চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭০% শিক্ষার্থীর হলে থাকার সুযোগ নেই

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকছবি: প্রথম আলো

গত দুই যুগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৪টি নতুন বিভাগ খোলা হয়েছে। শিক্ষার্থী বেড়েছে ১৪ হাজারের বেশি। এই সময়ে আবাসিক হল হয়েছে ৫টি। যেখানে থাকার ব্যবস্থা বেড়েছে (আবাসন) ২ হাজার ৬৩২ জনের। ফলে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী হলে থাকার সুযোগ পান না। বাধ্য হয়ে তাঁদের থাকতে হয় ক্যাম্পাসের আশপাশে অথবা ২২ কিলোমিটার দূরের চট্টগ্রাম শহরে।

নতুন বিভাগ খোলা হলে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ করা যায়। নিয়োগে অর্থ লেনদেনের সুযোগ থাকে। শিক্ষক সমিতিতে দল ভারী করা যায়। সমস্যা হলো, ইচ্ছেমতো বিভাগ খোলার ফলে হলগুলোতে আবাসনসংকট বাড়ে। মেসে ও কটেজে থাকতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বাড়তি খরচের চাপে পড়তে হয়। নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা থাকে। সব মিলিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্যাম্পাস-সংলগ্ন জোবরা গ্রামের বাসিন্দাদের দুই দফা সংঘর্ষের পর আবাসনসংকটের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। এই সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয়েছেন দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। কাউকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। কারও মাথা ফেটেছে ইটের আঘাতে। সংঘর্ষের পর আতঙ্কে জোবরা গ্রাম ছেড়েছেন হাজারো শিক্ষার্থী। অনেক শিক্ষার্থীকে মাত্র দুই মিনিট সময় দিয়ে বাসা ছাড়তে বাধ্য করেছেন স্থানীয় লোকজন।

আরও পড়ুন
আবাসনসংকট রাতারাতি দূর করা সম্ভব নয়। আমার হাতে ১০টা আলাদিনের চেরাগ এনে দিলেও এ সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান আমি করতে পারব না।
মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার, উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

সংঘর্ষের পর গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট, ছাত্রদল, ও ছাত্রশিবির বিক্ষোভ সমাবেশ করে আবাসিক হল বাড়ানোর দাবি তুলেছে। এরপর ২ সেপ্টেম্বর রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভা করে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ১০টি হল নির্মাণ করার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাবে। এর মধ্যে ছাত্রীদের হল থাকবে ৫টি। প্রতিটি হল হবে ১০ তলা।

তবে শিক্ষকেরা বলছেন, একসঙ্গে ১০টি হল নির্মাণ করার প্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয়। তাড়াহুড়ো না করে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে হলের সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে।

উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার সম্প্রতি তাঁর কার্যালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবাসনসংকট রাতারাতি দূর করা সম্ভব নয়। আমার হাতে ১০টা আলাদিনের চেরাগ এনে দিলেও এ সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান আমি করতে পারব না।’

বছর–বছর নতুন বিভাগ খুলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী বাড়ানোর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেবর বেড়েছে। তবে লেখাপড়া ও গবেষণার গুণগত মানের উন্নতি হয়েছে, এমন কথা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না সাবেক ও বর্তমান শিক্ষকেরা। তাঁরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি খবরের শিরোনাম হচ্ছে সংঘর্ষ, খুনোখুনি, শিক্ষার্থীকে নির্যাতন, নিয়োগ দুর্নীতির মতো নেতিবাচক কারণে।

আরও পড়ুন

২৪ বছরে ২৪ বিভাগ

১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর ৪টি বিভাগে ২০০ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। শুরুতে শিক্ষক ছিলেন ৭ জন। এরপর নিয়মিত বিরতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বিভাগ খোলা হয়। তবে বিভাগ খোলা, শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষার্থী ভর্তি বাড়ানো হয়েছে মূলত ২০০০ সালের পর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৯৭-৯৮ সালের বার্ষিক বিবরণী অনুযায়ী, ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি অনুষদে বিভাগের সংখ্যা ছিল ২৮। এখন বেড়ে হয়েছে ৪৮টি। অনুষদ বেড়ে হয়েছে ৯টি। ৩টি ইনস্টিটিউট বেড়ে হয়েছে ৬টি। শিক্ষকের সংখ্যা ৫২০ থেকে পৌঁছেছে ৯৯৬-এ।

নথিপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত ২৫ বছরে নতুন বিভাগ ও ইনস্টিটিউট খোলা হয়েছে ২৪টি। ২০০০ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত চালু হয়েছে ৮টি বিভাগ। বিগত আওয়ামী লীগ আমলে (২০০৯-২০১৮) চালু হয় ১৬টি বিভাগ। এসব বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অন্তত ৫০০ শিক্ষক, যা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুন
বর্তমানে ১৪টি হলে আসনসংখ্যা ৬ হাজার ৩৬৯। গাদাগাদি করে কোনো কোনো বিছানায় দুই শিক্ষার্থীও থাকেন। সব মিলিয়ে হলে থাকার সুযোগ পান প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থী। বাকি ১৯ হাজার ৫১৫ শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা নেই। এভাবে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীকেই থাকতে হয় হলের বাইরে।

শিক্ষার্থী বাড়ল ১৪ হাজার

২০০০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিলেন ১৪ হাজার। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮ হাজার ৫১৫। অর্থাৎ দুই যুগে শিক্ষার্থী বেড়েছে ১৪ হাজার।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ক্যাম্পাসে আবাসিক হল ছিল ৯টি। এসব হলে আসনসংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৭৩৭। ২০০০ সালের পর আরও ৫টি হল নির্মাণের ফলে আসনসংখ্যা বাড়ে ২ হাজার ৬৩২। বর্তমানে ১৪টি হলে আসনসংখ্যা ৬ হাজার ৩৬৯। গাদাগাদি করে কোনো কোনো বিছানায় দুই শিক্ষার্থীও থাকেন। সব মিলিয়ে হলে থাকার সুযোগ পান প্রায় ৯ হাজার শিক্ষার্থী। বাকি ১৯ হাজার ৫১৫ শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা নেই। এভাবে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীকেই থাকতে হয় হলের বাইরে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, আবাসন-সুবিধা সীমিত হওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে ক্যাম্পাসের আশপাশের কটেজে ও মেসে থাকতে হয় প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীকে। কটেজের ভাড়া ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা। আর মেসের ভাড়া পড়ে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা। ক্যাম্পাসের পাশের এসব কটেজ মেসে থাকতে শিক্ষার্থীদের সব মিলিয়ে খরচ হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।

আবার শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ চট্টগ্রাম শহরে ভাড়া বাসায় থাকেন। তাঁদের খরচ ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে যাতায়াত, খাবার ও থাকার খরচ অন্তর্ভুক্ত।

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী সাদমান সাদাত ক্যাম্পাসের পাশেই একটা মেসে থাকেন। মেসভাড়া দিতে হয় ৪ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে মাসে তাঁর খরচ হয় ১০-১২ হাজার টাকা। সাদমান প্রথম আলোকে বলেন, হলে আসন পাওয়া গেলে মেসভাড়ার ৪ হাজার টাকা বেঁচে যেত। খাওয়ার খরচও কমত।

আরও পড়ুন
জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা মনে করছেন, একের পর এক বিভাগ খুলে শিক্ষার্থী ভর্তির নেপথ্যে রয়েছে শিক্ষক রাজনীতি।

৭৮ শতাংশ ছাত্রীর আবাসন নেই

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর সংখ্যা ১১ হাজার ৬০৪। ছাত্রী হলের সংখ্যা ৫। সব মিলিয়ে আবাসন রয়েছে ২ হাজার ৫৮২ জনের। অর্থাৎ ৭৮ শতাংশ ছাত্রীর জন্য আবাসনের ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নেই। তাঁদের থাকতে হয় মেসে বা কটেজে।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি হলে থাকার সুযোগ পাননি। এ জন্য ক্যাম্পাসের পাশে একটি মেসে ভাড়া থাকেন। সব মিলিয়ে তাঁর মাসে ৮-১০ হাজার টাকা খরচ হয়। সংঘর্ষের পর থেকে নিরাপত্তা নিয়ে তিনি চিন্তিত।

মূলত ভোটার বাড়াতে বা দল ভারী করতে একের পর এক বিভাগ খোলা হয়েছে। নিয়োগ দেওয়া হয়েছে শতাধিক শিক্ষক। এমনকি একটি বিভাগে অসাধারণ ফল করা প্রার্থীকে বাদ দিয়ে চতুর্থ হওয়া শিক্ষার্থীকে নেওয়া হয়েছে।
মোহাম্মদ আল আমিন, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি

