বসতঘর থেকে চুরি হওয়া দুই মাসের ছেলের লাশ পাওয়া গেল ডোবায়
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভা এলাকার বসতঘর থেকে চুরি হওয়া দুই মাস বয়সী সেই ছেলেটির লাশ পাওয়া গেছে বাড়ির পাশের এক ডোবায়। আজ সোমবার সকাল ৭টার দিকে মিরকাদিম পৌর এলাকার গোপালনগরের বসতঘরের ২০ মিটার দূরে একটি ডোবা থেকে লাশটি উদ্ধার করে স্বজনেরা।
লাশ উদ্ধার হওয়া শিশুটির নাম আজান। সে নারায়ণগঞ্জের পাগলা এলাকার মো. শরীফ হোসেনের ছেলে। আজান জন্মের কয়েক দিন আগে থেকে শরীফের স্ত্রী শ্রাবণী বেগম মিরকাদিমের গোপালনগর এলাকার বাবার বাড়িতে ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে সাতটার দিকে ঘর থেকে শিশুটি চুরি হয়।
নিহত আজানের নানি ময়না বেগম বলেন, ‘আজান নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে আমাদের ঘরের শোক চলছে। আমার দুটি মেয়ে, কোনো ছেলে নেই। মেয়ের ঘরে ছেলে হওয়াতে আমরা খুব খুশি ছিলাম। খুব আদরের ছিল আজান। নিখোঁজের পর থেকে আমরা আজানকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করছিলাম। আজকে সকালে বাড়ির পাশের ডোবার দিকে কুকুর ডাকাডাকি করছিল। তখন আমি আমার মেয়ে ও বোনকে বাড়ির পাশে ডোবাগুলোতে খুঁজতে বলি। তারা সেখানে খুঁজতে যায়। একপর্যায়ে আধা ডুবন্ত অবস্থায় আজানের লাশটি দেখতে পায় তারা। পরে আমরা পুলিশকে খবর দিই।’
আজ সোমবার সকালে গোপালনগরের নিহত শিশু আজানের নানার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনেরা বিলাপ করছেন। আশপাশের লোকজন এসে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ছেলে হারানোর শোকে শ্রাবণী আক্তার ঘরের বিছানায় অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন।
কিছুক্ষণ পর চেতনা ফিরলে শ্রাবণী বেগম বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে সাতটার দিকে তাঁর দুই মাসের ছেলে আজানকে বসতঘরের খাটে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে শৌচাগারে যান। পাশের বাড়ির চাচি রমিজা বেগম ঘরের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁকে বাচ্চার দিকে খেয়াল রাখতে বলেছিলেন। এসে দেখেন তাঁর রমিজা চাচিও নেই, বাচ্চাও নেই। কাঁদতে কাঁদতে শ্রাবণী আরও বলেন, ‘কত বললাম, চাচি বাচ্চাটারে কোথাও লুকাইয়া রাখলে কও। কে জানত বাচ্চাটারে ডোবার মধ্যে ডুবাইয়া রাখছিল।’
শ্রাবণী বেগম আক্ষেপ করে জানালেন, রমিজা বেগমের সঙ্গে তাঁদের কোনো শত্রুতা ছিল না, তারপরও নিষ্ঠুরভাবে তাঁর দুধের বাচ্চাটাকে কেন এভাবে মেরে ফেলল বুঝতে পাচ্ছেন না।
মুন্সিগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) থান্দার খাইরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, শুরু থেকেই বাচ্চার স্বজন রমিজা বেগম নামে এক প্রতিবেশীর প্রতি সন্দেহ ছিল। রমিজা বেগমকে এরই মধ্যে আটক করে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। শিশুটির লাশের ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল রোববার রাতে অজ্ঞাত আসামি করে একটি চুরির মামলা করা হয়েছিল। সেটি এখন হত্যা মামলায় রূপান্তর করা হবে।
আজানের বাবা শরীফ হোসেন বলেন, তিনি একজন ট্রাকচালক। তাঁকে বাড়ির বাইরেই বেশি সময় থাকতে হয়। দেড় বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন শ্রাবণীকে। সন্তান জন্মের কয়েক দিন আগে গোপালনগরে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে আসেন স্ত্রীকে। এখানেই আজানের জন্ম হয়। গত বৃহস্পতিবার সকালে গাড়ি চালাতে বের হচ্ছিলেন। পরে শুনতে পান, তাঁর ছেলেকে কেউ চুরি করে নিয়ে গেছে।