নারায়ণগঞ্জে গুলিতে নিহত শফিউলের মেয়ে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন
নারায়ণগঞ্জে গুলিতে নিহত রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক শফিউল আলম ওরফে কাজলের মেয়ে নুসরাত জাহান এবার এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ থেকে মানবিক শাখা থেকে জিপিএ-৫ পান তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার কুশিয়ারা এলাকায় নিহত শফিউল আলমের চাচার বাড়িতে নুসরাত জাহানের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানা যায়। চাচার বাড়িতেই শফিউল পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। গতকাল বুধবার এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়।
পরীক্ষায় মেয়ের ভালো ফল বাবা শফিউল আলম দেখে যেতে না পারায় আক্ষেপ স্বজনদের। ফলাফল ঘোষণার দুই দিন আগে গুলিবিদ্ধ শফিউল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। নুসরাতের ভালো ফলে যেখানে সবার আনন্দিত হওয়ার কথা, সেখানে শফিউলের শোকে পুরো পরিবার শোকাহত। নুসরাত বলেন, ‘বাবা বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতো। তবে বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। পড়াশোনা করে বিসিএস ক্যাডার হতে চাই, ম্যাজিস্ট্রেট হতে চাই।’
নুসরাত জাহান বলেন, ‘বাবাকে তো আর দেখতে পারব না। বাবাকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার দেওয়ার পর রেজাল্ট কী হয় তা নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছিল, সে সময় বাবা বলত, চিন্তা কোরো না, তুমি পরীক্ষার খাতায় যা লিখেছ, তা–ই পাবে। বাবার খুব বিশ্বাস ছিল, আমি ভালো রেজাল্ট করব।’
নুসরাত জাহানের মা আসমা জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওর বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট বানাবে। দেশের জন্য দেশের মানুষের কাজ করবে। মেয়ের নিজের আগ্রহে পড়াশোনা করে এই রেজাল্ট করেছে। তাকে বাড়িতে আলাদা কোনো শিক্ষকের কাছে পড়ানো হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণিতে নুসরাত বৃত্তি পেয়েছিল। মেয়েকে পড়াশোনার জন্য কখনো তাগাদা দিতে হয়নি। মেয়েদের কখনো একটু ধমক দিলে ওর বাবা খুব রাগ করতেন। মেয়ের ভালো রেজাল্টটা দেখে যেতে পারল না। ওর বাবা বেঁচে থাকলে অনেক খুশি হতো, বাড়িতে মিষ্টির সঙ্গে আনন্দের বন্যা বয়ে যেত।’
আসমা জামান বলেন, যখন স্বামী ছিল, তাঁর সব ছিল। স্বামীর আয় দিয়ে সংসার চলত, মেয়েদের পড়াশোনার খরচ জোগান হতো। এখন কীভাবে সংসার চলবে? তা ভেবে পান না। মাথা গোঁজার একটু ঠাঁই পর্যন্ত নেই। আসমা জামানের বড় বোন শাহনাজ বেগম বলেন, ‘বাবাহারা মেয়ে দুটির ভবিষ্যৎ কী হবে? খুনিরা তো শুধু ওর বাবাকে মারেনি, সঙ্গে জীবিত আরও তিনটি জীবনকে মেরে ফেলেছে।’
খুনিরা প্রভাবশালী উল্লেখ করে শফিউল আলমের বোন লতা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ ছিল না। তাঁর নিরপরাধ ভাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। খুনিরা যাতে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে, সে ব্যাপারে তারা সরকারের সহযোগিতা চান। খুনিদের ফাঁসি চান। অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
আসমা জামান বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষার পর ওর বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাবে বলে কলেজ রোডে অবস্থিত লুমিনাস কোচিং সেন্টারে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। সংসার কীভাবে চলবে, মেয়ে দুটির পড়াশোনা কীভাবে চলবে তা ভেবে পাচ্ছি না। মেয়ে নিয়ে আমার এখন যুদ্ধ করতে হবে, বেঁচে থাকার যুদ্ধ। কষ্টে আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে।’
নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় আঙ্গুরা শপিং কমপ্লেক্সের নিচতলা ও দোতলা একাংশের মালিক আজিজুল তালুকদারের কাছ থেকে ভাড়া নেন শুক্কুর আলী। তবে বিদ্যুৎ ও পানির বিল পরিশোধ করতে হতো আজিজুলের বড় ভাই আজহার তালুকদারকে। ভাড়া নিয়ে সেখানে ‘সুলতান ভাই কাচ্চি’ নামের একটি রেস্তোরাঁ দেন শুক্কুর। কয়েক দিন ধরে বিদ্যুৎ বিল ও পানির লাইন নিয়ে আজহারের সঙ্গে রেস্তোরাঁর মালিক শুক্কুর আলী ও রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক শফিউল আলমের বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত রোববার রাতে শফিউলের সঙ্গে আজহারের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আজহার উত্তেজিত হয়ে শপিং কমপ্লেক্সের বাসা থেকে পিস্তল ও শটগান নিয়ে এসে বেশ কয়েকটি গুলি ছোড়েন। এতে শফিউল গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার রাতে শফিউল মারা যান। এ ঘটনায় করা হত্যা মামলা গ্রেপ্তার আজহার ও তাঁর ছেলে আরিফকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।