নেপথ্যে শিক্ষক রাজনীতি

জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা মনে করছেন, একের পর এক বিভাগ খুলে শিক্ষার্থী ভর্তির নেপথ্যে রয়েছে শিক্ষক রাজনীতি। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক রাজনীতিতে হলুদ দল একটি পক্ষ, যার অনুসারী আওয়ামী লীগ ও বামপন্থী শিক্ষকেরা। জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম বিএনপি–সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন। সাদা দলের সমর্থন করেন বিএনপির একাংশ ও জামায়াত–সমর্থক শিক্ষকেরা।

এক যুগ আগেও শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে প্রতিযোগিতা হতো। কোনো পক্ষই একতরফাভাবে জয় পেত না। যেমন ২০১০ সালে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল। এর পর থেকে হলুদ প্যানেল একতরফাভাবে জয়ী হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ৩০ এপ্রিল। ওই নির্বাচনে হলুদ প্যানেলের শিক্ষকেরাই জয়ী হন।

জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি মোহাম্মদ আল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, মূলত ভোটার বাড়াতে বা দল ভারী করতে একের পর এক বিভাগ খোলা হয়েছে। নিয়োগ দেওয়া হয়েছে শতাধিক শিক্ষক। এমনকি একটি বিভাগে অসাধারণ ফল করা প্রার্থীকে বাদ দিয়ে চতুর্থ হওয়া শিক্ষার্থীকে নেওয়া হয়েছে।

হলুদ দলের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে প্রথম আলোকে বলেন, গত ১৫ বছরে যোগ্য প্রার্থীদেরই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সে সময় নিয়োগ পাওয়া অনেক শিক্ষক এখন বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছেন।

আরও পড়ুন
সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করে নিয়মিত বিরতিতে বিভাগ খোলা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে বিপদে ফেলার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আর নতুন বিভাগ খুলে শেষ পর্যন্ত তা নিয়োগ-বাণিজ্যে রূপ দেওয়া হয়। এটা দুর্ভাগ্যজনক।
মু. সিকান্দার খান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক

নিয়োগে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় একাধিকবার আলোচনায় এসেছে। বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই নিয়োগ হয়েছে আওয়ামী লীগ আমলে। পদের অতিরিক্ত নিয়োগও দেওয়া হয়েছে। সাবেক উপাচার্য শিরীণ আখতার দায়িত্ব পালনকালে কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে নিয়োগ–বাণিজ্যের ফোনালাপ ফাঁস হয়েছিল।

বর্তমান প্রশাসনের বিরুদ্ধেও নিয়োগে দলীয়করণের অভিযোগ তুলেছেন বিএনপিপন্থী শিক্ষকেরা। চলতি বছরের ২৩ জুলাই উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহ্‌ইয়া আখতারের কাছে চিঠি দেয় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম। এতে বলা হয়, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে অস্বচ্ছতা, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণ হচ্ছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ছয় মাসে বিজ্ঞাপিত পদের সংখ্যা তিন শতাধিক। গ্রীষ্ম-বর্ষা, রাত-দিন, বন্ধ-খোলা উপেক্ষা করে দ্রুতগতিতে পক্ষপাতদুষ্ট নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে নিয়োগ চলছে। নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সুবিধার্থে নিয়োগ দেওয়ায় কমিটির নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

আরও পড়ুন

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার সম্প্রতি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিয়োগে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা রেখেছেন। লিখিত পরীক্ষা চালু করেছেন। এখন টর্চ জ্বালিয়েও অনিয়ম খুঁজে পাওয়া যাবে না।

একের পর এক বিভাগ খুলে শিক্ষার্থীদের বিপদে ফেলা হয়েছে বলে মনে করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মু. সিকান্দার খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করে নিয়মিত বিরতিতে বিভাগ খোলা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের ডেকে এনে বিপদে ফেলার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আর নতুন বিভাগ খুলে শেষ পর্যন্ত তা নিয়োগ-বাণিজ্যে রূপ দেওয়া হয়। এটা দুর্ভাগ্যজনক।

আরও পড়ুন