তরিকুলের একার পক্ষে লামিয়ার লাশ পুঁতে রাখা সম্ভব না, দাবি পরিবারের

গত বৃহস্পতিবার ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে লামিয়ার স্বামী তরিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই
ছবি: প্রথম আলো

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার চিথলিয়া গ্রামের কলেজছাত্রী লামিয়া আক্তারকে (১৮) শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ বালুর মধ্যে পুঁতে রেখেছিলেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন তাঁর স্বামী তরিকুল ইসলাম (২২)। এর আগে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদেও তরিকুল একই কথা বলেছিলেন। তবে নিহত স্বজনেরা বলছেন, তরিকুলের একার পক্ষে লামিয়াকে হত্যার পর লাশ টেনে নিয়ে বালু খুঁড়ে পুঁতে রাখা সম্ভব নয়। এ ঘটনায় আরও মানুষ জড়িত ছিলেন। মামলার অন্য আসামিদের বাঁচাতে তরিকুল সব দোষ নিজের কাঁধে তুলে নিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন তাঁরা।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার সাদেক খান সড়কের একটি বাড়ি থেকে তরিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। এরপর গতকাল সকালে তারিকুল ইসলাম পিরোজপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু জাফর মো. নোমানের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি নেওয়ার পর বিচারক তরিকুলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

আজ শনিবার সকালে পিরোজপুর শহরের একটি বাড়িতে কথা হয় লামিয়ার মা রাজিয়া বেগমের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। এ সময় লামিয়ার খালা সাবিনা বেগমও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বলেন, লামিয়াকে পরিকল্পিতভাবে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন তরিকুল। এরপর পাশের সাতকাছিমা গ্রামে নিয়ে বালু ভরাট করা একটি জমি খুঁড়ে সেখানে পুঁতে রাখা হয়েছিল। তরিকুলের ভাষ্যমতে, গত বছরের ৬ নভেম্বর দিবাগত রাত ১২টার পর চিথলিয়া গ্রামে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। এরপর রাত ২টার মধ্যেই লাশ টেনে নিয়ে ওই মাঠে পুঁতে রাখা কাজ শেষ করেন তরিকুল। তাঁদের দাবি, লাশ বহন ও মাটিতে লাশ পুঁতের রাখার এত কাজ দুই ঘণ্টার মধ্যে তরিকুলের একার পক্ষে করা সম্ভব ছিল না।

আরও পড়ুন

তবে তরিকুল আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, এসব কাজ তিনি একা করেছেন। তরিকুল বলেছেন, এ ঘটনার চার মাস পর তরিকুল মানসিক পীড়ায় অতিষ্ঠ হয়ে লাশের সন্ধান জানাতে প্রথমে নিজে লাশ তোলার চেষ্টা করেন। পরে ব্যর্থ হয়ে লামিয়ার পরিবারের কাছে বেনামি চিঠি পাঠান।

এ প্রসঙ্গে লামিয়ার খালা সাবিনা বেগম বলেন, কাজটি তরিকুল কারও পরামর্শে করেছেন। কারণ, অপহরণের মামলায় তাঁর পরিবারের কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। তবে সব দোষ নিজের কাঁধে নিয়ে অন্যদের বাঁচানোর জন্য তরিকুল লাশের সন্ধান জানিয়ে বেনামি চিঠি দিয়েছেন বলে ধারণা করছেন তিনি। তরিকুলের মা-বাবার প্ররোচনায় লামিয়াকে হত্যা করা হতে পারে। এ হত্যাকাণ্ডের দায় তরিকুলের মা-বাবা এড়াতে পারেন না। এ ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনার জন্য দাবি জানান তিনি।

লামিয়া আক্তার
ছবি: সংগৃহীত

৬ নভেম্বর রাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সাবিনা বেগম বলেন, ওই রাতে তরিকুল লামিয়াকে মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠান। ওই খুদে বার্তায় তরিকুল লামিয়াকে ঘরে মুঠোফোন রেখে বাইরে বের হতে বলেন। পরের খুদে বার্তায় তরিকুল লেখেন, ‘তুমি বের হয়েছ, টের পেয়েছে কি না?’। এসব বার্তা প্রমাণ করে লামিয়াকে তরিকুল ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ বালুর মধ্যে পুঁতে রাখে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পিরোজপুর কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. বায়েজিদ আকন বলেন, ‘নিহত লামিয়ার পরিবারও আমাদের কাছেও এমন কথা বলেছেন। আমরা তদন্ত করে দেখতেছি এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত আছে কি না।’

আরও পড়ুন

লামিয়া আক্তার চার মাস আগে নিখোঁজ হন। তিনি চিথলিয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের মেয়ে এবং স্থানীয় সরকারি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মহিলা মহাবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। গত রোববার রাতে লামিয়ার ঘরের সামনের সিঁড়িতে একটি বেনামি চিঠি পাওয়া যায়। এর সূত্র ধরে পরদিন মাটি খুঁড়ে একটি কঙ্কাল উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত শেষে কঙ্কালটি লামিয়ার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনায় লামিয়ার খালাশাশুড়ি রেক্সোনা বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আরও পড়ুন