ্যবাহী একটি ট্রাককে আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গোলচত্বর এলাকায় বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
স্থানীয় লোকজন জানায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার পর থেকে বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বর থেকে যানজট সৃষ্টি হয়। গতকাল ভোর ছয়টার পর থেকে যানজট বাড়তে থাকে। আজ বিকেল পর্যন্ত আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইল উপজেলার বেড়তলা, বিশ্বরোড মোড় ও শাহবাজপুর সেতু হয়ে হবিগঞ্জের মাধবপুর পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের বিস্তৃতি ঘটে।
গত দুই দিনে কয়েকবার কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক ও সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কে যানজট ছড়িয়ে পড়েতে দেখা গেছে। শত শত নারী-পুরুষকে হেঁটে গন্তব্যে ছুটতে দেখা গেছে। গতকাল ও আজ দিনভর মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কম চলাচল করতে দেখা গেছে। জেলার অভ্যন্তরীণ এবং দূরপাল্লার যানবাহনের হাজারো মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
সিলেট থেকে ঢাকাগামী পণ্যবাহী ট্রাকচালক আমির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাত ২টায় ছিলাম চান্দুরা আর এখন বেলা ১১টায় আছি বিশ্বরোড এলাকায়। মনে হচ্ছে আমরা কারও কাছে জিম্মি হয়ে আছি। একটু জায়গা ঠিক করে দিলে আমরা ভালো করে চলতে পারি, কিন্তু তা হচ্ছে না।’
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা তেলবাহী ট্রাকের চালক আলম মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কপাল খারাপ। না হলে মাসের পর মাস ধইরা এইখানে এ দশা কেন অইবে! এইখানে আসলেই আমাদের ঝামেলা অয়।’
মহাসড়কে যানচলাল স্বাভাবিক রাখতে সরাইল থানার পুলিশ ও সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার পুলিশ মাঠে থাকতে দেখা গেছে। এর আগে মাঠে ছিলেন সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য।
সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোর ছয়টা থেকে রোডে আছি। এখন পর্যন্ত কিছু খাই নাই। পা ফুলে গেছে। কিছুক্ষণ পর পর গর্তে যানবাহন আটকে যাচ্ছে। এক একটি যানবাহন ওঠানে ৫ থেকে ১০ মিনিটও সময় লাগে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি মহাসড়কটিকে যানজটমুক্ত রাখতে। কিন্তু পারছি না। কয়েক দিন পরপর ইট দিয়ে গর্ত ভরাট করেছি। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। বৃষ্টি হলেই গর্ত খালে পরিণত হয়। ইট–বালু, কাদায় পরিণত হয়। এর শেষ কোথায় জানি না।’
সড়ক ও জনপথ (সওজ), জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ ধীরগতিতে চলছে আট বছর ধরে। ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজটি করছেন ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর দেশীয় অর্থ ও ভারতীয় ঋণে চলমান প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের কর্মকর্তারা কাজ ফেলে দেশে ফিরে যান। তিন মাস পর তারা বাংলাদেশে ফিরে এসে আবার কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে তাদের অনেক মালামাল খোয়া যায়। ৫ আগস্টের পর কাজের গতি আরও কমে যায়। তারা কাজটি একধরনের না করার মতো অবস্থায় ফেলে রাখে। ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি মেটাতে গত মাসের শেষের দিকে ১৬৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা আরও বরাদ্দ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বরে কথা হয় আশুগঞ্জ-আখাউড়া চারলেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই প্রকল্পের যে সমস্যা ছিল, তা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সমাধান হয়েছে। এর জন্য ১৬৩ কোটি টাকা নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আশা করি, আগামী দুই মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।’
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএওন) মো. মোশারফ হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ ও অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। ৫ অক্টোবর থেকে পুরোদমে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখন ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আর গা–ছাড়া ভাব থাকবে না আশা করি।’