কুড়িগ্রামে বেড়েই চলেছে তিস্তা-ধরলার পানি, পাড়ে ভাঙন–আতঙ্ক
কুড়িগ্রামে গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর হালকা বৃষ্টির পর রাতে আর বৃষ্টি হয়নি। তবে এতে নদ–নদীপাড়ের পানিবন্দী লোকজনের ভোগান্তি কমেনি। রাতে বৃষ্টি না হওয়ায় জেলার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি কমে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ার কথা থাকলেও তিস্তা-ধরলাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি উল্টো বেড়ে চলেছে। ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও গঙ্গাধর নদে পানিবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙনের কারণে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে গতকাল রাতে কোনো বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়নি।
আজ শুক্রবার সকাল ৬টায় কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদীর পানি তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে কিছুটা কমে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গাধর ও দুধকুমার নদে পানি বাড়লেও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও গঙ্গাধর নদে পানিবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গতকাল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের কিং ছিনাই, জয়কুমার ও নামা জয়কুমার গ্রামের কমপক্ষে ১০টি পরিবার ধরলা নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে বাঁধের সড়কে আশ্রয় নিয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে জয়কুমার আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ কিং ছিনাই গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক পরিবার। একই উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের কালীরহাট ঘাট এলাকায় তিস্তার ভাঙনে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাজার ঝুঁকিতে আছে। গত এক সপ্তাহে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে রৌমারী উপজেলার চর শৈলমারী এবং বন্দবেড় ইউনিয়নের ৫০টি বাড়ি ও প্রায় ৩০ একর ফসলি জমি ভেঙে গেছে। উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের খুদিরকুঠি এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনঝুঁকিতে আছে খুদিরকুঠি উচ্চবিদ্যালয় ও বাজার। চিলমারী উপজেলায় কাচকোল এলাকায় ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনঝুঁকিতে আছে ডান তীর রক্ষা বাঁধ।
রৌমারী ফেরিঘাটের ইজারাদার মো. নাসির উদ্দিন খান বলেন, উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টির কারণে রৌমারী ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা না করলে ঘাটটি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের কিং ছিনাই এলাকার বাসিন্দা রাশিদুল হাসান বলেন, গতকাল থেকে ধরলা নদীর পানি বেড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এক দিনের ব্যবধানে ধরলাপাড়ের প্রায় ১৫টি বাড়ি ভেঙে গেছে। এ ছাড়া নামা জয়কুমার, জয়কুমার ও কিং ছিনাই গ্রামের তিন শতাধিক পরিবার, বন্যা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভবনসহ প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে। ভাঙন রোধে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এই মুহূর্তে জেলায় পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন তীব্র আকারে দেখা দিয়েছে জানিয়ে কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তায় ভাঙন রোধে পাউবোর লোকজন কাজ করছেন। আজ বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জেলার ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে এসেছেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ প্রথম আলোকে বলেন, কুড়িগ্রামে উজানের ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যার্তদের উদ্ধারের জন্য চারটি স্পিডবোট প্রস্তুত আছে। বন্যার্তদের জন্য নগদ ১২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ও ২৫১ মেট্রিক টন চাল প্রস্তুত আছে।
রংপুরে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপরে
রংপুরে গতকাল রাতে বৃষ্টি না হলেও উজান থেকে আসা ঢলে তিস্তা নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ সকাল ৯টায় জেলার কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা রেলসেতু এলাকায় নদীর পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
আজ সকালে রংপুর পাউবোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। পানি বাড়ার বিষয়টি প্রথম আলোকে জানিয়েছেন রংপুর পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব।
এদিকে জেলার কাউনিয়া, গঙ্গাচড়া ও পীরগাছা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি উঠেছে। তিনটি উপজেলার নদ–নদীপাড়ের মানুষ সতর্কাবস্থায় আছে।
কাউনিয়ার নদীতীরবর্তী এলাকার বালাপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান আনসার আলী বলেন, ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বেড়েই চলেছে। নিচু এলাকার মানুষজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহেল হাদী বলেন, বৃষ্টি না হলেও নদীর পানি বাড়ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, নদীর পানি আরও বাড়বে। এমন অবস্থায় নদীপাড়ের মানুষদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।