ককটেল হামলার অভিযোগে বগুড়ায় বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে আরও দুই মামলা

বগুড়া জেলার মানচিত্র

বগুড়ার গাবতলী ও সোনাতলা উপজেলা বিএনপির ৬৫ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ককটেল হামলার অভিযোগে আরও দুটি মামলা হয়েছে। আজ শনিবার সকালে সোনাতলা থানায় এবং গতকাল শুক্রবার গভীর রাতে গাবতলী মডেল থানায় মামলা দুটি করা হয়।

এর মধ্যে সোনাতলায় পুলিশের ওপর ককটেল হামলার অভিযোগে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহসানুল তৈয়ব ওরফে জাকির, সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হকসহ ২৯ নেতা–কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। আজ সকাল সোয়া আটটায় মামলাটি করেন সোনাতলা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নূর ইসলাম। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা আরও অনেক বলে উল্লেখ করা হয়। জব্দ দেখানো হয়েছে দুটি ককটেল।

গাবতলীতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফি নেওয়াজ খানের গাড়িবহরে ককটেল হামলার অভিযোগে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করা হয়। গতকাল শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে মামলাটি করেন গাবতলী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজার রহমান। মামলায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিল্টন, সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক, গাবতলী পৌরসভার মেয়র সাইফুল ইসলামসহ ৩৬ আসামির নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ১৫০ জনকে।

আরও পড়ুন

এ নিয়ে ১৭ নভেম্বর থেকে আজ শনিবার পর্যন্ত ১০ দিনে বগুড়ার ১২টি থানায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মোট ১২টি মামলা হয়েছে। অভিন্ন ধারায় করা এসব মামলায় ৫২২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও কয়েক শ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এর মধ্যে বগুড়া সদর, শাজাহানপুর, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলায় পুলিশের ওপর ককটেল হামলার অভিযোগ এনে বিস্ফোরক দ্রব্য এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের মিছিলে ককটেল হামলার অভিযোগ তুলে মামলা হয়েছে শেরপুর, ধুনট, নন্দীগ্রাম, কাহালু, আদমদীঘি, শিবগঞ্জ ও গাবতলী উপজেলায়।

আজ সোনাতলা থানায় করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সোনাতলা থানা–পুলিশের একটি দল গতকাল শুক্রবার রাতে টহলের জন্য বের হয়। রাত দেড়টার দিকে দলটি উপজেলা সদরে অবস্থানকালে খবর পায়, নাশকতার উদ্দেশ্যে বিএনপির নেতা–কর্মীরা পৌর এলাকার ঘোড়াপীর এলাকার জালাল উদ্দিন টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিএম কলেজ মাঠে জড়ো হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়।

পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বিএনপি নেতা–কর্মীরা তাঁদের ওপর ককটেল হামলা করেন। এ সময় দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। ককটেল হামলায় এসআই আমিনুল ইসলামসহ দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পরে পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে বিএনপি নেতা–কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এ সময় ঘটনাস্থল থেকে দুটি ককটেল উদ্ধার এবং আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন সোনাতলা পৌর বিএনপির সদস্য মাসুম সরকার ও শহিদুল ইসলাম এবং বালুয়া ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য মোহাম্মদ শাহিন।

সোনাতলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈকত হাসান বলেন, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তবে সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহসানুল তৈয়ব ওরফে জাকির  প্রথম আলোকে বলেন, সাজানো মামলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের আসামি করেছে পুলিশ। রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশ ও সরকারবিরোধী আন্দোলন দমাতে এ ‘গায়েবি’ মামলা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

গাবতলী মডেল থানায় করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গতকাল শুক্রবার রাতে গাবতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফি নেওয়াজ খান উপজেলার বাহাদুরপুর স্কুল মাঠে ওয়াজ মাহফিলে অতিথি হিসেবে যান। সেখান থেকে তিনি সরকারি গাড়িতে করে উপজেলা সদরে ফিরছিলেন। গাড়ির পেছনে মোটরসাইকেল বহরে ছিলেন দলীয় নেতা-কর্মীরা।

রাত সাড়ে ১১টার দিকে গাবতলী-সুখানপুকুর আঞ্চলিক সড়কের তিনমাথা মোড়ে পাকা রাস্তায় পৌঁছালে বিএনপি নেতা–কর্মীরা তাঁদের ওপর অতর্কিত ককটেল হামলা করেন। এতে মোটরসাইকেল বহরে থাকা সোহাগ ইসলাম, রাকিব হাসান ও তৌহিদুল ইসলাম আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে তিনটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করে।

গাবতলী মডেল থানার ওসি সনাতন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম ওরফে বাদশা বলেন, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির গণসমাবেশকে সামনে রেখে সরকারের নির্দেশনায় পুলিশ ও দলীয় নেতা–কর্মীরা বগুড়ার ১২ থানায় ১২টি ‘গায়েবি’ মামলা দিয়েছে। এতে আসামি করা হয়েছে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৫২২ নেতা-কর্মীকে। পুলিশ এখন ধরপাকড় চালাচ্ছে। পুলিশের ভয়ে নেতা-কর্মীরা এখন ঘরছাড়া। বিদেশে থাকা নেতাদেরও মামলার আসামি করা হয়েছে।