কক্সবাজারে নৌকার প্রার্থীর নেতৃত্বে ঈগলের প্রচারণায় হামলার অভিযোগ, মুহুর্মুহু গুলি

কক্সবাজারে রামু উপজেলার জোয়ারিয়া নালায় ঈগল প্রতীকের নির্বাচনী প্রচারণায় হামলার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ-বিজিবির সদস্যরা। বুধবার সন্ধ্যায়
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজান সাঈদের (ঈগল প্রতীক) নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে রামুর জোয়ারিয়া নালা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল শামসুউদ্দিন আহমদ ওরফে প্রিন্সসহ অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন।

বুধবার বিকেল সাড়ে চারটায় দিকে রামুর জোয়ারিয়া নালা মাদ্রাসা গেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ আসনের নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল এ হামলার নেতৃত্ব দেন বলে ঈগল প্রতীকের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় সেখানে বিজিবি ও পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।

কক্সবাজার-৩ আসনে মোট ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোটে নৌকার প্রার্থী সাইমুম সরওয়ারের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজান সাঈদের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে স্থানীয় লোকজন জানান। নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকে দুই পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগ করে আসছে।

আরও পড়ুন

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বুধবার বিকেল চারটার দিকে জোয়ারিয়া নালা মাদ্রাসা গেট এলাকায় ঈগলের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন ইউপি চেয়ারম্যান কামাল শামসুউদ্দিন আহমদ। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নৌকার প্রার্থী সাইমুম সরওয়ারের নেতৃত্বে কয়েক শ কর্মী-সমর্থক ওই এলাকায় পৌঁছালে তাঁরা ঈগলের প্রচারণায় হামলা চালান। এ সময় মুহুর্মুহু গুলির শব্দ শোনা যায়। তবে কে গুলি ছোড়েন, তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। হামলায় ইউপি চেয়ারম্যান শামসুউদ্দিনসহ অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন। তাঁরা সবাই ঈগলের কর্মী-সমর্থক।

ঈগল প্রতীকের রামু উপজেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ও রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ঈগল প্রতীকের পূর্বনির্ধারিত নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা চালিয়েছেন সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ঈগল প্রতীকের পক্ষে কাজ করায় তিনি দিশা হারিয়ে ফেলেছেন। হামলার ঘটনায় মামলা করা হবে।

মাদ্রাসা গেটে আমিসহ অন্যান্যরা ঈগল প্রতীকের প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। ওই সময় কয়েকটি গাড়িতে কয়েক শ কর্মী-সমর্থক নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান নৌকার প্রার্থী সাইমুম। এমপি গাড়ি থেকে নেমে লাঠি হাতে এগিয়ে এসে আমাকে মারধর শুরু করেন। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে এমপি অস্ত্র হাতে আমাকে গুলি করার চেষ্টা চালান। এ সময় ঈগলের সমর্থকেরা আমাকে রক্ষায় এগিয়ে এলে সাইমুম ৩টি ফাঁকা গুলি ছোড়েন। এরপর উত্তেজিত জনতা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের রামু অংশে অবরোধ করে রাখেন।
কামাল শামসুউদ্দিন আহমদ, হামলায় আহত

আহত কামাল শামসুউদ্দিন আহমদ বলেন, পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে মাদ্রাসা গেটে তিনিসহ অন্যরা ঈগল প্রতীকের প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। ওই সময় কয়েকটি গাড়িতে কয়েক শ কর্মী-সমর্থক নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান নৌকার প্রার্থী সাইমুম। তিনি গাড়ি থেকে নেমে লাঠি হাতে এগিয়ে এসে তাঁকে (শামসুউদ্দিন) মারধর শুরু করেন। স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে সাইমুম সরওয়ার অস্ত্র হাতে তাঁকে (শামসুউদ্দিন) গুলি করার চেষ্টা চালান। এ সময় ঈগলের সমর্থকেরা চেয়ারম্যানকে রক্ষায় এগিয়ে এলে সাইমুম তিনটি ফাঁকা গুলি ছোড়েন। এরপর উত্তেজিত জনতা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের রামু অংশে অবরোধ করে রাখেন।

আরও পড়ুন

ইউপি চেয়ারম্যান শামসুউদ্দিন আরও বলেন, গোলাগুলির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেন। সাদ্দাম হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ জানালে সাইমুমের সমর্থকেরা আরও তিনটি ফাঁকা গুলি ছোড়েন। ঘটনাস্থলে পুলিশ-বিজিবি পৌঁছালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেন বলেন, জোয়ারিয়া নালা তাঁর এলাকা। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। পরিস্থিতি এখন শান্তিপূর্ণ। তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে নেতা-কর্মীদের পছন্দমতো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন। চেয়ারম্যান শামসুউদ্দিন তাঁর পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানোর অধিকার রাখেন। এখানে হামলা করাটা অন্যায় হয়েছে। ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে তিনি নৌকার পক্ষে কাজ করছেন বলে জানান।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু তাহের দেওয়ান ফোন ধরেননি। সর্বশেষ রাত আটটার দিকে ওসির মুঠোফোনে কল করলে একজন কনস্টেবল বলেন, ‘স্যার (ওসি) ব্যস্ত আছেন। লোকজনের সঙ্গে কথা বলছেন। ফ্রি হলে কল দিতে বলব।’

আরও পড়ুন

তবে ওসি আবু তাহের ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাংবাদিকদের বলেন, কে গুলি ছুড়েছেন, শনাক্তের চেষ্টা চলছে। লিখিত অভিযোগ পেলে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য নৌকার প্রার্থী সাইমুম সরওয়ারের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। তাঁর একজন সমর্থক জানান, তিনি রামুর একটি পথসভায় ব্যস্ত আছেন।

আরও পড়ুন

এর আগে গত ২৭ ডিসেম্বর রামু বাইপাস এলাকায় ঈগল প্রতীকের একটি প্রচারণার গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে নৌকা প্রতীকের সমর্থকেরা। এ ঘটনায় পর দিন ১২ জনকে আসামি করে রামু থানায় মামলা করা হয়।